একাত্তরের বিলাপ-২
আনোয়ারা সৈয়দ হক
আমি আজ ছিন্ন ভিন্ন হয়েছি
আমার শরীর দাঁতালো শূকরেরা খুবলে খাচ্ছে দিবারাত,
রাতও দিন, সারাদিন
ধারালো করাতে অবিরাম চিরে যাচ্ছে মগজের স্নায়ু
রক্তের ধারায় মুছে যাচ্ছে অতীতের সব স্মৃতি
একদিন কি আমি, এই আমি, সেই কত বর্ষ আগে,
জননী ছিলাম, গৃহিণী ছিলাম,
স্বামী সোহাগিনী ছিলাম?
নাকি স্বপ্নের ভেতরে ছিল এসব?
এখন আমি পতিতা একদল হায়েনার হাতে
আমাকে প্রতিরাতে তারা দোজখের সাঁতারে টেনে নেয়
আগুনের হলকায় পুড়ে যায় আমার দেহ
যকৃৎ খুবলে কায় শকুনের দল
আমি আর চোখে কিছু দেখি না
আমার বাড়ির আঙিনায় যেখানে রোজ সকালে
ছোট্ট একটি রোদে এসে লাউয়ের মাচায় পড়ত
আজও কি সেখানে রোদ?
আজও কি আকাশে সূর্য ওঠে টগবগে হাসি মুখে ধরে
আজও কি নিশার বাবা চাষ করে চলেছে ফসলের মাঠ
আজও কি তার পায়ের গোছায় জমে ওঠে ক্লান্তির ঘাম
আজও কি সে ঘুমের ভেতরে আমাকে খোঁজে?
আমি জবাব পাই না।
এখন আমার কাছে দিনরাত সমান সমান
এখানে কোনো সূর্য ওঠে না, অন্ধকার এখানে
স্থায়ী ছাউনি ফেলেছে
রাতগুলো বিভীষিকা, দিনগুলো অশরীরী ফিসফাস
সেই কত কত দিন ধরে শুধু এদের বসবাস
আমি কি পূতঃপবিত্র হয়ে বাঁচবো কোনদিন।
** সে যে আমার
জাফরুল আহসান
কেমন করে বোঝাই তারে কেমন করে বলি
সে যে আমার সদ্যলেখা প্রেমের পদাবলি
প্রেমের ঘাটে বেচাকেনার সওদা সে তো নয়
হয়তো হবে তুলসী ধোয়া প্রেমের দেবালয়।
কেমন করে বোঝাই তারে কেমন করে বলি
সে যে আমার মন গহিনে প্রেমের চোরা গলি
হরিণ কালো চোখের তারা হৃদয় ঢাকা মুখ
হয়তো হবে শেষ বিকেলে রৌদ্র মাখা সুখ।
কেমন করে বোঝাই তারে কেমন করে বলি
সে যে আমার প্রেমের লাভা লক্ষ দীপাবলি
সকল খ্যাতির উৎস যে খানিক গোপনতা
হয়তো হবে শরীর জুড়ে লতিয়ে ওঠা লতা।
কেমন করে বোঝাই তারে কেমন করে বলি
সে যে আমার জীবন সাথি নয় তো চোরাবালি।
** তুমি ও আমি
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান
এক.
এসো উন্মুখ হই
এসো কবিতা খুঁজি
এসো শীতল জলে
দুচোখ বুঁজি।
দুই.
পাতার মতো এসো
পথের শেষে
মনের কোণে রেখো
জ্যোৎস্না হেসে!
তিন.
এসো গায়ে মেখে রাত
কিনি বিকেল ছায়া
নূপুর বাজিয়ে ঝুমু ঝুম
নামুক নীরোদ মায়া।