ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলা সিনেমার বাঁক বদল

এনআই বুলবুল

প্রকাশিত: ০০:৫৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাংলা সিনেমার বাঁক বদল

মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘদিন সিনেমা হল বন্ধ ছিল

মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘদিন সিনেমা হল বন্ধ ছিল। অন্যদিকে ভাল সিনেমার অভাবে করোনার আগে থেকেই দেশীয় সিনেমা হলগুলো ছিল দর্শক বিমুখ। উৎসব কেন্দ্রিক দুই-একটি সিনেমা ছাড়া করোনার আগে কয়েক বছর সিনেমা হলগুলোতে খুব বেশি দর্শক ছিলনা । তবে করোনা সঙ্কট কাটিয়ে গেল বছর সিনেমাপাড়া অনেকটাই ঘুরে দাঁড়ায়। দীর্ঘ সময় পর গেল বছর রমজান ঈদে একসঙ্গে চারটি সিনেমা মুক্তির মধ্য দিয়েও আশার আলোও উঁকি দেয়। ঈদে শাকিব খানের ‘গলুই’ ‘বিদ্রোহী’ ও সিয়ামের ‘শান’ সিনেমা দর্শকদের হলমুখী করে।

সে সময় সোশ্যাল মিডিয়াতেও সিনেমাগুলো নিয়ে দর্শকের উচ্ছ্বাস ও নানা রকম রিভিউ চোখে পড়ে। সিনেমা সংশ্লীষ্টদের মতে গেল বছর থেকে সিনেমায় পরিবর্তনের হাওয়া শুরু হয়। গেল বছরে ‘পদ্মাপুরান’, মিশন এক্সট্রিম, ‘লাল মোরগের ঝুটি, ‘মৃধা বনাম মৃধা, রাত জাগা ফুল’ সিনেমাগুলো যারা দেখছেন তাদের বেশির ভাগের মন্তব্য সুন্দর ছবি।  সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে পোস্ট করেছেন সিনেমা দেখে টাকা উসুল করেছেন। সত্যি বলতে যারা এসব সিনেমা দেখেছেন তারা দারুণ প্রশংসা করছেন। গেল বছর ‘হাওয়া’ ও ‘পরাণ’ সিনেমা দুটিও দারুণ ব্যবসা করে।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ‘হাওয়া’ সিনেমার ‘সাদাসাদা কালাকালা’ গানটি দারুণ ভাইরাল হয়। কলকাতার দর্শকের কাছেও এ সিনেমাটি প্রশংসা পায়। দেশীয় সিনেমা এখন শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দেশের বাইরেও একাধিক দেশে আমাদের সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। সেখানে এ সিনেমাগুলো বেশ প্রশংসিতও হচ্ছে। এরমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো ‘মিশন এক্সট্রিম, ‘শান’ ও ‘হাওয়া’।

এদিকে সিনেমা এখন শুদু পেক্ষাগৃহেই থাকছে না। ওটিটিতেও সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। ওটিটির কল্যাণে সারা বিশ্বের মানুষ বাংলা সিনেমা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। কলকাতার একাধিক অভিনয় শিল্পী জানান সেখানে বাংলাদেশের সিনেমা দর্শক নিয়মিত দেখছেন। ‘ফেলুদা’খ্যাত অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী বলেন, ‘কলকাতার দর্শক এখন নিয়মিত ঢাকার সিনেমা দেখে। আমার পরিবারের সদস্যরাও ঢাকার সিনেমার খুব প্রশংসা করে। আমি তাই বলতে পারি এখানে এখন অনেক ভালো ভালো সিনেমা হচ্ছে।’

সম্প্রতি ‘মায়ার জঞ্জাল’ সিনেমার প্রচারনায় ঢাকায় আসেন ওপার বাংলার অভিনেতা হৃত্বিক চক্রবর্তী। তিনিও ঢাকার সিনেমার বেশ প্রশংসা করেন। তিনি আরও বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে এখন দেখা যায় দর্শক কি দেখেন। কলকাতায় ঢাকার সিনেমার প্রচুর দর্শক আছে। এখানে শিল্পীদের তারা বেশ পছন্দও করে। বিশেষ করে চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিমসহ কয়েক তারকা কলকাতার দর্শকের কাছেও অনেক জনপ্রিয়।’

এদিকে দেশীয় সিনেমার পেক্ষাগৃহে যোগ হচ্ছে বলিউড সিনেমা। ঢাকার সিনেমা খুব শিগগির বলিউডের সিনেমার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে পেক্ষাগৃহে চলবে। দেশের সিনেমাহলগুলোতে বলিউড সিনেমা প্রদশনের জন্য হল মালিকেদের পক্ষ থেকে বেশ জোরালো ভূমিকা রাখে। এরমধ্যে বেশ কিছু শর্তে বলিউডের সিনেমা ঢাকায় মুক্তি অনেকটা নিশ্চিত এখন। শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুন বলেন, দেশের সিনেমাহল টিকিয়ে রাখার জন্য ও হল বাড়ানোর আমরা বলিউড সিনেমা মুক্তির পক্ষে। তবে এরজন্য আমাদের কিচু শর্ত আছে।

সেগুলো মেনে নিলেই আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। এরমধ্যে শিল্পীসমিতি ও চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠন বলিউড সিনেমা মুক্তির পক্ষে অবস্থান করছেন।’ নায়ক রিয়াজ বলেন, এদেশি যদি হলিউডের সিনেমা মুক্তি পেতে পারে তাহলে বলিউড কেন পারবে না। বরং আমাদের সিনেমা বলিউডের সঙ্গে পাল্লা দেবে। ভালো সিনেমাগুলোই টিকে থাকবে। দেশের সিনেমায় পরিবর্তন আসবে।’ এ অভিনেতা আরও বলেন, বাংলা সিনেমা এখন আর আগের মতো নেই।

দেশের বাইরেও আমাদের অনেক সিনেমা প্রশংসিত হচ্ছে। কান উৎসবে ঢাকার সিনেমা প্রষংসিত হয়। এগুলো থেকেই বলতে হয়, আমরা এখন আর পিছিয়ে নেই। আমাদের পিছিয়ে থাকার দিন শেষ। আগামীতে ইন্ড্রাষ্ট্রির পরবির্তনের জন্য দক্ষ লোকদের এগিয়ে আসতে হবে।’

লেখক : সহ সম্পাদক, দৈনিক জনকণ্ঠ

হাওয়া’ সিনেমার দৃশ্য

×