
সম্প্রতি এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ এক বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে উপস্থিত হয়ে চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, নির্বাচন এবং ইউনূস সরকারের স্বরূপ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে যে সরকার দেশ পরিচালনা করছে তা কেবল একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনের জন্য গঠিত কোনো কেয়ারটেকার সরকার নয়, বরং এটি একটি গণঅভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, “নির্বাচন নিয়ে আমি কোনো অনিশ্চয়তা দেখতে পাচ্ছি না। শুরু থেকেই এই সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার কথা বলে এসেছে। এটি গণঅভ্যুত্থানের সরকারের একটি অংশ, যার কাজ শুধু নির্বাচন নয় বরং সংস্কার, বিচার, এবং বৃহৎ রাজনৈতিক রূপান্তরের একটি প্যাকেজ বাস্তবায়ন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরাও দল হিসেবে বারবার বলেছি দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে একটি সময়সীমা দিয়ে নির্বাচন দেওয়া হোক, যা ইতোমধ্যেই গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঘোষণা করা হয়েছে।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, এই সরকার একটি রেগুলার গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা থেকে আসেনি। এটি এসেছে দীর্ঘ সময়ের আন্দোলন ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে। ফুয়াদের ভাষায়, “২০০৬ থেকে আজ পর্যন্ত যে রক্তক্ষয় ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে এই সরকার এসেছে, তা এই অঞ্চলের ইতিহাসে বিরল। হাজারো তরুণ তাদের জীবন দিয়েছে, ইতিহাসে এমন গণঅংশগ্রহণ দেখা যায়নি।”
ফুয়াদ বলেন, আজকের প্রেক্ষাপটে শুধু নির্বাচন নয়, বিচার এবং রাজনৈতিক জবাবদিহিতাও গুরুত্বপূর্ণ দাবি হয়ে উঠেছে। “যে মা তার সন্তান হারিয়েছে, তিনি কি নির্বাচন চান, না বিচার চান এই প্রশ্নটা জরুরি। দেয়ালে দেয়ালে তরুণদের যে লেখা, তাতে তো নির্বাচনের কথা নেই, বরং নতুন ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে,” বলেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বৃত্ত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি কৃত্রিম অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে। “যারা ইউনূস সরকারের ১০ মাসের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী, তারাই প্রতিদিন এই সরকারকে ব্যর্থ বলে অভিযোগ করছে। অথচ তারা কেউ গত ১০ মাসে রিমান্ডে যায়নি, ডিবি অফিসে যায়নি, হাজার হাজার মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে,” উল্লেখ করেন ফুয়াদ।
তার দাবি, এই ট্রান্সফরমেশনের সময়ে যে রাজনৈতিক বক্তব্য ও অবস্থান নেওয়া হচ্ছে, তা অনেক সময় দেশের স্বার্থের পরিপন্থী হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “ভারতীয় গণমাধ্যম, রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের বক্তব্যে যা দেখা যাচ্ছে, তা আমাদের দেশের ভেতরের কিছু মানুষের বক্তব্যের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। একজন দেশপ্রেমিক মানুষ, যিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নিরলস কাজ করছেন, তাকেও সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে, তার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, এই ন্যারেটিভ তৈরি করে কিছু মহল চায় আওয়ামী লীগ রাজনীতি থেকে নির্বাসিত হোক, পরে হয়তো ৩০ বা ৫০টি আসনে পুনর্বাসনের আলোচনা শুরু হবে। একইসঙ্গে তারা বোঝাতে চাইছে, ইউনূস সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।
তবে ফুয়াদের দাবি, ইউনূস সরকারকে আন্তর্জাতিক মহল ইতোমধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে। “তিনি আজ জাপানে আছেন, কয়েকদিন পর ইংল্যান্ডে যাবেন, বিভিন্ন রাষ্ট্রের আমন্ত্রণে বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেবল দিল্লি বাদে কোথাও আমাদের সম্পর্ক খারাপ নয়,” বলেন তিনি।
বক্তব্যের একপর্যায়ে ফুয়াদ তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, “একটি বিয়ের দাওয়াত যদি আপনি আমাকে দেন, তাহলে প্রতিদিন এসে কি খাবো, কখন আসবো, সবকিছু আগেই বলে দিতে হবে? আপনি যখন একটিমাত্র বিষয়ে বারবার চাপ সৃষ্টি করবেন, তখন এর পরিণতির দায়ও আপনাকে নিতে হবে।”
তিনি সতর্ক করেন, “২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে এর পরিণতির দায় রাজনীতিবিদ, সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের নিতে হবে। ইতিহাস এদের নাম মনে রাখবে, এবং আজকের প্রজন্ম এদের ‘মীরজাফর’ হিসেবে চিহ্নিত করবে।”
সূত্র:https://tinyurl.com/4kktptat
আফরোজা