
ছবিঃ সংগৃহীত
পরিবর্তন বা সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বড় রকমের মতপার্থক্য বা ভিন্নমত দেখা যাচ্ছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংস্কারের প্রস্তাবে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালালেও তাতে ভিন্নমত বা মতপার্থক্য দূর হওয়ার ইঙ্গিত নেই।
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। একইসাথে তারা নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। তবে বলা যায়, অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে একেবারে বিপরীত অবস্থানে এই দলটি।
কিন্তু তারপরও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অবশ্য হাল ছাড়তে চায় না। দলগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনায় তারা ভিন্নমতের কারণ জানার চেষ্টা করছেন। একইসঙ্গে তাদের সংস্কারের প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা রয়েছে বলে জানান এই কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
বড় দলগুলো যখন একে অপরের বিপরীত অবস্থান নিচ্ছে, তখন সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কিত মৌলিক বিষয়গুলোয় ঐকমত্য বেশ কঠিন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
গত সরকারের পতনের পর গঠিত অর্ন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির জন্য ১১টি কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে সংবিধান, বিচারবিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন, ও পুলিশ- এ সব বিষয়ে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলমান আছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের।
এনসিপি বর্তমান সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান চাইছে। সেজন্য তারা গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তুলেছে। দলটির ব্যাখ্যা হচ্ছে, নির্বাচন একবারই হবে। সেই নির্বাচনে যারা জয়ী হবে, তারা প্রথমে গণপরিষদ গঠন করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে। এই নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই পরে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। অর্থাৎ তাদের দিয়েই সংসদ গঠিত হবে।
তবে এনসিপি’র এই দাবির সঙ্গে বিএনপি, জামায়াতসহ বেশিরভাগ দলই একমত নয়। এই ইস্যুতেই অন্যান্য দলের সঙ্গে এনসিপি’র মতপার্থক্য বেশি। প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধানের পদে থাকতে পারবেন না বলে সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করেছে, এ নিয়ে আপত্তি বিএনপির। দলটির জানিয়েছে, এটি রাজনৈতিক দলের নিজেদের সিদ্ধান্তের বিষয়। এ ব্যাপারে পরিবর্তন বা সংস্কারের কোনো প্রয়োজন নেই।
অন্যদিকে জামায়াত বলছে, সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী এক ব্যক্তি হতে পারেন। দলীয় প্রধান অন্য কেউ থাকতে পারেন। তবে বামপন্থি দলগুলো ও অন্যান্য ইসলামী দল সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত। তারা মনে করে, এক ব্যক্তি তিন পদে থাকার কারণে ‘একনায়ক’বা ‘স্বৈরাচার’ হওয়ার সুযোগ থাকছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না- এই সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে একমত নয় । কোনো ব্যক্তি টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এটা হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তারা। এছাড়া সরকারের মেয়াদ চার বছর করার প্রস্তাবে সক্রিয় সব দলেরই আপত্তি রয়েছে। তারা পাঁচ বছর মেয়াদের কোনো পরিবর্তন চায় না।
আরশি