ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রিও অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতলেই কোটিপতি

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১৯ জুলাই ২০১৬

রিও অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতলেই কোটিপতি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ স্বর্ণ পদক জিতলেই কোটিপতি। বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে এবারই প্রথম এত মোটা অঙ্কের অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা। আসন্ন রিও অলিম্পিক সামনে রেখে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের ক্রীড়াবীদদের উৎসাতি করতেই এই ঘোষণা। যদিও অলিম্পিকে পদক জয়ের নজির নেই বাংলাদেশের কোন ক্রীড়াবীদের। কেবল অংশগ্রহণটাই মূলমন্ত্র এই লক্ষ্য সামনে রেখে অতীতে অলিম্পক গেমসে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এবার একটু ব্যতিক্রম। ৫ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিতব্য গেমসে একটা লক্ষ্য নিয়ে খেলতে যাচ্ছেন খেলোয়াড়রা। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন, কৃতী গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও শূটার আবদুল্লাহ হেল বাকী। অন্য ইভেন্ট নিয়ে উচ্চাশা না থাকলেও গলফ ও শূটিং ঘিরে একটা স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। বিওএর মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেছেন, ‘আমরা আসন্ন অলিম্পিকে বাংলাদেশের যে পতাকা নিয়ে যাচ্ছি অংশ নিতে, সেই পতাকার ইজ্জত রক্ষা করতে চাই। এ পর্যন্ত আমরা অলিম্পিকে কোন পদক জিততে পারিনি। তবে অতীতের দিকে চেয়ে না থেকে আমাদের আশাবাদী হওয়া উচিত। বাংলাদেশ যদি এবার কোন পদক পায় তাহলে সেটা সিদ্দিকুর ও বাকীর হাত ধরেই আসবে বলে প্রত্যাশা করছি।’ তিনি জানান, বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে মর্যাদার আসর অলিম্পিক। বড় আসরে আমাদের অতীত ইতিহাস যাই থাক। এবার ভাল কিছু করার অনুপ্রেরণা হিসেবে ক্রীড়াবীদদের মোটা অঙ্কের অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা আমরা দিয়েছি। স্বর্ণপদক জিততে পারলে এক কোটি টাকা দেয়া হবে। আর রৌপ্য পদকের জন্য ৫০ লাখ ও ব্রোঞ্জ পদক পেলে ২৫ লাখ। আমি মনে করি এটা আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে বাড়তি একটা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। বিওএ সভাপতি, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল, আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পুরস্কারের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। শূটার বাকীর জন্য আবেদন ॥ সাফল্যের জন্য চাই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও অনুশীলন। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রীড়া থেকে যত পদক পেয়েছে, তার সিংহভাগই এসেছে শূটিং থেকে। এবারের রিও অলিম্পিকে যে পাঁচ ক্রীড়াবিদ যাবেন, তাদের একজন হচ্ছেন শূটার আবদুল্লাহ হেল বাকী। তিনি সফল হবেনÑ এমনটাই প্রত্যাশা করছে তার ফেডারেশন। তবে শূটিং হচ্ছে অন্য খেলাগুলোর চেয়ে অনেকটাই আলাদা। এটা যতটা না শারীরিক খেলা, তার চেয়েও বেশি মানসিক খেলা। এজন্য কোন ভেন্যুতে গিয়ে খেলার আগে সেই শূটারকে ক’দিন আগেই সেখানে উপস্থিত হতে হয়, পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়, পর্যাপ্ত অনুশীলন করতে হয়। এ লক্ষ্যে গত ৫ ও ১৭ মে বিওএকে দুটি চিঠি পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ শূটিং স্পোর্ট ফেডারেশন (বিএসএসএফ)। সেখানে তারা বিওএ’র প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিল বাকীকে যেন গেমস শুরুর অনন্তত দু’সপ্তাহ আগে রিওতে পাঠানো হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আর নিলে বাকির জন্য খুবই ভাল হতো বলে মনে করেন শূটিং কর্মকর্তারা। এদিকে গত ৩০ বছর ধরে আছেন বাংলাদেশ এ্যাথলেটিক ফেডারেশনে। বিভিন্ন পদে আসীন হওয়ার পর এখন আছেন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। কিন্তু এই পদে সুনামের চেয়ে দুর্নামই কামিয়েছেন বেশি। তার নাম ইব্রাহিম চেঙ্গিস। অনেকেই বলেন, মঙ্গোলিয়ান চেঙ্গিস খানের মতোই তার ভয়ঙ্কর মেজাজ। গালি ছাড়া কথাই বলতে পারেন না। সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলেও আসন্ন রিও অলিম্পিকে তার সংস্থার কোন এ্যাথলেট বা স্প্রিন্টার যাবেন কিনা, সেটা এখনও অনিশ্চিত। কিন্তু তারা কেউ না গেলেও ঠিকই নিজের যাওয়াটা কনফার্ম করে ফেলেছেন তিনি। এটা শুনে হয় তো অনেকেই বলবেন, এটা আর এমন কি। অলিম্পিকে তো সব এ্যাথলেটদের সঙ্গে তাদের ফেডারেশনের উর্ধতন কর্মকর্তারাও যান নিজের টাকায়, চেঙ্গিসও যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছেÑ নিজের অর্থে নয়, চেঙ্গিস রিও অলিম্পিকে যাবেন বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) অর্থে। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে অলিম্পিক গেমসে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। এছাড়া আরচারির শ্যামলী রায়, শূটার আবদুল্লাহ হেল বাকী, সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর, সোনিয়া আক্তার টুম্পাসহ মোট ৪ জনের ওয়াইল্ড কার্ডের মাধ্যমে অলিম্পিকে অংশগ্রহণের বিষয়টি ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়েছে। তবে এ্যাথলেটিক্স দলের মেজবাহ আহমেদ এবং শিরিন আক্তারেরও ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাদের কার্ডপ্রাপ্তিটা ঝুলে আছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) পক্ষ দফতরে। শুক্রবার রাত আটটা পর্যন্ত ছিল শেষ সময়। কিন্তু ওই সময়েও আইওসি জানায়নি এ্যাথলেটিক্সে কোন ওয়াইল্ড কার্ড দেবে কিনা। তবে এর আগের আসরেও আইওসি সময় শেষ হওয়ার পরেও ওয়াইল্ড কার্ড দিয়েছিল এ্যাথলেটিক্সকে। সে অনুযায়ী ক্ষীণ হলেও আশা ছিল। কারণ সোমবার পর্যন্ত ওয়াইল্ড কার্ড সংক্রান্ত সব কাজ শেষ করবে আইওসি। কিন্তু সোমবারও কোন সাড়া দেয়নি আইওসি। ফলে ধরে নেয়া যায় বাংলাদেশের এ্যাথলেটিক্স দলের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা খুবই কম। যদি শেষ পর্যন্ত এ্যাথলেটিক্স কোন কার্ড না পায় সেক্ষেত্রে অলিম্পিকে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে এই প্রথম এ ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশের কোন এ্যাথলেট অংশ নিতে পারছেন না। ফলে কপাল পুড়বে দেশের দ্রুততম মানব মেজবাহ আহমেদ ও দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তারের। তবে চেঙ্গিস ঠিকই যাচ্ছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিরিন আক্তারের নাম জমা দিতে দেরি করে এ্যাথলেটিক ফেডারেশন। শুধু তাই নয়, পরে বেরিয়ে পড়ে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপÑ শিরিন আক্তারের নামের বানানে ‘আইরিন’ আক্তার লিখে সেই ভুল নামটিই জমা দেয়া হয়েছিল। পরে বিওএ ফেডারেশনকে ভুল নামের বিষয়টি অবহিত করে। অযোগ্য-অদক্ষ এ্যাথলেটিক ফেডারেশনের কর্মকর্তারা আবারও নামের সংশোধনী দিয়ে মেইল পাঠান। সেই মেইলের কোন সদুত্তর এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আসেনি। না আসার সম্ভাবনাই বেশি। রিও অলিম্পিকগামী বাংলাদেশ দল ॥ এ্যাথলেট : সিদ্দিকুর রহমান (পুরুষ গলফ একক), আবদুল্লাহ হেল বাকী (পুরুষ শূটিং, ১০ মিটার এয়ার রাইফেল) মাহফিজুর রহমান সাগর (পুরুষ সাঁতার, ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইল ও ব্রেস্টস্ট্রোক), সোনিয়া আক্তার টুম্পা (মহিলা সাঁতার, ৫০ মিটার বাটারফ্লাই) এবং শ্যামলী রায় (মহিলা আরচারি, রিকার্ভ ডিভিশন); সেফ দ্য মিশন : লে. জেনারেল আবু তৈয়ব মোঃ জহিরুল আলম (অব)। প্রসঙ্গত, ৩১ জুলাই শূটিং, ১ আগস্ট সুইমিং ও ২ জুলাই আরচারি ও গলফ দল অলিম্পিকে অংশ নিতে রিও ডি জেনেইরোর উদ্দেশ যাত্রা করবে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওয়াইল্ড কার্ড না পাওয়াতে এ্যাথলেটিক্সের কোন এ্যাথলেটের নাম জানা সম্ভব হয়নি। কাজেই আপাতত এটাই রিও অলিম্পিকগামী বাংলাদেশের চূড়ান্ত দল।
×