প্রধানমন্ত্রী আবারও জোর দিয়ে বলেছেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন নীতি শুধু রাজধানী কিংবা নগরকেন্দ্রিক নয়, বরং পর্যায়ক্রমে সবরকম নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারিত করা হবে গ্রাম-গঞ্জেও। সোমবার সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এক হাজার ৬৭১টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটসহ সাতটি আবাসন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধকালে এ কথা বলেন তিনি। ইতোমধ্যে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ভাতা-বোনাস বাড়ানো হয়েছে, সহজ সুদ ও কিস্তিতে ঋণ দিয়ে বাড়ি-গাড়ি-ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। রাজধানীতে কর্মকর্তাদের আবাসন সুবিধা বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণের সদিচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। এর জন্য তৈরি করা হচ্ছে মাস্টার প্ল্যান, যেখানে ভবন নির্মাণে নদ-নদী, পুকুর, জলাশয়, প্রকৃতি ও পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখা হবে।
জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ শীর্ষক আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছিল, প্রতিটি গ্রামে আধুনিক শহরের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বিনির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর জন্য সময় লাগতে পারে অনধিক দুই বছর। উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে গ্রাম-বাংলায় কৃষি বিপ্লব, বিদ্যুত ব্যবস্থা, কুটির শিল্পসহ আনুষঙ্গিক শিল্পের বিকাশ, শিক্ষা, যোগাযোগ, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে আমূল পরিবর্তনের অঙ্গীকার করেছিলেন। তাঁর সেই দূরদর্শী স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে। গ্রাম ও গ্রামের সৌন্দর্য অক্ষুণœ রেখে আধুনিক শহরের নাগরিক সুযোগ-সুবিধাগুলো পৌঁছে দেয়া হবে গ্রামে। গত দশ বছরে সরকারের ধারাবাহিক সাফল্যের অন্যতম হলো ঘরে ঘরে বিদ্যুত। মূলত বিদ্যুতের সঙ্গে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বিষয়টি ওতপ্রোত জড়িত। বিদ্যুত গেলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে। ছোট-বড় শিল্পের বিকাশ হয়। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ে। এর সঙ্গে বেড়ে যায় শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য ও হাটবাজারসহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন। গ্রাম-গঞ্জে এখন এজেন্ট ব্যাংকিং সুবিধাসহ কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগও সহজলভ্য। মোবাইল ফোন তো আছেই। মোটকথা বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়।
আজকাল নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি ও বাস্তুসংস্থানবিদরা সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন সুষ্ঠু, সমন্বিত পরিকল্পনা ও উন্নয়নের ওপর। এখন চোখ ফেরানোর সময় এসেছে উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে। প্রতিটি উপজেলায় গড়ে তুলতে হবে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ। কেননা সেখানেও ভাল করেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। সে অবস্থায় যত্রতত্র আবাসন, যত্রতত্র স্থাপনা ও কলকারখানা না করে স্থানীয় জনসংখ্যা ও চাহিদার প্রেক্ষাপটে নিতে হবে সুদূরপ্রসারী ও পরিকল্পিত উন্নয়ন। আর তাহলেই কেবল সম্ভব একটি আধুনিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ। আবহমান গ্রাম-বাংলায় চিরায়ত সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক আবেদনকে যথাসম্ভব অক্ষুণœ রেখেই গ্রহণ করতে হবে গ্রামোন্নয়ন পরিকল্পনা তথা মাস্টারপ্ল্যান।
শীর্ষ সংবাদ: