ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

মোহাম্মদ রফিকুল আমীন

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার ন্যাক্কারজনকভাবে দুদককে কাজে লাগাতে টর্সার সেল বানিয়েছিল

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ১৪ মে ২০২৫; আপডেট: ১৫:১৪, ১৪ মে ২০২৫

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার ন্যাক্কারজনকভাবে দুদককে কাজে লাগাতে টর্সার সেল বানিয়েছিল

ছবি: জনকণ্ঠ

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ন্যাক্কারজনকভাবে কাজে লাগাতো বলে অভিযোগ করে ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টির আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আমীন বলেছেন, দুদকে একটি টর্চার সেল ছিল এবং সেখানে চোখে কাপড় বেঁধে মুখে গরম পানি ঢেলে অমানুবিক নির্যাতন করা হতো। জোর খাটিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করে নিরীহ মানুষকে অবৈধভাবে শাস্তি দিতো প্রতিষ্ঠানটি। সমবায় আইনের ভঙ্গের অভিযোগকে শাস্তির আওতা বাড়ানোর জন্য মানি লন্ডানিংয়ের মতো বিষয়কে মামলার এজাহারে অন্তর্ভুক্তির ঘটনা ঘটেয়েছে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার। সারাদেশের নিরাপরাধ মানুষের মুক্তির জন্যেই বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি গঠন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।


বুধবার (১৪ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিট দ্যা রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন ড. মোহাম্মদ রফিকুল আমীন। এই সময়ে ড. মোহাম্মদ রফিকুল আমীন বলেন, সবাই জানে দুদক দুর্নীতি দমনের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমি দেখেছি এখানে দুর্নীতির আখড়া। এখানে যা হয় তা কল্পনাতীত। যত মামলা হয়েছিল আমার বিরুদ্ধে কোন সাক্ষী ছিল না। ২১৯ জন সাক্ষী করেছে সরকারি ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের। আমার মামলার রায় হওয়ার আগে সাজা খেটে ফেলেছি। আপনারা কেউ স্বপ্নেও জানেন দুদক নির্যাতন করতে পারে। কোন বিনিয়োগকারীই মামলার সাক্ষী ছিল না। কারণ তারা ক্ষতির শিকার হয়নি।


রফিকুল আমীন বলেন, যখন ডেসটিনি শুরুর পর সেটির সফলতা দেখে তখনকার ফ্যাসিস্ট সরকারের রোষানলে পড়ি। আমি সততার সর্বোচ্চ পন্থা নিয়ে ডেসটিনি শুরু করি। আমার প্রতি রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেয়। তারা যে মামলা করেছে সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল না। তবে আমি নিয়ম মেনে একটা সমবায় সমিতি করি। সেখানে তারা একটি অন্যায় বের করে। কারণ আমরা আইন সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। আইনে ৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করা যাবে না আমরা তার বেশি করেছিলাম। কিন্তু অন্যায় মেনে আবেদন করে সে ঝামেলা মেটানোর পরেও আমাকে দেওয়ানী মামলার পরিবর্তে ফৌজদারি মামলা দেওয়া হয় দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তার উৎসাহে। তারা বলেছিলেন আমার নামে মানি লন্ডারিং এর মামলা করা হবে। আমার সকল কার্যক্রমই মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ তোলা হয়।


তিনি বলেন, মুদ্রা পাচার আইন নাম থাকলেও আমাকে সেই আইনে আমাকে মামলা না দেখিয়ে ২০১২ সালের আইনে ফেলে দীর্ঘ কারাবাসের ব্যবস্থা করা হয়। আমাকে ২০০৯, ২০১২ সালের আইনে জড়িয়েছে আমাকে যা অন্যায়। এমনটি তারিখ পরিবর্তন করে দিয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে অনেক বড় সড়যন্ত্র করা করা হয়। ২০১২ সালে যখন একটি মামলার রায় হয় তখন জজ সাহেব বুঝতে পারলেন মামলাটা দুদক সাজিয়ে করেছে। তখন ওই সব কর্মকর্তাদের ডাকা হয় আদালতে তারা তখন পত্রিকার রিপোর্ট প্রমান দেয়। আর কোনো তথ্য প্রমান নেই আমার বিরুদ্ধে।


তিনি বলেন, আমাকে ১৬৪ ধারায় স্বাক্ষী দিতে বলেছিলেন। আমি দেইনি বলে আমার চেয়ারম্যানকে প্রচন্ড মারধর করে। দুদককে শয়তানের আখড়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওখানে একটা টর্চার সেল ছিল, সেখানে যা হতো তা যা কল্পনা করতে পারবেন না। দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। দুদক তো দুর্নীতি দমন করে। আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছে, আপনি যদি আমাদের কথা না শুনেন আপনার বউ বাচ্চা ধরে নিয়ে আসবো। আমি তাতে রাজি না হওয়ায় আমার বউকে আসামি করা হয়েছে। আমার বউ এখনো জেলে আছে। আমার দুইটা নাবালক বাচ্চা একা একা বারোটা বছর বড় হয়েছে। আমার বাচ্চাদের জবাব দিতে পারি না, তারা বলে আমার আম্মুকে নিয়ে আসো।  আমরা সবাই বাইরে। কিন্তু আমার স্ত্রী এখনো ছেলে আছে। আমার স্ত্রী ডেসটিনির সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাহলে আমার স্ত্রীর কি দোষ? শুনেছি ফেসিস্ট সরকারের দুদকের যে আইনজীবি ছিলেন একজন তিনি দূর থেকে কলকাঠি নাড়েন। এসব অবিচার জুলুমের প্রতিবাদ করতেই আজ রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি করব। আজকের আমজনগণ তারই অংশ।


তিনি বলেন, বিনা অপরাধে কত মানুষ জেল খাটছে। হাসিনার অত্যাচারে যারা বিনাদোষে জেলে গেছেন তারা এখনো বের হতে পারেনি। আমি সবাইকে কথা দিয়ে আসছি আমি রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি করব সেখানে আপনাদের কথা বলব। জামিন পাওয়া তো জন্মগত অধিকার তারা কেন জামিন পাবেন না। যে কোনো মামলায় ছয় মাসের বেশি চার্জশিট দিতে দেরি হয় তাহলে ওইসব আসামিদের জামিন দেওয়া হোক, এমন আইন তৈরি করা হোক।


তিনি বলেন, আমি ২৩ দিন ছিলাম দুদকে। আমাদের নির্যাতন হতো মনস্তাত্তিকভাবে নীচু করার। আমাদের লোকদের বলা হতো স্বাক্ষী হবা, নাকি আসামি হবা। তারা বলতেন, আমরা অন্যায় করিনি। ৪৫ বিনিয়োগকারীদের স্বাক্ষী রাখেনি। স্বাক্ষী হয়েছে সরকারি কর্মকর্তা, বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এভাবে ২১৯ জন স্বাক্ষী বানায়। আমি জানতে চাইলে বলে স্বাক্ষী নিতে নিতে সময় লাগবে। মামলা দীর্ঘায়িত করি। আমি বিনা দোষে সাজা ভোগ করেছি। আমাকে এক সময় প্রস্তাব দেওয়া হয়, বিদেশে চলে যান। আমি বলেছি আমি যাব না। কারণ আপনারা যা করবেন সেটা আমি জানি। আমাকে ক্রস ফায়ার করবেন। দুদকের কর্মকর্তারা তাকিয়ে ছিলেন সেদিন। তারা আবার অফার করে ডেসটিনি সব বন্ধ করে দেন এক সপ্তাহের মধ্যে জামিন দেব। আমি বললাম বিনিয়োগ কারিরা বেকার হয়ে যাবে। এরা সরকারকে ভোট দেবে না। তারা বলেন সরকার ভোটের চিন্তা করে না। এভাবে আমাদের রিমান্ড শেষ হয়। ‘আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, একদিন গণমাধ্যমের সামনে আসব এবং সবার কাছে সেই অন্ধকার, অপকৌশল তুলে ধরব। আজ সেই দিন এসেছে। আমি মানুষের পাশে দাড়াতে রাজনৈতিক দল গঠন করেছি।’


পার্টির নাম পরিবর্তন সম্পর্কে রফিকুল আমীন বলেন, আমজনতা নাম ছিল শুরুতে এটি ২০২২ সালে দেওয়া হয়। পরে ৫ আগস্টের পর আমজনতা দল নামে একটি দল এলো এরপর আমজনতা দলের নেতা তারেক রহমানের অনুরোধ করেন দলের নাম পরিবর্তনের জন্য। তিনি আমাকে হুমকি দেয় নাম পরিবর্তন না করলে এমন কোনো কাজ বাদ রাখব না যাতে আপনি বিরক্ত না হোন। তারপর তিনি বলেন আপোষে আপনারা এটা করেন। আমি প্রতিহিংসা না করে তাদের সম্মানে আমজনগণ পার্টি নামকরণ করা হয়।  রফিকুল আমীন আরও বলেন, আম জনগণ পার্টির নিবন্ধন পাওয়ার জন্য যেসব ক্যাটাগরি আছে, তা পূরণ করে ২২ শে জুন এর আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেবো।


তিনি বলেন, এই সরকার পরিবেশ বান্ধব, রাজনীতি বান্ধব। এ সরকারের সময়ে অনেক রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়েছে। যত বেশি দল তত বেশি মত প্রকাশের সুযোগ তৈরি হয়। এখনি সংসদে যাওয়ার মতো লক্ষ্য দেখছেন কীনা। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমরা মনে করি। আমি মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করতে এসেছি। ভবিষ্যতে কোনো জোট করবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আমার উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নেবে। আমি একটা ভোট দিতে পারি সেখানে। তিনি বলেন আপাতত জোটের কোনো চিন্তা নেই।


সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্ন জবাবে তিনি বলেন, আমি এখন কোনও ব্যবসা করি না। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু ছিল না। গত ১৩ বছর ব্যবসা থেকে দূরে আছি।  সরকারের বিভিন্ন মহলে বলেছি আমাকে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া হোক, কিন্তু আমাকে একটু দিচ্ছে না। আমায় রাজনীতি করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। ডেসটিনিতে যারা বিনিয়োগ করেছে, ওই টাকা ফেরত দেওয়ার মালিক ডেসটিনির বর্তমান বোর্ড। আমাকে যদি আবার পুনরায় ম্যানেজিং ডিরেক্টর করা হয়, তাহলে আমি মানুষের টাকা ফেরত দিতে পারব। সরকার ব্যাংক হিসাব খুলে দিলে তার পরের মাস থেকেই বিনিয়োগকারীদের টাকা দেওয়া শুরু হবে। আমি এখনো ম্যানেজমেন্ট দিয়ে ঢুকতে পারেনি। আমি ডেসটিনি বাদ দিয়ে কোন কোম্পানি করিনি। আমি নতুন একটি ই-কমার্স কোম্পানি করেছি। ডেসটিনির কোন ঋণ নেই কোন দায় নেই। ডেসটিনি গ্রুপের ছয় থেকে সাত হাজার কোটি টাকা সম্পদ আছে। এখানে দায়  আছে ৩ হাজার কোটি টাকা।


ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির আয়োজনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় মিট দ্যা প্রেসে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন। এর আগে শফিকুল আমীনের সংক্ষিপ্ত জীবনী উপস্থাপন করেন সোহেল। এ সময় তাকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করে রিপোর্টার্স ইউনিটি।

এসইউ

×