ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় জন কেরি

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ১২ এপ্রিল ২০২১

ঢাকায় জন কেরি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সিনেটর জন কেরির মাত্র ৬ ঘণ্টার ঢাকা সফরটি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। এই সংক্ষিপ্ত সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক এবং সাংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছেন। উল্লেখ্য, জন কেরি প্রধানত এসেছেন ২২ ও ২৩ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেট শীর্ষক বৈশ্বিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিতে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রত্যাবর্তন আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নিঃসন্দেহে এক পরিবর্তনের সূচনা করবে। ইতোপূর্বে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তার দেশকে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলার জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিলে অর্থায়ন করার কথা উন্নত বিশ্বের। বাংলাদেশ চায় এই অর্থের ৫০ শতাংশ অভিযোজন এবং ৫০ শতাংশ ঝুঁকি প্রশমনের জন্য বরাদ্দ রাখা হোক। যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসা এই তহবিলে অর্থায়নের পথ অনেকটা সুগম হলো। উল্লেখ্য, ৪০টি দেশ লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেটে অংশগ্রহণ করবে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ স্বীকৃতি ও সম্মাননা দেয়ার কথা রয়েছে। তবে সব ছাপিয়ে জোরেশোরে আলোচিত হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার বিষয়টি। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি জি-এইট সদস্যভুক্ত ৮টি মুসলিম রাষ্ট্রের ভার্চুয়াল সম্মেলনেও রোহিঙ্গা সমস্যাকে উত্থাপন করেছেন। বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মিয়ানমারে সম্মানজনক পুনর্বাসনে যুক্তরাষ্ট্রেরও সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জন কেরি এক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে বলেছেন। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানটি তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্ববহ। উল্লেখ্য, তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও মিয়ানমারের কাছ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তেমন অগ্রগতি নেই। আন্তর্জাতিক আদালতে দেশটির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলার শুনানিও চলমান। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তিন বছর পার হলেও বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ঝুলে গেছে বলেই প্রতীয়মান হয়। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ নিয়ে বর্তমানে তেমন সাড়াশব্দ নেই বললেই চলে। বরং সারাবিশ্ব যেন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে করোনা মোকাবেলাসহ ভ্যাকসিন প্রদানে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কোনভাবেই আত্তীকরণ করা হবে না। গত বছর থেকে তাদের পর্যায়ক্রমে ভাসানচরে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি চেষ্টা চলছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ তৃতীয় কোন দেশে পুনর্বাসনের। এটি সময়সাপেক্ষ ও দুরূহ হলেও অসম্ভব নয়। তাই বলে রোহিঙ্গারা কিন্তু বসে নেই। গত তিন বছরে অন্তত দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির থেকে পালিয়ে গেছে। ইয়াবা পাচারসহ জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে অথবা জাল করে পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। সেখানেও নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে রোহিঙ্গা বিশেষ করে তরুণদের জঙ্গী ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। সে অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরও জরুরী উদ্যোগ নিতে হবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও প্রভাবশালী জি-এইটভুক্ত দেশগুলো সর্বতোভাবে সহযোগিতা করতে পারে বাংলাদেশকে। এর পাশাপাশি অন্যতম নিয়ামক ও প্রভাবক শক্তির ভূমিকা পালন করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত।
×