ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

উরুগুয়ের জন্য গ্রিজম্যানের সম্মান

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ৮ জুলাই ২০১৮

উরুগুয়ের জন্য গ্রিজম্যানের সম্মান

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম কোয়ার্টারে উরুগুয়েকে হারিয়ে সবার আগে সেমিফাইনালে উঠে গেছে ফ্রান্স। ২-০ ব্যবধানে জয়ের পথে প্রথম গোলে প্রত্যক্ষ অবদান রাখা এ্যান্টনি গ্রিজম্যান দ্বিতীয় গোলটা করেছেন নিজেই। বলতে গেলে ফরাসী তারকা ফরোয়ার্ড একাই প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়েছেন। নিরঙ্কুশ পার্থক্য গড়ে দেয়া দুর্দান্ত পারফর্মেন্স সত্ত্বে¡ও সেভাবে উল্লাস করতে দেখা যায়নি তাকে। কিন্তু কেন? উরুগুয়েকে নিজের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে উল্লেখ করে সম্মান আর ভালবাসা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন গ্রিজম্যান। আর দলের নৈপুণ্যে খুশি ফরাসী কোচ দিদিয়ের দেশম বলেছেন, শিরোপার পথে প্রতিটি ম্যাচই এখন ফাইনাল। উরুগুয়ে বস্ অস্কার তবারেজও প্রতিপক্ষকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। সেন্ট পিটার্সবার্গে মঙ্গলবার প্রথম সেমিফাইনালে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ ফর্মের তুঙ্গে থাকা সোনালি প্রজন্মের বেলজিয়াম। ‘আমি ক্যারিয়ারটা শুরু করেছিলাম উরুগুয়ে কোচের অধীনে। সে আমাকে ফুটবলের ভালো ও মন্দ শিখিয়েছে। উরুগুয়ের প্রতি আমার সম্মানবোধ প্রবল। তাই গোল করে সেলিব্রেশন করতে পারিনি।’ বলেন কোয়ার্টারে ফরাসীদের জয়ের নায়ক গ্রিজম্যান। তিনি আরও যোগ করেন, ‘অবশ্য আমি আমার বন্ধুদের বিপক্ষেই খেলছিলাম। তাই মনে করেছি উদযাপন না করাটাই স্বাভাবিক।’ শুক্রবার নিঝনি নভগরদ স্টেডিয়ামে শেষ আটের লড়াইয়ের ৬১ মিনিটে গ্রিজম্যানের দূরপাল্লার শট ঠিকমতো সামলাতে পারেননি উরুগুয়ে গোলরক্ষক মুসলেরা। তার শিশুতোষ ভুলে বল গোল লাইন টপকে জালে প্রবেশ করে। গ্রিজম্যানকে গোল উপহার দেয়ার পাশাপাশি যেন বিশ্বকাপে ফরাসীদের এগিয়ে যাওয়ার রাস্তাটা আরও পরিষ্কার করে দিলেন উরুগুয়ের এই অভিজ্ঞ গোলরক্ষক। কিন্তু গোলের পর কোন উচ্ছ্বাস না করে অনেকটা নীরবেই উদ্যাপন করেন গ্রিজম্যান। সতীর্থরা তার দিকে উদ্যাপনের জন্য ছুটে এলে শুধু তোলিসোর কপালে মাথা ঠেকান ম্যাচের সেরা এজি-৭। আগে থেকেই নিজেকে ‘হাফ উরুগুইয়ান’ দাবি করা গ্রিজম্যানকে নিয়ে আলোচনা চলছিল। সেটি আরও বাড়িয়ে দেয় গোলের পর তার ওই নীরব ভূমিকা। আর ম্যাচের পর উরুগুয়ের প্রতি ভালবাসা ও সম্মানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন ফরাসী সুপারস্টার। উরুগুয়ে কোচ অস্কার তবারেজ বলেন, ‘ফ্রান্স ভাল খেলেই ম্যাচ জিতেছে। এটা তাদের প্রাপ্য। আমরা মোটেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি।’ হেরেও গর্বিত উরুগুয়ে অধিনায়ক ডিয়েগো গোডিন বলেন, ‘বিদায় নেয়ার জন্য আমি দুঃখিত। অবশ্যই এটা হতাশার। কিন্তু আমি সকল উরুগুইয়ান এবং আমার সতীর্থদের ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা সিংহের মতো লড়াই করেছে। আমরা হয়তো আজকে পারিনি কিন্তু আমরা আমাদের মাথা উঁচু রেখেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিচ্ছি। এটাই ফুটবল, এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে।’ অন্যদিকে শিষ্যদের পারফর্মেন্সে খুশি হলেও আত্মতুষ্টিতে ভুগতে চান না ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য শিরোপা জয় করা। এজন্য আমাদের তিনটি ম্যাচে উতরে যেতে হবে। তাই ঐ তিনটি ম্যাচই আমাদের কাছে ফাইনাল। কোনটিই আমাদের কাছে কোয়ার্টার ফাইনাল বা সেমিফাইনাল নয়।’ সি- গ্রুপের সেরা হয়েই বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে ওঠে ফ্রান্স। সেখানে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৪-৩ গোলে জয় তুলে নেয় তারা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে আসে। সেখানে উরুগুয়েকে উড়িয়ে দিয়ে ফরাসীরা এখন সেমিতে। দেশম বলেন ‘আমি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা এখনই ভাবছি না। আমাদের সামনের সব ম্যাচই ফাইনাল। যারা সামনে পড়বে সবাইকেই হারাতে চাই।’ সেমির প্রতিপক্ষ বেলজিয়ামকে নিয়ে দেশমের মূল্যায়ন,‘দলটা চমৎকার। আক্রমণাত্মক ও পরিকল্পনামাফিক ফুটবল খেলে তারা। এবারের আসরে সেরা পারফরমেন্সই করছে দলটি। বেলজিয়াম ব্যাপারে আমরা সতর্ক। আমরা মাঠে নেমে সেরাটাই দেয়ার চেষ্টা করব। যাতে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়।’ সাফল্য পেতে শিষ্যদের ওপর আস্থাশীল তিনি,‘আমাদের দল ভাল ফর্মে রয়েছে। প্রতিটি ম্যাচেই আমরা ভাল খেলেছি। আমাদের স্ট্রাইকার ও এ্যাটাকিং মিডফিল্ডাররা গোল পাচ্ছে। তবে আমাদের আরও ভাল পারফর্মেন্স করতে হবে। কারণ সামনের দুটি ম্যাচকেই ফাইনাল ভাবছি। আমরা জানি শিরোপা জিততে হলে সবাইকে একসঙ্গে জ্বলে উঠতে হবে।’ ফ্রান্সের স্কোয়াডে থাকা ২৩ ফুটবলারই বিশ্বমানের। তাদের মধ্যে আবার কয়েকজন আছেন, যারা যে কোন সময় ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন। কিলিয়ান এমবাপ্পে, উসমানে ডেম্বেলে তো বর্তমান ফুটবল বিশ্বেরই সবচেয়ে সেরা দুই তরুণ খেলোয়াড়। এ ছাড়া আছেন নাবিল ফেকির, পল পগবা, আঁতোয়ান গ্রিজম্যানের মতো অসাধারণ পারফর্মার। রক্ষণে স্যামুয়েল উমতিতিরা। তাদের মধ্যে যে কেউ এক মুহূর্তের জাদুতে ম্যাচের ফলে প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা রাখেন। ২০১৬ ইউরোর ফাইনালে হারের পর থেকেই যেন ফ্রান্স ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছে। এরপর খেলা ২৮ ম্যাচের কেবল ২টিতে হেরেছে নীল সৈন্যরা। খেলছেও দারুণ। বিশ্বকাপ জিততে হলে ফাইনাল পর্যন্ত ৫-৬টি ম্যাচ জিততে হয়। ধারাবাহিকতা রক্ষা এখানে বড় নিয়ামক। নিজেদের এই দিকটি ধরে রাখতে পারলে ফরাসীদের সামনে এবার দারুণ সুযোগ।
×