বাংলাদেশ আজ চরম সঙ্কটের আবর্তে দুঃসহ ক্রান্তিকাল পার করছে। করোনা ভাইরাসের নিষ্ঠুর ছোবলে সারা বিশ্ব আজ দিগ্ভ্রান্ত। প্রতিষেধক থেকে শুরু করে নিরাময়ের চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও অজানা। গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা রোগটি নিয়ে প্রাসঙ্গিক সব বিষয়কে এক করে কারণ খোঁজার নিরলস প্রচেষ্টায় নিয়োজিত আছেন। রোগের উৎসটি এখনও কুয়াশাচ্ছন্ন। ধারণা করা হচ্ছে বাদুড় কিংবা বনরুই জাতীয় স্তন্যপায়ী জীব থেকে রোগটির সূচনা হতে পারে। চিকিৎসা পদ্ধতির অপ্রতুলতার মাঝেও যথাসম্ভব সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব থেকে ব্যক্তিক বিচ্ছিন্নতাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আর এই জায়গায় সফলকাম হওয়ার সম্ভাবনাও নির্দেশিত হচ্ছে। সর্বস্তরের মানুষকে ঘরে অবরুদ্ধ করা থেকে আইসোলেশনে যাওয়া এক ধরনের অসহায় পরিস্থিতি। তার পরেও স্বাস্থ্যবিধি অবহেলা করার কোন উপায় এই মুহূর্তে নেই। ফলে পরিবার কিংবা এলাকাজুড়ে যখন নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, কাউকেই বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হয় না, সেটা স্বাস্থ্যসম্মত হলেও ভুক্তভোগীদের জন্য এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। তেমন দুঃসময়কে মানবিক দায়বদ্ধতায় মোকাবেলার চিত্র উঠে এসেছে আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের পক্ষ থেকেও। ঘটনাটা ঘটে চাঁদপুর শহরে। সেখানে আটকেপড়া ৩০০ পরিবারকে চিহ্নিত করে তাদের প্রতি যে সহৃদয় মমত্ববোধ দেখানো হয় তা শুধু বিস্ময়েরই নয়, মানবিক মূল্যবোধেরও এক পরম নিদর্শন। সমাজের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী প্রয়োজনে কঠোর আর অবিচলিত থেকে অন্যায়-অবিচারকে যেমন রোধ করেন, তারাই আবার প্রয়োজনে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্যামল মাঠের আঙিনা। পুলিশ সেখানে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এক অভাবনীয় কর্মোদ্যোগে সবাইকে হতবাক করে দেয়। সেখানে পুলিশ হাতের অস্ত্র ফেলে দিয়ে লাঠি নিয়ে কাজ করা শুরু করে। তৈরি করা হয় সবুজ মাঠের বিস্তর আঙিনায় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে শত শত বৃত্ত। উৎসুক এলাকাবাসী অদ্ভুত এই কর্মকা-ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। পুলিশের এক অংশ এমন কাজ করতে থাকলে অন্য একটি দল এসে খুঁজতে শুরু করে দেয় আশপাশের লকডাউনে আটকে পড়া ৩০০ পরিবারের অসহায় মানুষগুলোকে। এক সময় খুঁজে পেয়ে তাদের নিয়ে আসা হয় মাঠের কাছে। করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে তাদের অবরুদ্ধ জীবনের দুঃখ, দারিদ্র্য আর হতাশা থেকে মুক্তি দিতে বের করে আনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। নিয়মমাফিক দূরত্ব বজায় রেখে তৈরি করা বৃত্তে তাদের আসন করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে এসব অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বণ্টন করার অসাধারণ দৃশ্য চারপাশের জনগণ বিমুগ্ধচিত্তে দেখতে থাকে। চাঁদপুরের মেঘনাপারের শতাধিক হতদরিদ্র পরিবার এমন মানবিক সহমর্মিতায় বিস্ময়ে অভিভূত হয়।
পুলিশরা শুধু নিজ উদ্যোগেই নয়, তাদের অর্থায়নেও এমন সচেতন মনুষ্যত্বকে অতি সাধারণ মানুষের কাছে উজাড় করে দিচ্ছে। এমন মানবিক মানুষের সংখ্যা সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যারা এক সময় সম্মিলিতভাবে একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়েও পড়েছিল। বিপন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের সুরক্ষা দিতে তাদের খাদ্য, বস্ত্র আর আশ্রয়েরও যোগান দিতে কার্পণ্য করেনি। আজ আমরা এক মরণব্যাধি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অঘোষিত লড়াইয়ের মোকাবেলা করছি। এমন দুঃসময়েও একই চেতনায় সংঘবদ্ধ হয়ে মানুষ আর দেশকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ নেই।
শীর্ষ সংবাদ: