ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাজিলের বেদনা ভোলাতে চান নেইমার

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১৬ জুলাই ২০১৬

ব্রাজিলের বেদনা ভোলাতে চান নেইমার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফুটপাথ, সমুদ্র সৈকত কিংবা বস্তিতে খেলতে খেলতে বেড়ে ওঠা। এক সময় বিশ্বসেরা তারকা বনে যাওয়া। দক্ষিণ আমেরিকার সব ফুটবলগ্রেটের ক্ষেত্রেই এর যেকোন একটি প্রযোজ্য। নেইমার দ্য সিলভা সান্তোস জুনিয়রের উত্থানও অন্যসব ফুটবল গ্রেটদের মতোই। দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ আর জীবিকার তাগিদে ফুটবলকে ধ্যান-জ্ঞান ও পেশা হিসেবে বেছে নেয়া। যার ফল, নেইমার এখন বিশ্ব ফুটবল মঞ্চের মূল কুশীলব। কিন্তু সময়ের অন্যতম সেরা এই তারকার মনে খুব একটা স্বস্তি নেই। ২০১৪ সালে নিজ দেশে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে ইনজুরি আক্রান্ত হওয়ায় সেমিফাইনালে খেলতে পারেননি। যার ফলস্বরূপ জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে বিদায় নিতে হয় পেলের দেশকে। পরের বছর কোপা আমেরিকাতেও ব্যর্থ হন নেইমার, ব্যর্থ হয় তার দলও। ২০১৬ সালে কোপা আমেরিকার শতবর্ষী আসর বসে যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু ক্লাবের শর্তের বেড়াজালের কারণে এই টুর্নামেন্টে খেলতে পারেননি নেইমার। বার্সিলোনা থেকে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়, হয় কোপা নয়ত অলিম্পিকে খেলতে হবে। শেষ পর্যন্ত নেইমার নিজ দেশ ব্রাজিলে বসতে যাওয়া রিও অলিস্পিকে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। আগামী মাস থেকেই বসতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম ক্রীড়া আসর। এই আসরের ফুটবল ইভেন্টে কখনই স্বর্ণ জিততে পারেনি ব্রাজিল। রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেও এখানে সাফল্যের ভা-ারটা শূন্য সেলেসাওদের। এবার নিজ দেশে স্বর্ণপদক জিততে তাই মরিয়া ব্রাজিল। নেইমারের নেতৃত্বে স্বপ্নপূরণের মিশনে নামবে পেলের দেশ। সম্প্রতি বছরগুলোতে ব্রাজিলের বেদনা লাঘব করার লক্ষ্যেই মিশন শুরু করবেন অধিনায়ক নেইমার। ছোটবেলায় দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে নেইমারের বাবা ‘সিনিয়র নেইমার দ্য সিলভা’কে। ভাগ্যান্বেষণে ব্রাজিলের মধ্যাঞ্চলের শহর সাও ভিনসেন্ট থেকে ১৯৯২ সালে সাওপাওলোর মগি দাস ক্রুজেস শহরে এসেছিলেন তিনি। মনের কোনে বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন লালন করে জন্মস্থান ছেড়ে এসেছিলেন সিনিয়র নেইমার। কিন্তু পারেননি ভাগ্যের চাকা সচল করতে। তার পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। নিদারুণ ওই দুঃসময়ে সিনিয়র নেইমারের ভালবাসার প্রতীক হিসেবে ঘর আলো করে আসে জুনিয়র নেইমার। এরপর স্বপ্নের পরিধি বেড়ে যায় তার। নিজের অপূর্ণ ইচ্ছা ছেলেকে দিয়ে পূরণের স্বপ্ন দেখতে থাকেন। এ কারণে অভাবের সংসার হলেও ছেলেকে এর আঁচ লাগতে দেননি। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন উত্তরসূরির চাওয়া পূরণ করতে। ছোট্ট ছেলের প্রতিভা ক্ষুরধার হওয়ায় কাজটাও সহজ জয়। যার প্রমাণ মেলে স্থানীয় ‘পর্তুগীজা সানটিস্টা’ ফুটবলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। তখনই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, ব্রাজিলের বস্তি থেকে ফুটবলবিশ্ব শাসন করতে আসছে আরও একজন বিস্ময়বালক। মূলত সাওপাওলোর রাস্তায় ফুটসাল খেলতে খেলতে ফুটবলের সঙ্গে প্রেম হয়ে যায় সেদিনের ছোট্ট নেইমারের। আর তার পরিণতিটা নিয়মিতভাবে দেখেছে ফটবল দুনিয়া। নেইমারের বিস্ময়কর উত্থানের শুরু ২০০৩ সাল থেকে। ওই বছর তিনি কিশোর প্রতিভা হিসেবে কিংবদন্তি পেলের সাবেক ক্লাব সান্টোসে যোগ দেন। পেশাদার ফুটবলের সঙ্গে তখন থেকেই পরিচিতি ব্রাজিলের বর্তমান স্বপ্নদ্রষ্টার। ফলস্বরূপ অল্প সময়ের মধ্যেই নেইমারের সংসারের অভাব বিতাড়িত হয়। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই কাড়ি কাড়ি অর্থের মালিক বনে যায় নেইমারের পরিবার। এরপর প্রত্যাশিতভাবেই নাম লেখান সান্টোসের মূল দলে। ফলাফল কি হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! ধারাবাহিক বিস্ফোরক পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে নেইমার এখন বর্তমন বিশ্ব ফুটবলের সেরা তারকাদের একজন। নেইমারের সুনাম আছে নিজ দেশ ব্রাজিল ও ক্লাব বার্সিলোনার হয়ে সমান পারফর্মেন্সের কারণে। ইতোমধ্যে দুই ঘরনাতেই তাক লাগানো সাফল্য পেয়েছেন। বর্তমানে ব্রাজিলের হয়ে পঞ্চম সর্বোচ্চ গোলদাতা বার্সিলোনা ফরোয়ার্ড। তার গোলসংখ্যা ৭০ ম্যাচে ৪৬। সামনে আছেন কেবল জিকো (৪৮), রোমারিও (৫৫), রোনাল্ডো (৬২) ও কিংবদন্তি পেলে (৭৭)।
×