ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

চলমান পরিস্থিতিতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের অজানা শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার:

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ১০ মে ২০২৫

চলমান পরিস্থিতিতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের অজানা শঙ্কা

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি, অন্তবর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা এবং এর পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন।শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে-এটা জনগণের দাবি করতে হবে কেনো?''

তিনি আরও বলেন, ‘‘যদি হাসিনা (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) নির্বাহী ক্ষমতাবলে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে পারেন, তাহলে অন্তবর্তীকালীন সরকার নাটক করে বলছে জনগণ চায়-এটা কেনো? কী প্রয়োজন? কী বোঝাতে চান? এসব বিষয় আমাদের বুঝতে হবে।’’

আলোচনায় তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘জামায়াতে ইসলাম তো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করেছে,তাহলে তারা কি নিষিদ্ধ দল নয়? আওয়ামী লীগ করেছে তো, ন্যায়-অন্যায় পরে দেখা যাবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘জামায়াতে ইসলাম এখনো নিবন্ধন ফেরত পায়নি। অথচ সরকার (অন্তবর্তীকালীন সরকার) তাদের ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে। ওদের নিবন্ধনের দরকার নাই!’’

নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে গয়েশ্বর বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগতভাবে একমত বা দ্বিমত পোষণ করছি না। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, কখনো কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দেশের রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হয় না।’’

‘‘সমাধান আসবে মানসিকতা থেকে। ফ্যাসিবাদীরা যেমনভাবে দেশ চালিয়েছে, আপনি যদি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করতে পারেন,তাহলেই জনগণ ঠিক করবে কে থাকবে আর কে নিষিদ্ধ হবে।’’

জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে ‘তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তার দাবিতে’ এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

‘আবদুল হামিদ কিভাবে গেলেন?’

আলোচনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশযাত্রা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন গয়েশ্বর। তিনি বলেন, ‘‘আবদুল হামিদ চলে গেলেন। উনি লুকিয়ে যাবেন কেমন করে? রাষ্ট্রের দুইবারের প্রেসিডেন্ট তিনি। অথচ কোনো সংস্থা জানে না তিনি দেশে আছেন, টিকিট কাটছেন, কিংবা কোন ফ্লাইটে যাচ্ছেন!’’

‘‘আমরা ঢাকার বাইরে গেলেও সব সংস্থা তটস্থ হয়ে পড়ে। আর তিনি ভিআইপি রুমে গেলেন, কেউ জানলো না! আমাদের বলা হয় স্যার একটু বসুন, উপরে যোগাযোগ করতে হবে।’’

১/১১-এর সময় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোর প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, ‘‘আজ এই সরকারের পেছনে কে কলকাঠি নাড়ে? ১/১১ যারা সৃষ্টি করেছে, তারাই আজকের সরকারকে পরিচালিত করছে। আপনারা সবাই নিজেরাই চিন্তা করুন, উত্তরটা নিজেই পেয়ে যাবেন।’’

‘সরকার স্পষ্ট করে বলুক, তারেকের দেশে ফিরতে বাধা নেই’

তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করেও সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, ‘‘আমরা সরকারের কাছ থেকে স্পষ্ট জানতে চাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই। প্রধানমন্ত্রী সেটা প্রকাশ্যে বলুন।’’

‘‘নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো গৌণ। আল্লাহ কার কপালে কী লিখেছেন তা সময় বলবে। কিন্তু এই অজ্ঞাত কারণে জনগণ কোনো জবাব পাচ্ছে না। সেই অজানা কারণটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।’’

গয়েশ্বর আরও বলেন, ‘‘গণতন্ত্র ও সংস্কারকে আপনারা (সরকার) মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন। কিন্তু গণতন্ত্র সংস্কারের শত্রু নয়, বরং একে অপরের পরিপূরক। আগে গণতন্ত্র আসলে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন সহজ হবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘যেদিন জনগণের ভোটে সরকার আসবে, তখন তারা সংবিধানের জনবিরোধী ক্লজগুলো বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়ন করতে পারবে। ফলে গণতন্ত্রই হবে সকল সংস্কারের পূর্বশর্ত।’’

সভায় সভাপতিত্ব করেন ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। পরিচালনায় ছিলেন জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা। এছাড়া ১২ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ সভায় বক্তব্য রাখেন।

আফরোজা

×