ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয়

-

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যয়

সম্পাদকীয়

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ন্যাপ (ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান) এক্সপো ও বিসিডিপির (বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ পরিচালনা করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে যে ব্যয় করা হয়, তা যদি জলবায়ু পরিবর্তনে করা হতো, তা হলে রক্ষা পেত বিশ্ব।

তিনি আরও বলেছেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে অবদান শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশের কম হলেও এর নেতিবাচক প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সম্ভাব্য উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল (মোট আয়তনের প্রায় ১২ থেকে ১৭ শতাংশ) এ শতাব্দীর শেষ দিকে সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে প্রয়োজন অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি, সহিষ্ণুতা শক্তিশালী করা এবং ঝুঁকি হ্রাসে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ। কপ-২৬ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোর ২০২৫ সালের মধ্যে অভিযোজন-অর্থায়ন ২০১৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণ করার কথা। এটি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। 
একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয়টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ প্রধান কার্বন-নির্গমনকারী দেশগুলোকে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে নির্গমন হ্রাস করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু তহবিলে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে।

অভিযোজন এবং প্রশমনের মধ্যে তা সমানভাবে বণ্টন করতে হবে। উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তি স্থানান্তরের পাশাপাশি সবচেয়ে কার্যকর জ্বালানি সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের সময় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলো তাদের ক্ষতি অনুসারে বিবেচনা করা উচিত। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা এবং খরার কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের পুনর্বাসনের দায়িত্ব সব দেশকে ভাগ করে নিতে হবে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী সব অংশীদারকে কাজ করতে হবে একসঙ্গে। 
বৈশাখের শুরু থেকেই দেশজুড়ে বিরাজ করছে অসহনীয় তাপমাত্রা। প্রকৃতির এ বৈরী রূপ থেকে মুক্তি পেতে প্রচুর গাছ লাগিয়ে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে। রাজধানীতে প্রায় দুই কোটি লোকের বসবাস। অথচ পর্যাপ্ত গাছপালা, পার্ক ও জলাশয় খুঁজে পাওয়া ভার। যত্রতত্র আবাসন প্রকল্প এবং অপরিকল্পিত নগর উন্নয়নের ফলে ভরাট হয়ে যাচ্ছে জলাশয়-খাল-নদী-নালা। নগরায়ণের প্রভাবে পাল্টে যাচ্ছে গ্রামের চিত্রও।

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রয়োজন টেকসই এবং কার্যকরী পরিকল্পনা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষার জন্য সচেতন হতে হবে সবাইকে। অব্যাহত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ঝুঁকি হ্রাসে বাড়াতে হবে অর্থের বিনিয়োগ।

×