ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাবেক নাইজিরিয়ান কোচ আফুসির বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেবে ক্লাব

শেখ জামাল ধানমন্ডির কোচ হয়ে রোমাঞ্চিত রক্সি

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ১৭ নভেম্বর ২০১৭

শেখ জামাল ধানমন্ডির কোচ হয়ে রোমাঞ্চিত রক্সি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কোচের চাকরি সবসময়ই হচ্ছে ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। আর এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত মাহবুব হোসেন রক্সি। বাংলাদেশ জাতীয় যুব দলের এই সফল কোচ আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ফুটবল ক্লাব শেখ জামাল ধানম-িতে। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব প্রাঙ্গণে। এতে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের সাবেক সভাপতি, বর্তমানে ক্লাবটির গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান, ক্রীড়া সংগঠক মনজুর কাদের, ক্লাবের নতুন কোচ রক্সিসহ অন্যরা। সংবাদ সম্মেলনে রক্সিকে শেখ জামালের নতুন কোচ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। মনজুর কাদের বলেন, ‘শুধু কোচ কেন, আমিও চলে গেলে তো শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব থাকবে। ক্লাব চলবে। তাই আমরা নতুন কোচ হিসেবে রক্সিকে নিয়েছি। তার অধীনে অনুর্ধ-১৯ দলের পারফর্মেন্স আমার ভাল লেগেছে। এই দলের ভবিষ্যত আছে। কোচ হিসেবে রক্সি দলটিকে ভালভাবে গাইড করেছে, স্পিরিট যোগ করেছে। বাফুফের ছাড়পত্র পেয়েছে, আজ থেকেই তিনি কাজ শুরু করবেন।’ সাবেক কোচ আফুসি প্রসঙ্গে কাদেরের ভাষ্য, ‘কোন কোচ এভাবে রাতের আঁধারে পালিয়ে যাবে এটা তো হতে পারে না। এএফসির টুর্নামেন্টে তাকে কোচ রাখার কারণে তাকে জরিমানা করা হয়েছিল। কারণ তার লাইসেন্স ছিল দু’নম্বরি, সেই জরিমানার টাকা আমরা দিয়েছি। তিনি যে এমন আচরণ করবেন সেটা আমরা ভাবতেও পারিনি।’ কিন্তু আফুসি তো সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি পালিয়ে যাননি। বরং যাওয়ার ব্যাপারটা ক্লাব কর্তৃপক্ষকে ই-মেইলে জানিয়েই গিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘এটা তো কোন নিয়ম হতে পারে না। একটা লীগ চলাকালীন সময়ে ক্লাবের সঙ্গে কথা বলেই পদত্যাগ করে তিনি চলে যেতে পারতেন। আসলে অন্য কোথাও তার চাকরি হয়েছে বলে তিনি শেখ জামাল ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। ৪০ হাজার পাউন্ড আফুসিকে অগ্রিম দেয়া হয়েছিল। তার বেতন থেকে মাসে মাসে সাড়ে ৩ হাজার ডলার করে কেটে রাখা হতো, সেভাবে ৭ মাস কাজ করেছেন। স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে জিডি করা হয়েছে। এসব ব্যাপার আমরা বাফুফে ও ফিফাকে জানাবো। তার বিরুদ্ধে আইনী পথে যাব।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘শুধু সিল-ছাপ্পড় থাকলে ভাল খেলোয়াড় হয় না। খেলোয়াড় তৈরির কোন পাইপলাইন তো নেই এদেশে। আমার দলের তরুণ খেলোয়াড়রা খেলছে, তারাই হবে ভবিষ্যতের তারকা।’ গত কয়েক বছর ধরেই ক্লাবের মাঠের মালিকানা নিয়ে আইনী সমস্যা মোকাবেলা করে যাচ্ছে শেখ জামাল। এ নিয়ে কাদেরের ভাষ্য, ‘পরিবেশবাদীরা আমাদের ক্লাবের মাঠ নিয়ে মামলা করেছে। এটা বিচারাধীন বিষয়। তাই অবকাঠামো সংস্কার করতে পারছি না। আমার পরিকল্পনা আছে, খেলোয়াড়দের জন্য একটা ডরমেটরি তৈরি করে একটা বয়সভিত্তিক দল রাখব। নতুন খেলোয়াড় তোলারও কাজ করব। এজন্য বাফুফেরও একটা নীতিমালা থাকা দরকার, আমি একবার কমলাপুর স্টেডিয়ামে এ রকম একটা দল রেখে ট্রেনিং করিয়েছিলাম। দেখেছি, বাফুফের কয়েকজন কর্মকর্তাই আমার খেলোয়াড়দের নিয়ে টানাটানি করছে!’ রক্সি বলেন, ‘এএফসি-এ লাইসেন্সধারী কোচ আমি। ১২ বছর কাজ করছি কোচ হিসেবে। অনেকদিন পর দুটো এ্যাসাইনমেন্টে ভাল কাজ করেছি অনুর্ধ-১৯ দল নিয়ে। এজন্য বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন ভাইকে ধন্যবাদ, তিনি আমার ওপর ভরসা রেখেছেন। সেই পারফর্মেন্সের কারণে কাদের ভাই আমাকে নতুন চ্যালেঞ্জ তুলে দিয়েছেন হাতে। আমি রোমাঞ্চিত। ক্লাব ফুটবল ভিন্ন জায়গা, এখানে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে, সময় পাওয়া যায়।’ নাইজিরিয়ান জোসেফ আফুসি চলে যাওয়ার একদিনের মধ্যেই নতুন কোচ হিসেবে রক্সিকে নিয়োগ দেয় শেখ জামাল ধানম-ি। বাফুফের বেতনভুক্ত কোচ হওয়ায় আপাতত স্বল্প সময়ের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাকে। বাফুফের কাছ থেকে ইতোমধ্যেই গ্রিন সিগনাল (অনাপত্তিপত্র) পেয়ে গেছেন রক্সি। ফলে বৃহস্পতিবারই দলকে নিয়ে কাজে নেমে পড়েছেন তিনি। এদিকে কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ চলে যাওয়া আফুসির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব। হঠাৎ করেই কাউকে কিছু না জানিয়ে শেখ জামালের হেড কোচের দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান আফুসি। শেখ জামালের সোনালী দিনের রূপকার তিনি। এক সময় ধানম-ির জায়ান্টদের হয়ে খেলেছেনও। পরে ক্লাবের কোচ হিসেবে দলকে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক দুই বিভাগেই সাফল্য উপহার দিয়েছেন (২০১২-১৩ মৌসুমে ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ ও পেশাদার লীগে রানার্সআপ, ২০১৩-১৪ মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন, ২০১৪-১৫ মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন, ২০১৪ সালে ভারতের আইএফএ শিল্ডে রানার্সআপ) কিন্তু স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারার অভিযোগ এনে দায়িত্ব ছেড়ে ইংল্যান্ডে চলে যান তিনি। তার এমন অপেশাদার আচরণে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। আফুসির বিদায়ের একদিনের মধ্যেই রক্সিকে নতুন কোচ হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে অভিজাত পাড়ার দলটি। শেখ জামাল ক্লাবের চেয়ারম্যান মনজুর কাদের বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমাদের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও চান খুব তাড়াতাড়ি নতুন কোচের ব্যবস্থা হোক। আমরা যেমন কোচ চাই রক্সি তেমনই। তাই আমরা তাকেই বেছে নিয়েছি।’ মধ্যবর্তী দলবদল শেষ হয়ে গেছে। তবে দলের বেশিরভাগ ফুটবলারকেই আগে থেকে চেনেন রক্সি। তাই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে সাফল্য পাওয়াটা তাই খুব একটা কঠিন হবে না বলেই মনে করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে নিপু-রাকিবদের অনেক আগে থেকেই কোচিং করিয়েছি। গোছানো টিমকে এখন মডিফাই করে আমার ধারায় নিয়ে আসাই আমার উদ্দেশ্য।’ আরামবাগের হয়ে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু রক্সির। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত টানা ৯ বছর খেলেছেন মোহামেডানে। ২০০৩ বাড্ডা জাগরণী দিয়ে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু। ২০০৪ সালে বাড্ডাকে চ্যাম্পিয়ন করিয়ে প্রথম বিভাগে তোলেন। জাতীয় দলেও বেশ কয়েকবার সহকারী কোচের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে তার। সর্বশেষ কোচ ছিলেন গত মৌসুমে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবল লীগে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের। তবে ইতিহাস বলে জামালের আগের কোচদের বিদায়ও সুখকর হয়নি। সার্বিয়ান জোরান ক্রালিয়েভিচ দলের প্রথম কোচ ছিলেন। এরপর শ্রীলঙ্কার পাকির আলীর পর স্থানীয় কোচ সাইফুল বারী টিটু ও মোহাম্মদ ইউসুফ দায়িত্ব পালন করেন। মারুফুল হকও স্বস্তিতে ছিলেন না। খন্দকার ওয়াসিম ইকবাল ছিলেন খন্ড-কালীন কোচ। শেষেরজন ছাড়া কারুরই বিদায় সুখকর হয়নি। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত জামালে রক্সি-অধ্যায়টা কেমন হয়।
×