ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে উড়িয়ে দিল টাইগাররা, ফাইনালে প্রতিপক্ষ ভারত

ফাইনালে বাংলার বাঘ

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ৩ মার্চ ২০১৬

ফাইনালে বাংলার বাঘ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দারুণ ইনিংস খেলে সৌম্য সরকার এবং একটু পরেই মুশফিকুর রহীমের আউট নিস্তব্ধ করে দিয়েছিল গ্যালারি। আবার উল্লাসের উপলক্ষ এসেছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ছক্কায়। ম্যাচের ভাগ্য দোদুল্যমান হয়েছে বারবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাহমুদুল্লাহ যখন ২০তম ওভারের প্রথম বলেই আনোয়ার আলীকে চার হাঁকালেন, সঙ্গে সঙ্গেই মাঠে উল্লাস করতে করতে ঢুকে পড়লেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। কারণ, ওই চারেই ৫ উইকেটে পাকিদের পরাস্ত করে ফাইনালে পৌঁছে গেল বাংলাদেশ। প্রথমবার কোন টি২০ আসরের ফাইনাল নিশ্চিত করল টাইগাররা। আর এমন আনন্দে মাঠে পুরোটা সময় উপস্থিত ক্রীড়ানুরাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দর্শকদের পাশাপাশি নিজেও উঠে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানালেন মাশরাফি বিন মর্তুজা বাহিনীকে। ‘স্বাধীনতার মাস, অগ্নিঝরা মার্চ’- জিতলেই বড় কোন টি২০ টুর্নামেন্টে প্রথমবার ফাইনাল খেলার সুযোগ। এমন মাসে লড়াইটা আবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। স্বাধীনতার মাসে আরেকবার জ্বলে উঠল টাইগাররা। ২০১২ এশিয়া কাপে ফাইনাল খেললেও পাকিস্তানের কাছে হেরে রানার্সআপ হতে হয়েছিল। সেবার মাহমুদুল্লাহ পারেননি চার হাঁকাতে, বাংলাদেশ হেরে গিয়েছিল ২ রানে। এবার তার কাছেই আত্মসমর্পণ করল পাকিরা। বুধবার টস জিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২৯ রান করেছিল পাকিস্তান। জবাবে ১৯.১ ওভারে ৫ উইকেটে ১৩১ রান তুলে জয় পায় বাংলাদেশ। অন্যতম বোলিং ভরসা মুস্তাফিজুর রহমান নেই। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি২০ অভিষেক দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধূমকেতুর মতো উদয় হয়েছিল তার। তবে পেসস্তম্ভ না থাকলেও এদিন ফিরেছেন এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা পারফর্মার উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। এছাড়া চলতি আসরে প্রথমবার স্বীকৃত স্পিনার হিসেবে একাদশে ঠাঁই পেলেন আরাফাত সানিও। জিতলেই ফাইনাল, আর হেরে গেলে অপেক্ষায় থাকতে হবে। সর্বশেষবার অবশ্য গত বছর এপ্রিলে মুস্তাফিজের অভিষেক ম্যাচে ঘরের মাঠে পাকিদের হারিয়ে দিয়েছিল টাইগাররা। সেই ম্যাচ খেলা শহীদ আফ্রিদি, সরফরাজ আহমেদ ও মোহাম্মদ হাফিজ শুধু পাক স্কোয়াডে এদিন। কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টস হেরে গেলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। আগে ব্যাটিং করতে নামল পাকিস্তান। দীর্ঘদিন পর আবারও উইকেট কিপিংয়ের দায়িত্বে মুশফিকুর রহীম ফিরেছেন এদিন। প্রথম থেকেই আগুন ঝরালেন তাসকিন আহমেদ ও আল আমিন হোসেন। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই আল আমিনের আঘাতে সাজঘরে খুররম মঞ্জুর (১)। এরপর থেকে মিরপুরে শুধু উল্লাস আর উল্লাস। ১৮ রানেই তিন উইকেট হারানো পাকিরা পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভার শেষ করে মাত্র ২০ রানে। দলীয় ২৮ রানে যখন উমর আকমলকেও (৪) তাসকিন তুলে নিলেন তখন চরম বিপদে পাকিরা। তবে ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন শোয়েব মালিক ও সরফরাজ। পঞ্চম উইকেটে দুজন মিলে ৫০ বলে ৭০ রানের জুটি গড়ে দলকে চ্যালেঞ্জিং একটি সংগ্রহের দিকে এগিয়ে নেন। এটি ছিল টি২০-তে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পঞ্চম উইকেটে পাকিস্তানের সেরা আর সার্বিকভাবে দ্বিতীয় সেরা জুটি। ১০ ওভার শেষে টি২০ ক্রিকেটে নিজেদের সর্বনি¤œ ৩৪ রান- বেশিদূর এগোতে পারবে না পাকিরা এমনই মনে হচ্ছিল। কিন্তু পরের ১০ ওভারে ৯৫ রান করেছে পাকিরা বাংলাদেশী বোলাররা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায়। ১৩তম ওভার থেকেই ঝড় শুরু করেন মালিক-সরফরাজ। চার ওভারে ৮, ১১, ১৪, ১২- ৩৫ রান তুলে নিয়ে দলকে ভাল অবস্থানে নিয়ে যান তারা। মালিক ৩০ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৪১ রানে আরাফাতের বলে ফিরে যান। এরপর ‘বুম বুম’ শহীদ আফ্রিদিকে রানই করতে দেননি আল আমিন। কিন্তু সরফরাজ সর্বনাশটা করেছেন। তিনি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি হাঁকিয়ে ৪২ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৫৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। ৭ উইকেটে ১২৯ রানের সম্মানজনক সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। আল আমিন ২৫ রানে তিনটি ও আরাফাত ৩৫ রানে দুটি উইকেট নেন। সার্বিকভাবে বোলারদের নিয়ন্ত্রণটা ভাল ছিল তা বোঝা যায় অতিরিক্ত কোন রান না দেয়াতে। প্রথম ওভারেই তামিমের হাঁকানো ছক্কায় পাক পেসস্তম্ভ মোহাম্মদ আমিরের বলে ৮ রান। ভালই শুরুটা। কিন্তু পরের ওভারেই তামিম (৭) এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়ে সাজঘরে বিদায় নেন। এরপর দারুণ সতর্ক থেকেই ব্যাট চালিয়েছেন সৌম্য ও দারুণ ফর্মে থাকা সাব্বির রহমান রুম্মান। দেখেশুনে খেলে তারা পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ নিয়ে যান ৩৪ রানে। জুটিতে ৩৩ রান যোগ করে প্রাথমিক বিপদ কাটান। কিন্তু এরপরই ভুলটা করেছেন সাব্বির, আফ্রিদিকে ডাউন দ্য উইকেটে তুলে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান (১৫ বলে ১৪)। কিন্তু চলতি টুর্নামেন্টে নিজের সেরা খেলাটাই উপহার দিতে থাকেন সৌম্য। দেখেশুনে তিনি দুর্দান্ত কিছু শট খেলে দর্শকদের আনন্দে ভাসার সুযোগ করে দিয়েছেন। ৪৮ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৪৮ রান করে ফিরে যাওয়ার একটু পরই মুশফিকুর রহীমের আউট নিস্তব্ধ করে দেয় পুরো মাঠ। তখনও ৩৪ বলে জিততে ৪২ রান প্রয়োজন বাংলাদেশের। সাকিবও দ্রুত ফিরে গেলে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। কিন্তু মাশরাফি নেমে আমিরের টানা দুই বলে চার হাঁকিয়ে আবারও বাংলাদেশের পক্ষে এনে দেন ম্যাচ। তবু শেষ দুই ওভারে ১৮ রান- উভয় দলের মধ্যে এবং দর্শকদের মাঝে ¯œায়ুচাপ! মোহাম্মদ সামির ১৯তম ওভারে ১৫ রান তুলে নিয়ে জয়টাকে হাতের মুঠোয় আনেন মাহমুদুল্লাহ-মাশরাফি। ২০তম ওভারের প্রথম বলে আনোয়ার আলীকে চার হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন মাহমুদুল্লাহ। ৫ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেটে ১৩১ রান তুলে ৫ উইকেটের জয়ে ফাইনালে পা রাখে টাইগাররা।
×