ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিতর্কিত গোলে ব্রাজিলের বিদায়

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৪ জুন ২০১৬

বিতর্কিত গোলে ব্রাজিলের বিদায়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দিয়াগো ম্যারাডোনার সেই গোলটির কথা মনে আছে? ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাত দিয়ে গোল করেছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। বিতর্কিত সেই গোলে সেমিফাইনালে উঠে গিয়েছিল ম্যারাডোনার দেশ। শেষপর্যন্ত চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল আর্জেন্টিনা। ম্যারাডোনা সেই বিখ্যাত গোলটিকে ‘ঈশ্বরের হাত’ বলে অভিহিত করেছিলেন। ৩০ বছর পর আবারও সেই ঈশ্বরের হাতের দেখা মিলেছে ফুটবল মাঠে। এবার অবশ্য দৃশ্যপটে আর্জেন্টিনা নেই। ছিল রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। বাংলাদেশ সময় সোমবার সকালে ফক্সবরোর জিলেট স্টেডিয়ামে শতবর্ষী কোপা আমেরিকা ফুটবলে ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে পেরুর মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল। এক তরফা আধিপত্য বিস্তার করে খেললেও ম্যাচে গোল পায়নি সেলেসাওরা। উল্টো ৭৫ মিনিটে পেরুর ফরোয়ার্ড রাউল রুইডিয়াজ হাত দিয়ে গোল করে টুর্নামেন্ট থেকে ব্রাজিলকে বিদায় করে দিয়েছেন। ১-০ গোলে হেরে কোপা আমেরিকায় ১৯৮৭ সালের পর গ্রুপ পর্ব উতরাতে ব্যর্থ হলো পেলের দেশ। এই গোলটি নিয়ে ফুটবলবিশ্বে এখন বিতর্কের ঢেউ। টিভি রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা গেছে, হাত দিয়ে বল জালে পাঠিয়েছেন রুইডিয়াজ। সমালোচনার ঢেউয়ের মধ্যে অনেকেই বলছেন, গোলটি ম্যারাডোনার হাত দিয়ে করা গোলটিকে আবারও সামনে আনল। কেউ কেউ বলছেন, ঈশ্বরের হাতে বিদায়ঘণ্টা বেজেছে ব্রাজিলের! গ্রুপের আরেক ম্যাচে হাইতিকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইকুয়েডর। সেমিফাইনালে নাম লেখানোর ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র। শেষ আট নিশ্চিত করা পেরু সেরা চারের দৌড়ে লড়বে কলম্বিয়ার বিপক্ষে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইকুয়েডরের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে শুরুটা ভাল করতে পারেনি ব্রাজিল। তাই বলে সেলেসাওদের যে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হবে, সেটাই বা কে ভাবতে পেরেছিল! অবিশ্বাস্য এই ঘটনাই শেষপর্যন্ত ঘটে গেছে কোপা আমেরিকার ১০০ বছর পূর্তি আসরে। ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময় দাপুটে ফুটবল খেললেও শেষপর্যন্ত বিতর্কিত এক গোলের কারণে কপাল পুড়েছে আসরের আটবারের চ্যাম্পিয়নদের। কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট পেতে ব্রাজিলের শুধু ড্র করলেই চলত। জিলেট স্টেডিয়ামে সেই লক্ষ্য নয় বরং কিছুটা আক্রমণাত্মক কৌশলে জয়ের লক্ষ্যেই খেলতে নেমেছিল কার্লোস দুঙ্গার শিষ্যরা। কিন্তু পেরুর গোলরক্ষক পেড্রো ডেভিড গালেসই মূলত সেই পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান। উল্টো ৭৫ মিনিটে এন্ডি পোলোর ক্রস থেকে রাউল রুইডিয়াজের বিতর্কিত গোলে পেরুর জয় নিশ্চিত হয়। গোলের পরপরই ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়রা হ্যান্ডবলের আবেদন জানিয়ে গোলটি বাতিল করতে রেফারিকে আহ্বান জানান। কিন্তু উরুগুয়ের রেফারি আন্দ্রেস কুনহা হেডপিসের মাধ্যমে চতুর্থ অফিসিয়ালের সঙ্গে আলোচনা করে শেষপর্যন্ত গোলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। কিন্তু গোলটির সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল না সেটা শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়েছে। ওই সময় ম্যাচ প্রায় চার মিনিটের মতো বন্ধ ছিল। বিভিন্ন এ্যাঙ্গেল থেকে টেলিভিশনে রিপ্লেতে স্পষ্ট ধরা পড়েছে রুইডিয়াজের হাতে লেগে বলটি ব্রাজিল গোলরক্ষক আলিসনের পাশ কাটিয়ে জালে প্রবেশ করছে। এক গোলে পিছিয়ে পড়ে বাকি সময়টুকু গোল পরিশোধের মরিয়া চেষ্টা চালিয়েও সফল হতে পারেননি ব্রাজিলের তারকা ফুটবলাররা। ৮০ মিনিটে ব্রাজিলকে হতাশ করেন পেরুর গোলরক্ষক। রুখে দিয়েছেন ফিলিপে লুইসের দারুণ একটি শট। যোগ করা সময়ে গোল করে খেলায় সমতা ফেরানোর মোক্ষম সুযোগ পেয়েছিলেন আলিয়াস। কিন্তু গোলপোস্টের ঠিক সামনে পাওয়া বলটিকে জালে জড়াতে পারেননি ব্রাজিলের এই মিডফিল্ডার। ব্রাজিলের এই ব্যর্থতায় ইতোমধ্যেই চাপে থাকা কোচ কার্লোস দুঙ্গার ভবিষ্যত নিয়ে আবারও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। দুই বছর আগে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে জার্মানদের কাছে ৭-১ গোলের বিধ্বস্ত হওয়ার ক্ষত এখনও ভুলতে পারেনি ব্রাজিলিয়ানরা। সেই অমার্জনীয় ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যেই দুঙ্গার ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোপা আমেরিকায় গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় কোনমতেই মেনে নিতে পারছেন না সেলেসাও সমর্থকরা।
×