ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার বিদায় নিল তামিমের দল

সামি ঝড়ে বিধ্বস্ত চিটাগাং ভাইকিংস

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৭ ডিসেম্বর ২০১৬

সামি ঝড়ে বিধ্বস্ত চিটাগাং ভাইকিংস

মিথুন আশরাফ ॥ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার সেলফি আর ড্যারেন সামি যেন একাকার হয়ে গেল। চিটাগাং ভাইকিংসের কোন ব্যাটসম্যান আউট হতেই সামির নেতৃত্বে রাজশাহীর সব ক্রিকেটার সেলফি তুলতে থাকেন। মুঠোফোন নয়, হাত দিয়ে সেলফি তোলার ভঙ্গি করে তুলেছেন। আর ব্যাট হাতে সামি একের পর এক ছক্কা-চার হাঁকাতে থাকেন। কিভাবে ম্যাচ জেতাতে হয়, তা দেখাতে থাকেন। চিটাগাং ক্রিকেটারদের মুখের হাসি কেড়ে নিতে থাকেন। এলিমিনেটর ম্যাচে চিটাগাংকে ৩ উইকেটে হারিয়েও দিলেন সামি। তার অপরাজিত ৫৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংসেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) চতুর্থ আসর থেকে বিদায় ঘটল চিটাগাংয়ের। চিটাগাংকে আসলে বিদায় করে দিলেন সামিই। ম্যাচ শেষে সে কি আনন্দ রাজশাহী ক্রিকেটারদের। আবারও সেই সেলফি তোলার ধুম। এবারও হাত দিয়েই সেলফি তোলার ভঙ্গি করলেন রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। ম্যাচে টস জিতে রাজশাহী। কিন্তু ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন রাজশাহীর অধিনায়ক সামি। টার্গেট অতিক্রম করার চিন্তাই সামির মাথায় খেলে। যদি কোনভাবে চিটাগাংকে অল্পতে আটকে রাখা যায়, তাহলেই জিতে ফাইনালে খেলার আশা জিইয়ে রাখা যাবে। তাই হলো। চিটাগাং আগে ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৪২ রানের বেশি করতে পারেনি। তামিম ইকবাল ৫১ ও ক্রিস গেইল ৪৪ রান না করলে আরও অল্পতেই আটকে থাকত চিটাগাং। কেসরিক উইলিয়ামস একাই ৪ উইকেট নেন। চিটাগাং যে রান করেছে, তাতেও হারতে চলেছিল রাজশাহী। কিন্তু ‘গ্রেট এন্টারটেইনার’ খ্যাতি পেয়ে যাওয়া সামি তখনও উইকেটে ছিলেন। শুধু ছিলেনই না ২৭ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৫৫ রানের মারমুখী ইনিংস খেলে ৯ বল বাকি থাকতেই ১৪৩ রান করে রাজশাহীকে জিতিয়ে দেন সামি। এই জয়ের সুবাদে রাজশাহীর ফাইনালে খেলার আশা টিকে রইল। আজ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে জিতলেই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে রাজশাহী। হারলেই বিদায় ঘটবে। চিটাগাংয়ের ছুড়ে দেয়া ১৪৩ রানের টার্গেট অতিক্রম করবে রাজশাহী তা চিটাগাংয়ের ইনিংস শেষ হতেই বোঝা যায়। স্কোরবোর্ডে যে অল্প রানই যোগ করতে পারে চিটাগাং। কিন্তু রাজশাহীর ইনিংস দেখে মনে হচ্ছিল, হারতেও পারে সামির দল। ৫৭ রানেই যে ৬ উইকেটের পতন ঘটে যায়। গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যাটসম্যানের সাজঘরে ফেরায় বিপদেই পড়ে যায় রাজশাহী। হারের শঙ্কাতেই পড়ে যায়। তখন থেকেই যেন সামিও নিজেকে নতুনভাবে চেনান শুরু করে দেন। ৫৫ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরই ব্যাট হাতে নামেন সামি। তখনও জিততে ৫৯ বলে ৮৮ রান দরকার। এমন মুহূর্তে সামির হাল ধরা ছাড়া কোন গতিই যেন ছিল না। ব্যাট হাতে নেমেই নবীর করা ১২তম ওভারে টানা তিন বাউন্ডারি হাঁকান সামি। রান আর বলের মধ্যে ব্যবধানও কমে আসতে থাকে। কিন্তু ৯৪ রানে গিয়ে যখন মেহেদী হাসান মিরাজ আউট হয়ে যান, ৭ উইকেট পড়ায় যেন বিপত্তি ঘাড়ে চেপে বসে। ব্যাট হাতে নামেন ফরহাদ রেজা। সামির হাতে আর কোন অপশনই ছিল না। যা করার তাকেই করতে হত। একটা সময় গিয়ে জিততে ৩০ বলে ৪৩ রানের দরকার থাকে। এমন মুহূর্তে ঝুঁকি নিয়েই বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন সামি। শুভাশীষ রায়ের টানা তিন বলে তিন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দেন সামি। সেখানেই যেন রাজশাহী জয়ের আশায় ফিরে। ১৮ বলে যখন ২০ রানের দরকার, তখন নবীর বলে ছক্কা হাঁকান সামি। ফরহাদ রেজাও দুর্দান্ত সহযোগিতা করে যান। সামির বাউন্ডারি মারা থেকে উজ্জীবিত হয়ে তিনিও বাউন্ডারি হাঁকানো শুরু করে দেন। নবীর করা ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দেন রেজা। তাতে ১২ বলে জিততে ৭ রানের দরকার লাগে। তাসকিন আহমেদের করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলে এক রান নিয়ে রেজাকে স্ট্রাইকে আনেন সামি। দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে একেবারে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান রেজা। তৃতীয় বলে ২ রান নিয়ে জয়ই এনে দেন। অষ্টম উইকেটে সামি ও রেজা মিলে ৪৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েই দলকে জিতিয়ে দেন। দু’জনই অপরাজিত থাকেন। সামি ৫৫ ও রেজা ১৯ রান করেন। শুরুতেই বিপত্তির মধ্যে পড়ে চিটাগাং। চিটাগাংয়ের সঙ্গে যোগ দেয়ার পর থেকেই তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামেন ক্রিস গেইল। কিন্তু এলিমিনেটর ম্যাচে এসে তামিমের সঙ্গী হননি। ডোয়াইন স্মিথকে সঙ্গে নিয়ে শুরুতেই যেন চমক দিতে চান তামিম। কিন্তু পারেননি। মুহূর্তেই স্মিথ সাজঘরে ফেরেন। শুরু হয়ে যায় রাজশাহী ক্রিকেটারদের সেলফি তোলার ধুম। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেট যে আর পড়তেই চায় না। তামিম-গেইল মিলে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন। যে আফিফ হোসেন ধ্রুব গত ম্যাচে ৫ উইকেট তুলে নেন, তিনি এবার মুদ্রার উল্টো পিঠও দেখেন। গেইলের ছক্কার শিকার হন। ইংল্যান্ডকে টেস্টে কাঁপিয়ে দেয়া মেহেদী হাসান মিরাজও বাদ যাননি। মিরাজের এক ওভারে ২ ছক্কা হাঁকান গেইল। আর তামিমও সুযোগ পেলেই বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। দেখতে দেখতে ১০ ওভারে ৭৫ রান করে ফেলে চিটাগাং। মনে হয় আজ বুঝি চিটাগাংয়েরই দিন। ২০০ রান হয়ে যাবে না তো আবার? এমন প্রশ্নও ওঠে। তামিম-গেইল দুই মারমুখী ব্যাটসম্যান যে তখনও উইকেটে। কিন্তু কে জানত, কিছুক্ষণ পরই বিপদ আসন্ন। ৮২ রান হতেই যেন বিপদ শুরু। ৩০ বলে ২ চার ও ৫ ছক্কায় ৪৪ রান করে ফেলেন গেইল। মনে করা হচ্ছিল, গেইল বুঝি আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবেন। কিন্তু দলের ৮৮ রানের সময় আউট হয়ে যান। তখন থেকেই চিটাগাংয়ের রানের চাকা দুর্বল হয়ে পড়ে। গেইল-তামিম মিলে ৭৪ রানের জুটি গড়েন। এরপরতো অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার কথা চিটাগাংয়ের। তৃতীয় উইকেটেও শোয়েব মালিককে সঙ্গে নিয়ে ৩০ রানের জুটি গড়েন তামিম। দলের স্কোরও ১০০ রান অতিক্রম করে ফেলে। কিন্তু যেই ১১২ রানে ১৪ রান করে মালিক সাজঘরে ফেরেন, চিটাগাংয়ের ব্যাটিং ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। ৫ রান যোগ হতেই বরাবরের মতোই ব্যাটিং নৈপুণ্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা তামিম (৫১) আউট হয়ে যান। এরপর এক এক করে ১৩২ রানে ৮ উইকেটের পতন ঘটে যায়। আর কোন বড় জুটিও মিলেনি। শেষ পর্যন্ত ১৪২ রান করতে পারে চিটাগাং। শুরুতে তামিম-গেইল মিলে যেভাবে খেলছিলেন, মনে হয়েছিল রাজশাহীকে ধুমড়ে মুছড়ে দেবেন। রাজশাহী পাত্তাই পাবে না। কিন্তু সামি কি দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেন। রাজশাহী জিতেই গেল। চিটাগাংকে বিদায় করে দিলেন সামি।
×