ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রদীপ জ্বালাল ‘বায়ান্ন’

প্রকাশিত: ১১:৩২, ২০ আগস্ট ২০১৯

 প্রদীপ জ্বালাল ‘বায়ান্ন’

বইকে বলা হয় মানুষের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। শাশ্বত এবং চিরঞ্জীব এক সম্পদ বই। বই জ্ঞান কল্পনার এক অসীম দুয়ার খুলে দেয়। বই কেন পড়ব, হাজার পৃষ্ঠা খরচ করে লিখলেও উত্তরটা পরিপূর্ণ হবে না। কোথায় যেন অপূর্ণতা থেকেই যাবে। বইয়ের গুরুত্বটা বোঝাতে গিয়ে কবি ওমর খৈয়াম বলেছিলেন, ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা।’ আজকের গল্পটা বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করে এমন এক সংগঠনকে নিয়ে। গল্পের শুরুর জন্য ফেরত যেতে হবে ২০১৭ সালে। আলাদাভাবে নানারকম সমাজকর্মে যুক্ত ছিলেন জুয়েল চৌধুরী, তারেক আজিজ, মোঃ সাজ্জাদ হোসাইন সানি, জীবন বসু এবং অরুপ দেবনাথ। সেখান থেকেই তাদের মনে হয় সমাজ পরিবর্তনের জন্য কিছু করা প্রয়োজন। সমাজ পরিবর্তনে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে তোলাই সব থেকে বেশি জরুরী বলে মনে করেছিলেন তারা। আর মানবিকতার বাতিকে জ্বালাতে বা মনের দুয়ার খুলতে বইয়ের চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে? ২০১৭ সালের শেষ দিকে চট্টগ্রামের ২ নং ওয়ার্ডের বালুচরাতে একটি লাইব্রেরী চালু করেন তারা। নাম দেন ‘বায়ান্ন’। প্রাথমিকভাবে ৭০০ বই নিয়ে শুরু হয় লাইব্রেরীর কার্যক্রম। ‘পড়বো বই, জানব দেশ, ভালবাসব বাংলাদেশ’ নামে একটি ফেসবুক ইভেন্ট খোলা হয় যেখান থেকে বই সংগ্রহ করেন তারা। এছাড়াও নিজের অর্থায়নে বই কেনা হয়। ছোট্ট একটি ভাড়া বাড়িতে শুরু হয় পাঠাগারের কার্যক্রম। শুরুর দিকে প্রতিবন্ধকতা কী কী ছিল জানতে চাইলে সাজ্জাদ সানি জানান, প্রথম দিকে অনেকেই ভাল চোখে দেখতেন না। সবাই আসলেই খুব সন্দিহান ছিলেন বায়ান্ন আদৌ কিছু করবে কিনা বা করলে অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা। এছাড়াও উদ্বুদ্ধ করার বদলে অনেকেই কটু কথা বলতে শুরু করে। তবে এসবে কান না দিয়ে বায়ান্ন চলতে থাকে আপন গতিতে। পাঠাগার চালু হওয়ার পর পাশের প্রাথমিক স্কুলের শিশুরাই হয়ে উঠে মূল পাঠক। উন্মুক্ত পাঠাগার হওয়ায় সকল শ্রেণীপেশার মানুষ ‘বায়ান্ন’ তে বই পড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে বই পড়তে উৎসাহিত হয়ে উঠতে শুরু করে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে এই পাঠাগারে ৩ ধরণের সদস্য আছেন। পরিচালনায় নিযুক্ত সদস্য আছেন ৩০। নিয়মিত পাঠক আছেন ১০০ জনের বেশি। আর স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছেন ৩০০ জনের অধিক মানুষ যাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এছাড়াও এই পাঠাগার নিয়মিতই পাঠচক্র এবং সেমিনারের আয়োজন করে যাচ্ছে। সামনের দিনের পরিকল্পনা হিসেবে বায়ান্ন জানায় ২০৩০ সালের তারা চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডেও প্রত্যেকটিতে একটি করে লাইব্রেরী স্থাপন করতে চায়। যুগের প্রয়োজনে পাঠাগার ডিজিটালাইজেশনের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে তাদের দ্বিতীয় লাইব্রেরী স্থাপনের কাজ চলছে। সম্প্রতি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক নতুন ভবনে পাঠাগার স্থাপনের জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ দেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। সানি আরও জানান, ‘নানা সীমাবদ্ধতার থাকলেও আর্থিক সঙ্কটই তাদের বড় বাধার নাম। অর্থের অভাবে নতুন বই যোগ করা বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কারো জীবনে বইয়ের আলো এসেছে দেখার মধ্যে দিয়ে এসব প্রতিবন্ধকতা জয়ের স্বাদ পান তারা। পাঠাগার ছাড়াও জাতীয় দিবস উৎযাপন, বই বিতরণ, সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে খাদ্য বিতরণ, মেহেদি উৎসব পালন করে থাকে বায়ান্ন। সমাজ বদলের প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালে ‘বায়ান্ন’ জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড লাভ করে।
×