ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাটিংয়ে তামিম বোলিংয়ে মিরাজ সেরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১ নভেম্বর ২০১৬

ব্যাটিংয়ে তামিম বোলিংয়ে মিরাজ সেরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দারুণ একটা সিরিজ শেষ করেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে ও টি২০ নিয়ে যতটা না দুশ্চিন্তা, তারচেয়ে বেশি চিন্তার কারণ ছিল টেস্ট সিরিজ নিয়ে। কারণ ওয়ানডে কিংবা টি২০ ক্রিকেটে দেশের ক্রিকেট অনেক এগিয়ে গেলেও টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতিটা একেবারেই কম। টেস্ট বেশি না খেলা শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দীর্ঘ ১৪ মাসেরও বেশি বিরতির পর খেলতে নামা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। উল্টো মাঠের নৈপুণ্যে কাগজে-কলমে শক্তিমত্তায় অনেক এগিয়ে থাকা ইংল্যান্ড টেস্ট দলের চেয়ে উদ্ভাসিত ছিল টাইগাররা। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে অবশ্য ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল অগ্নিপরীক্ষা। এরপরও রান করার দিক থেকে শীর্ষে বাংলাদেশী ওপেনার তামিম ইকবাল। বিশেষ করে স্পিনারদের দাপট ছিল দুই ম্যাচেই। সে নৈপুণ্যে এ সিরিজে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া তরুণ ডানহাতি অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজই এগিয়ে ১৯ উইকেট শিকার করে। আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ এবং ইংলিশদের বিপক্ষে দুই টেস্ট খেলার পর আপাতত আবার দেড় মাস কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ব্যস্ততা নেই বাংলাদেশের। তবে ক্রিকেটাররা প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে থাকতে পারছেন না। আগামী শুক্রবারই শুরু হবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি২০ আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)। জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা খেলবেন বিভিন্ন দলে। তবে মুশফিকুর রহীমরা সোমবার টিম হোটেল ছেড়ে দিয়েছেন। মিরাজসহ অনেকেই দুয়েকদিনের জন্য গেছেন নিজ পরিবারের কাছে। বিপিএল শুরুর আগেই আবার নিজ নিজ দলের সঙ্গে যোগ দেবেন সবাই। মিরপুরে অনুষ্ঠিত সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে মাত্র তিনদিনেই শক্তিশালী ইংল্যান্ডের অহমিকা চূর্ণ করা এক জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটে এমন জয় আর দেখেনি বাংলাদেশ ১৬ বছরে। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির পর জিম্বাবুইয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের (২০০৯ সালে দ্বিতীয় সারির দল) বিপক্ষে জিততে পেরেছে দল। কিন্তু বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ের চার নম্বরে থাকা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এমন জয় ছিল কল্পনাতীত। অবিশ্বাস্য ও অবিস্মরণীয় এ জয়ে নতুন এক ইতিহাস রচিত হয়েছে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে। সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করেছে বাংলাদেশ। এমন জয়ের পেছনে ছিল ক্রিকেটারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তবে সেই প্রচেষ্টায় সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন তরুণ অফস্পিনার মিরাজ। মাত্র ১৯ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার আগে কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেললেও টেস্ট ক্রিকেটে পরম পরাশক্তি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেলেন। আর সেটা কাজে লাগিয়ে চমকে দিলেন পুরো বিশ্বকে। দেশের সর্বকণিষ্ঠ বোলার হিসেবে অভিষেকে ৫ বা তার বেশি উইকেট শিকার করার নজির স্থাপন করলেন। ৮০ রানে ৬ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৮ রানে ১ উইকেট নিয়ে প্রথম টেস্ট শেষ করলেন। তবে নিজের ঘূর্ণি বলের ভয়াবহতা দেখালেন দ্বিতীয় টেস্টে ৮২ রানে ৬ ও ৭৭ রানে ৬ উইকেট শিকার করে। ১৩৯ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ষষ্ঠ বোলার হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টে তিনবার ৫ উইকেট নেয়ার নজির দেখালেন। আর প্রথম অফস্পিনার হিসেবে এমন নৈপুণ্য দেখিয়ে গড়লেন বিশ্বরেকর্ড। সিরিজে ১৯ উইকেট এর আগে কোন বাংলাদেশী বোলারই পাননি। দুই টেস্টের সিরিজে ১৮৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার পেসার জন জেমস ফেরিস ১৮ উইকেট নিয়েছিলেন। এত রেকর্ড গড়ার জন্যই বাকি সবাই ম্লান হয়ে গেছে। সিরিজের পারফর্মেন্স টেবিলে ১২ উইকেট নিয়ে সাকিব আল হাসান দুইয়ে, ১১ উইকেট নিয়ে বেন স্টোকস তিনে। বোলারদের এমন বিভীষিকাময় বোলিংয়ের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। সেই পরীক্ষায় এক নম্বরে দারুণ ফর্মে থাকা বাংলাদেশী ওপেনার তামিম ২৩১ রান করে। ইমরুল কায়েস ১৪৩ রান করে দুইয়ে এবং ইংল্যান্ডের স্টোকস ১২৮ রান করে তিনে।
×