ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের দৈনিকের ইতিহাসে প্রথম সংযোজন ॥ ফ্যাশন পাতা

জলি রহমান

প্রকাশিত: ০০:৪৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

দেশের দৈনিকের ইতিহাসে প্রথম সংযোজন ॥ ফ্যাশন পাতা

সময়ের আবর্তে বছর ঘুরে আবার এলো প্রিয় প্রতিষ্ঠান দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

সময়ের আবর্তে বছর ঘুরে আবার এলো প্রিয় প্রতিষ্ঠান দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৯৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দেশের পাঁচটি বিভাগীয় শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া ও সিলেট থেকে একযোগে প্রকাশিত হয়েছিল দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকা। সংগ্রামী ও বিচক্ষণ মানুষের সম্পাদনায় এর যাত্রা। প্রতিটি পাতার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তার দূরদৃষ্টি। আর সুন্দর সাজানো বাগানের ন্যায় সাজিয়েছেন জনকণ্ঠ ভবনকে। তবে সৃষ্টিকর্তার নিয়ম অনুযায়ী অনেক স্বপ্ন ভরা এই ভুবনকে ছেড়ে আমাদের কাঁদিয়ে ২০২১ সালের ২১ মার্চ অকালে চলে গেলেন প্রিয় সম্পাদক স্যার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ।
ফ্যাশন, শিক্ষাসাগর এবং যাপিত জীবনের মতো অনেক ফিচার পাতার সূচনা তিনিই করেছেন। সময়ের পালাক্রমে সকল শিল্পই বিকশিত হয়। তেমনি পত্রিকা শিল্পও এখন অনেক বিস্তৃত। রয়েছে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসহ অসংখ্য অনলাইন পত্রিকা। অধিকাংশ পত্রিকায় ফ্যাশন নিয়ে সংবাদ বা ফিচার করা হয়। ফ্যাশন পাতায় এখন নানা রূপ ও বৈচিত্র্য এসেছে তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এ পথের কর্ণধার জনকণ্ঠ।

পত্রিকার সূচনা লগ্ন থেকে সাপ্তাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে ফ্যাশন পাতা। ছাপানোর পাশাপাশি পত্রিকায় এসেছে ডিজিটাল প্লাটফর্ম নামক ভিন্ন আয়োজন। যা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আশীর্বাদ। ফলে মোবাইল, কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ যে কোনো ডিভাইজে জনকণ্ঠ লিখে সার্চ দিলেই পাওয়া যায় দেশের সকল খবরাখবর।
দেশজুড়ে হাল ফ্যাশনে এসেছে নানা বিবর্তন। দেশীয় ও পাশ্চাত্য মিশেলে পোশাকে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষণীয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছেও পৌঁছে যাচ্ছে দেশ-বিদেশের ফ্যাশন ধারার খবর। তৈরি হয়েছে ফ্যাশন সাংবাদিকতায় একদল সংবাদকর্মী। যারা পোশাক-আশাকের নানা খবর জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন পোর্টালে প্রকাশ করছে। পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালেই পাওয়া যায় ফ্যাশন নিয়ে নান্দনিক ফিচার। ফলে সময়োপযোগী করে নিজেকে সাজানো যায়।

বাঙালির রয়েছে বারো মাসে তেরো পার্বণ। উৎসব অনুযায়ী পোশাক পরতে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এ কারণেই ঈদ ও পূজার মতো বড় বড় অনুষ্ঠানে শপিংমল ও মার্কেটজুড়ে থাকে কোলাহল। ফ্যাশন স্থির থাকে না। এটি নদীর মতো বহমান। ফ্যাশন চলতে থাকে আপন গতিতে। চলমান গতির সঙ্গে যোগ হয় নতুন নতুন মাত্রা। 
সারা বিশ্বেই আরামদায়ক পোশাকের গুরুত্ব বাড়ছে। পোশাকের ফিটিং এমন হতে হবে যেন দেখতে ভালো লাগে এবং স্বাচ্ছন্দ্যময়ও হবে। এক সময় জর্জেট কাপড়ের খুব চাহিদা ছিল। মধ্যে কিছুকাল এর ব্যবহার তেমন দেখা যায়নি। এখন আবার জর্জেট ও সিনথেটিক মিক্সড কটন কাপড়গুলোর চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে কটন কাপড় বেশ জনপ্রিয়। আগে বাঙালি নারীরা ঘরে-বাইরে সবসময় শাড়ি পরলেও সালোয়ার কামিজ আসার পর থেকে শাড়ি পরার প্রচলন অনেকটা কমে যায়। হাল ফ্যাশনে থ্রি পিসের তুলনায় সিঙ্গেল কামিজ, ওয়ান পিস, কুর্তি ইত্যাদির চাহিদা বেড়েছে।

এগুলোতে ট্র্যাডিশনাল, ফিউশন টাইপের ডিজাইন করা হচ্ছে। পুরুষরাও এক সময় ধুতি-পাঞ্জাবি পরত। এরপর তারা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরতে শুরু করল। পুরুষরা লুঙ্গিও পরত ঘরে-বাইরে। সেখান থেকে পরিবর্তিত হয়ে তারা এখন শার্ট ও প্যান্ট পরছে। কয়েক দশক আগেও পাঞ্জাবি ছিল ধর্মীয় পোশাক। হয়তো নামাজের জন্য বা ঈদের জন্য গায়ে জড়াতেন। মুরব্বিরা অধিকাংশ সময়ই পাঞ্জাবি পরতেন। এখন ক্যাজুয়াল পোশাকে পরিণত হয়েছে এটি।

সময়ের আবর্তে নারী-পুরুষ উভয়ের কাছেই ডেনিম খুব জনপ্রিয়। ডেনিম কাপড়ের রয়েছে বাহারী পোশাক যা পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত হচ্ছে। বাংলাদেশেও তৈরি হচ্ছে এই কাপড়। যখন যে ফ্যাশনের চল আসে তা খুব সহজেই ছড়িয়ে পরে সবার মধ্যে এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে মিডিয়া বা সংবাদমাধ্যম। বাংলাদেশ পোশাক শিল্পে অনেক উন্নত। রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে এ শিল্প থেকে। দেশেই তৈরি হয়েছে অনেক ফ্যাশন হাউস, যারা দেশীয় কাপড় দিয়ে পোশাক বানায়।

এরা নিজেদের প্রমোট করতে দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজে নিয়মিত সংবাদ সংগ্রহ করে। পাশ্চাত্য ফ্যাশনের নানা উপাখ্যান প্রকাশের ফলে ডিজাইনাররা সহজেই মানুষের চাহিদা অনুযায়ী পোশাকের ডিজাইন করতে পারে। এজন্য দেশীয় পোশাকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে আধুনিক তরুণ-তরুণীরা। 
চলতি মাসে রয়েছে তিনটি উৎসব পহেলা ফাল্গুন, ভ্যালেন্টাইনস ডে এবং ভাষা শহীদ দিবস। এ কারণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো। তৈরি করছে নিত্যনতুন নান্দনিক পোশাক। ঋতু অনুযায়ী পোশাকে থাকে ভিন্ন ভিন্ন রঙের সমন্বয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি বসন্তের বাসন্তী ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের লাল রং পোশাকে ছিল নজরকাড়া। আর একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটিতে থাকে সাদা-কালো রঙের একচ্ছত্র আধিপত্য। বাঙালি ফ্যাশন সচেতন একাত্তরের যুদ্ধের আগে থেকেই।

আর ১৯৯৩ সালে যখন জনকণ্ঠের পাতায় প্রকাশিত হলো ফিচার পাতা ফ্যাশন, তখন থেকেই নানা মাত্রায় রূপ পেয়েছে এই পাতাটি। বর্তমানে বিভিন্ন সংবাদপত্রে ফ্যাশন নিয়ে পাতা সাজানো হচ্ছেÑ নিত্যনতুন আঙ্গিকে। ঈদের মতো বড় বড় উৎসবে সচেতন মানুষ কেনাকাটার আগে প্রচার মিডিয়া থেকে খবর নেয় নতুন কি এলো এ বছরে। তাই ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে ফ্যাশন পাতার চাহিদা ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে ক্রমান্বয়ে।   
চলছে ভাষার মাস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি, এ মহান দিনেই যাত্রা শুরু করেছিল দৈনিক জনকণ্ঠ। এখানে আমার কাজ করার অর্ধযুগ পেরিয়ে গেছে। শুরু থেকে অর্থনীতি পাতা করলেও পরবর্তীতে যোগ হয় ফ্যাশন পাতাও। আগে এগুলো সাপ্তাহিক প্রকাশিত হলেও করোনার পর থেকে পাক্ষিকভাবে ছাপানো হচ্ছে। প্রতিটি পাতার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে যাচ্ছে যুগোপযোগী নানা সংবাদ।

প্রয়াত সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান স্যারের যোগ্য সহধর্মিণী শামীমা এ খানের সম্পাদনায় পত্রিকা পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। জনকণ্ঠের প্রথম চলাটা যেমন সাফল্যম-িত ছিল। উত্থান-পতনের দোলাচলে আবার  সেই হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। পেছনে রয়েছে সংবাদকর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টা। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে নিজেও গৌরাবান্বিত। এ পথে চলতে চাই আরও বহুদূর।

লেখক : সহ সম্পাদক
দৈনিক জনকণ্ঠ

×