ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মহাতারকার মিশ্র সময়...

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৩ এপ্রিল ২০১৬

তিন মহাতারকার মিশ্র সময়...

ঝামেলার যেন অন্ত নেই মেসির! একের পর এক ঝামেলায় রীতিমতো ত্যক্ত-বিরক্ত বার্সিলোনার আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। এর কুপ্রভাবই কি তাহলে পড়ছে বর্তমান বিশ্বসেরা তারকার মাঠের খেলায়? এমন প্রশ্ন এখন তার অগণিত ভক্ত-অনুরাগী, ফুটবল সংশ্লিষ্টদের। কর ফাঁকি মামলা নিয়ে এমনিতেই ঝামেলায় থাকা মেসি সম্প্রতি মিসরে যেয়ে অপমানিত হয়েছেন জুতো দানকে কেন্দ্র করে। এরপর পানামার মোওস্যাক ফনসেকার অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে! এবার নতুন করে সংবাদ, আগামী জুনে কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম ম্যাচ নাও খেলা হতে পারে মেসির। কারণ কর ফাঁকির মামলার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। মেসির চলমান কর ফাঁকির মামলার তারিখ ছিল ৩১ মে। কিন্তু সেটি পরিবর্তন করে আগামী ৭ জুন ধার্য করা হয়েছে। যেখানে মেসিকে আদালতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। শতবর্ষী বিশেষ কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৬ জুন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চিলির মুখোমুখি হবে। কর ফাঁকির মামলায় মেসিকে ৭ জুন আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে। এ কারণে প্রথম ম্যাচে অধিনায়ককে পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকার বর্তমান রানার্সআপদের। ২০১৫ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে স্বাগতিক চিলির কাছে পেনাল্টি শূটআউটে হার মানে আর্জেন্টিনা। তবে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে চিলিয়ানদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের জয় তুলে নেয় মেসির দল। সেই চিলির বিরুদ্ধেই এবার কোপা আমেরিকায় নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে জেরার্ডো মার্টিনোর দল। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, স্পেনের ট্যাক্স অফিসের দায়ের করা মামলায় মেসি ও তার বাবা জর্জ মেসির বিরুদ্ধে ৪.১ মিলিয়ন ইউরো কর ফাঁকির অভিযোগ আনা হয়। যা থেকে এখনও মুক্তি মেলেনি রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকার। আশঙ্কা আছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে জেলও খাটতে হতে পারে মেসির! তাহলে কি পুরনো ঠিকানাতেই ফিরবেন রোনাল্ডো? গুঞ্জনটা ক্রমশ আলোর মুখ দেখছে বলেই মনে হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ বিষয়ে একাধিক খবর রটেছে। এবার ইংলিশ সংবাদমাধ্যম বিষয়টি আরেকবার সামনে এনেছে। তারা দাবি করছে, ২০১৮ সালে রিয়ালের সঙ্গে বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেই ওল্ডট্রাফোর্ডে ফিরবেন সি আর সেভেন। রোনাল্ডোর বর্তমান বয়স ৩১ বছর। দুই বছর পর রিয়ালের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওযার সময় তার বয়স হবে ৩৩ বছর। ব্রিটিশ মিডিয়া মনে করছে, ওই সময় রোনাল্ডোর প্রতি আগ্রহ থাকবে না রিয়ালের! এ কারণেই সাবেক ক্লাবে ফেরার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে সাবেক ফিফা সেরা তারকার। ২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মোট ছয় বছর ম্যানইউতে ছিলেন রোনাল্ডো। সেখানে ছয় বছরের ক্যারিয়ারে গোল করেন ১১৮টি। মূলত ওই সময়েই রোনাল্ডোর উত্থান। গুঞ্জন জানাচ্ছে, ২০১৮ সালে ওল্ডট্রাফোর্ডেই ফিরবেন রোনাল্ডো। শুধু ম্যানইউর আগ্রহ নয়, রোনাল্ডোরও মন আকুপাকু করছে আজকের তারকা হওয়ার পেছনে বড় অবদান রাখা ক্লাবটিতে ফিরতে। বিভিন্ন সময়ে তিনি এমন আভাস দিয়েছেন। এক সাক্ষাতকারে তিনবারের ফিফা সেরা তারকা বলেছিলেন ‘আমি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ভালবাসি’। ওল্ডট্রাফোর্ডে থেকেই ক্যারিয়ারের ইতি টানার ইচ্ছার কথা জানান বর্তমান ফিফা সেরা ফুটবলার। ৩১ বছর বয়সী রোনাল্ডোর ভবিষ্যত নিয়ে গত দুই বছর চলছে আলোচনা, জল্পনা-কল্পনা। তবে অনেকের মতে একদিন ফের ম্যানচেস্টার ফিরবেন পর্তুগীজ তারকা। ব্রিটিশ রেকর্ড ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড ট্রান্সফার ফিতে ২০০৯ সালে স্প্যানিশ পরাশক্তি রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন সি আর সেভেন। অবশ্য রোনাল্ডো এমনও বলেছেন, আমি রিয়াল মাদ্রিদে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় আছি। তবে আমি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকেও ভালবাসি। ভবিষ্যত নিয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না। তবে এই মুহূর্তে রিয়ালে আমি সুখেই আছি। নিকট ভবিষ্যতে সময়ের দুই সেরা তারকা মেসি ও রোনাল্ডোকে টপকে যাবেন নেইমার। এমন বলেছেন অনেকেই। এবার এ তালিকায় যুক্ত হয়েছেন ইতালির হয়ে বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলার আলেসান্ড্রো ডেল পিয়েরো। এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, আগামীতে নিশ্চিতকরেই ব্যালন ডি’অর জিতবে নেইমার। ২৪ বছর বয়সী নেইমার ন্যূক্যাম্পে আসার পর থেকেই বার্সিলোনার হয়ে আলো ছড়াচ্ছেন। যার ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে ফিফা ব্যালন ডি’অরের সেরা তিনে প্রথমবারের জায়গা পান ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক। মেসি, রোনাল্ডাকে টপকে এবার সেরা হতে না পারলেও ভবিষ্যতে সেটা হবে বলে মনে করেন ডেল পিয়েরো। তিনি বলেন, নেইমার এখনও তরুণ ফুটবলার। মেসি ও রোনাল্ডো দু’জনই তাদের সেরা ক্যারিয়ার পেছনে ফেলেছে। এখন সে (নেইমার) সঠিক পথে আছে। আগামীতে সেই ব্যালন ডি’অর জিততে যাচ্ছে। বার্সায় আসার পর থেকেই নেইমারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। ক্যাটালানদের জার্সিতে ধারাবাহিক জাদুকরী নৈপূণ্যের কারণেই প্রশংসার এই স্রোত। ব্রাজিলের সাবেক কিংবদন্তী ফুটবলার রোনাল্ডোও একাধিকবার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, নেইমারই ভবিষ্যতের বিশ্বসেরা। বর্তমানে রোনাল্ডো ও মেসি দুই বিশ্বসেরা ফুটবলার। তবে ব্রাজিলিয়ান রোনাল্ডো মনে করেন, খুব কম সময়েই এ দু’জনকে ছাড়িয়ে সেরা হবেন নেইমার। এক সময় ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারে ব্রাজিলিয়ানদের আধিক্য ছিল দেখার মতো। ১৯৯৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ফিফা সেরা হয়েছেন রোমারিও, রিভাল্ডো, রোনাল্ডো, রোনাল্ডিনহো ও কাকার মতো বিশ্বখ্যাত ফুটবলার। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে ফিফা সেরায় রাজত্ব করছেন আর্জেন্টিনার মেসি ও পর্তুগালের রোনাল্ডো। মেসি জিতেছেন টানা চার বছর (২০০৯-২০১২) ও ২০১৫ সালে। আর রোনাল্ডো জিতেছেন ২০০৮, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে। তবে চলতি বছর থেকে আবারও ব্রাজিলিয়ানদের দাপট শুরু হবে বলে বিশ্বাস করেন বড় রোনাল্ডো। বিশ্বকাপজয়ী তারকা বলেন, আমার বিশ্বাস ২০১৬ সালেই নেইমার বিশ্বসেরা হবে। আমার ধারণা এই ক্ষমতা তার আছে। সে ক্রমশই উন্নতি করছে, আর রোনাল্ডো ও মেসিকে টপকে যাওয়ার মতোই। আমি চাইনা নেইমার তিনে থাকুক। এমন পারফরমেন্সের পরও তোলপাড় করা খবর জানা গেছে। নেইমার নাকি বার্সিলোনা থেকে প্রত্যাশিত বেতন পান না। এমনিতেই কর ফাঁকির মামলার কারণে যাতনায় আছেন। যা এখনও চলমান। এই সময়ে ‘ফুটবল লিকস’ নামের ফুটবল ওয়েবসাইট বার্সার সঙ্গে নেইমারের চুক্তির খুঁটিনাটি প্রকাশ করেছে এমন গুজব বাতাসে। ২০১৩ সালে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্টোস ছেড়ে পাঁচ বছরের চুক্তিতে বার্সিলোনায় আসেন নেইমার। চুক্তি অনুযায়ী মৌসুমপ্রতি নেইমারের বেতন ৫ মিলিয়ন ইউরো। যদিও তাতে অনেক বোনাস যোগ হওয়ার সুযোগ আছে, যেখানে বর্তমান চুক্তি শেষে তার আয় হবে অন্তত ৪৯.৫ মিলিয়ন ইউরো। ফাঁস হওয়া নথিতে জানা গেছে, সাইনিং বোনাস হিসেবে বাড়তি ৮.৫ মিলিয়ান ইউরো পান নেইমার এবং চুক্তিপত্রে তার বাই-আউট ক্লজ বাবদ ১৯০ মিলিয়ন ইউরো চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এসব ছাড়া আরও অনেক দিকও তুলে ধরেছে ওয়েবসাইটটি। নেইমারকে পেতে রীতিমতো লাইন ধরে আছে বিশ্বের বাঘা বাঘা ক্লাবগুলো। মেসি-রোনাল্ডোর পর বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও কাক্সিক্ষত ফুটবলার তিনি। বেতন-ভাতাও তাই এ দুই তারকার আশপাশেই হওয়া উচিত ব্রাজিলিয়ান তারকার। কিন্তু চমকে ওঠার মতো তথ্য দিয়েছে ফুটবল লিকস।
×