ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

টি ইসলাম তারিক

পরিচ্ছন্নতার অপেক্ষায় ফিফা!

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পরিচ্ছন্নতার অপেক্ষায় ফিফা!

প্রায় দেড় যুগ একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন। বিশ্ব ফুটবলকে শাসন করেছেন নিজের মতো করে। কিন্তু নানাবিধ দুর্নীতির আখড়া হিসেবে ফিফাকে চিহ্নিত করে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা। আর সেটা নাকি গত কয়েক বছর ধরেই ফিফার মধ্যে ছিল। এমনকি সর্বশেষ দীর্ঘদিনের ফিফা সভাপতি সেপ ব্লাটারের দিকেও অভিযোগের আঙ্গুল ওঠে উয়েফা সভাপতি মিশেল প্লাতিনির সঙ্গে অনির্দিষ্ট কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদান-প্রদানের প্রমাণ মেলার পর। এরপর দুজনকেই ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় ফিফা থেকে। অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে ফিফার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সেটাও শেষ হয়ে যাবে শুক্রবার। ব্লাটার যুগের যবনিকাপাত ঘটে আসবে নতুন নেতৃত্ব। ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব নির্ধারিত বিশেষ কংগ্রেসে ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হবে। শুক্রবারের ভোটটি অনুষ্ঠিত হবে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে। ঘটনা ২০১১ সালের। প্লাতিনিকে হাতে রাখতে ২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক দিয়েছিলেন ব্লাটার। সেটা কোন ধরনের ফুটবল কর্মকা-ের জন্য দেয়া হয়নি এমনটাই তদন্তে বেরিয়ে আসে। যদিও পরবর্তীতে প্লাতিনি ও ব্লাটার দুজনই এটাকে পারস্পরিক সমঝোতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত লেনদেন এবং সেটা আসলে ফুটবল উন্নয়নের স্বার্থেই দেয়া হয়েছে এমনটা দাবি করেছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছিল, কেন তাহলে ব্যক্তিগত এ্যাকাউন্টে এই বিপুল অর্থ লেনদেন করা হলো। শেষ পর্যন্ত ফিফা নৈতিকতা কমিটি ব্লাটারকে সভাপতি পদ থেকে অপসারণ করে এবং উভয়কে সব ধরনের ফুটবল কর্মকা- থেকে ৮ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়। ব্লাটার অবশ্য আগেই জানিয়েছিলেন এবারের মেয়াদ শেষে আর ফিফা সভাপতি থাকবেন না তিনি। সেক্ষেত্রে প্লাতিনিকেই সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে এগিয়ে রেখেছিলেন সবাই। কিন্তু প্লাতিনিও হলেন বহিষ্কার। ব্লাটারকে সরিয়ে দেয়ার আগেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার কারণে ব্লাটার নিজেই এ বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশেষ কংগ্রেস আহ্বান করেন। সেই ভোটাভুটিতে প্লাতিনি অন্যতম ফেবারিট ছিলেন পরবর্তী সভাপতি হওয়ার দৌড়ে। কিন্তু পরে ওই আর্থিক লেনদেনের ইস্যুতে দুজনই ছিটকে গেছেন ফিফা থেকে। তাই ব্লাটার এবং তাঁর কাছের মানুষদের আধিপত্য খর্ব হতে চলেছে। ব্লাটার কিংবা তাঁর সহযোগিদের চিরতরে বিদায় ঘণ্টা বাজতে চলেছে শুক্রবার। ব্লাটারেরই নির্ধারণ করা বিশেষ কংগ্রেস এদিন। সেখানে তিনি কিংবা প্লাতিনি কেউ থাকতে পারবেন না। ব্লাটারের গড়া রাজ্যসভার আসনগুলোতে বসবে সম্পূর্ণই ভিন্ন মানুষেরা। নির্বাচনের মাধ্যমে ঘটে যাবে ব্লাটার সাম্রাজ্যের পতন। ১৯৯৮ থেকে টানা তিনি ফিফা সভাপতি হিসেবে আসীন ছিলেন। অনেক ফিফা এবং ফুটবল কর্মকর্তা এটাই শেষবারের মতো জুরিখ সফর করবেন। ২০১৯ সালে পরবর্তী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আর তাদের ফিরে আসার সুযোগ নেই। ফিফায় ২০৯টি সদস্য ফেডারেশন আছে। এবার নির্বাচনে যিনি সভাপতি হবেন তিনি গত ৫০ বছরের মধ্যে মাত্র চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে এই পদে আসীন হবেন। এবার নির্বাচনে ৫ প্রার্থীর মধ্যে দুজনকে সবচেয়ে এগিয়ে রাখছেন সবাই সার্বিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা এবং অবস্থান, সমর্থন অনুসারে। তারা হচ্ছেন এশিয়ার ফুটবল নেতা বাহরাইনের শেখ সালমান ও উয়েফা সাধারণ সম্পাদক সুইজারল্যান্ডের জিয়ান্নি ইনফ্যান্টিনো। এবারের বিশেষ ফিফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুর্নীতি শেষ হবে বলে মনে করছেন অনেকে। কেননা এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন করে অনেক নিয়মকানুনও যোগ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে সংস্কারও হবে ফুটবলের সবচেয়ে বড় সংস্থার। কি ধরনের সংস্কার হতে পারে সেটা দেখে নেয়া যেতে পারে। জোয়াও হ্যাভেলাঞ্জ ফিফার সভাপতি ছিলেন দীর্ঘ ২৪ বছর। অবৈধভাবে অর্থ আদান-প্রদানের অভিযোগে সাময়িক নিষিদ্ধ ব্লাটার ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থায় ‘রাজত্ব’ করেছেন ১৭ বছর। দুর্নীতি-অনিয়মে জর্জরিত ফিফা এখন অতীতের কলঙ্ক ভুলে পরিশুদ্ধ হতে মনোযোগী। সে লক্ষ্যে একটি সংস্কার কমিটিও গড়া হয়েছে। এই কমিটিই বেশ কিছু প্রস্তাবনা রেখেছে ফিফার নির্বাহী কমিটির কাছে। যার মধ্যে অন্যতম, ফিফা সভাপতি পদে সর্বোচ্চ ১২ বছর থাকা যাবে। শুধু সভাপতির সর্বোচ্চ মেয়াদই নয়, আরও কিছু বিষয়েও প্রস্তাবনা রেখেছে সংস্কার কমিটি। সভাপতিসহ ফিফা কাউন্সিলের সদস্যদের বয়স ৭৪ বছরের বেশি হতে পারবে না এমন প্রস্তাবনাও রাখা হয়েছে। পারিশ্রমিক সংক্রান্ত প্রস্তাবনাও আছে। সংস্কার কমিটির প্রস্তাবনা ফিফার সভাপতি, মহাসচিব, কাউন্সিল সদস্য এবং প্রত্যেক স্বতন্ত্র স্থায়ী ও বিচার বিভাগীয় কমিটির সভাপতির পারিশ্রমিক প্রতিবছর প্রকাশ করতে হবে। আঠারো বছর পর বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ পদে নতুন কেউ আসার পথটা সম্ভবত উৎসবমুখর থাকছে না। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ফিফায় বাড়ছে আরেকটি ঝড়ের শঙ্কা।
×