
.
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদন্ডে দন্ডিত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে গুজব ছড়িয়ে নাশকতা, তান্ডব ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে হতাহতের অভিযোগে দায়ের করা ১০৪ মামলার বিচার শেষ হয়নি গত ১০ বছরেও। এর মধ্যে হার্ট অ্যাটাকে গত ১৪ আগস্ট সাঈদী মারা যাওয়ার পর আবারও তান্ডব, নাশকতা ও নৈরাজ্য চালানোর অভিযোগে ১০ হাজার জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা যুক্ত হয়েছে তদন্তে। এসব মামলার আসামিদের অনেকেই জামিনে বের হয়ে গেছে। অনেক আসামি আদালতে হাজিরাও দিচ্ছে না। আদালতের খাতায় এসব আসামি পলাতক। পলাতক থাকা আসামিরা বিএনপি-জামায়েতের নেতাকর্মী ও সমর্থক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এখন আবার নতুন করে এসব আসামি রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নাশকতা, নৈরাজ্য চালিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে বলে পুলিশের দাবি।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৩ সালের ৩ মার্চ মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ঘটনায় ১০৪টি মামলা দায়ের হয়। পরে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির সময়ে যানবাহনে পেট্রোলবোমা হামলা, গাড়ি পোড়ানো, মানুষ হত্যাসহ নাশকতার আরও ১৪২টি মামলা দায়ের হয়। এই ২৪৬ মামলার বিচার কার্যক্রম ১০ বছরেও শেষ হয়নি।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, ’১৩ সালের ৩ মার্চ রাতে সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে বগুড়া জেলাজুড়ে একযোগে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। হামলা হয় বিভিন্ন থানা-ফাঁড়ি, উপজেলা পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়, আওয়ামী লীগের কার্যালয়, আওয়ামী লীগের নেতাদের বাসভবন, সরকারি দপ্তর ও রেলস্টেশনে। গান পাউডার ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয় নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের ১৬টি সরকারি দপ্তর এবং উপজেলা চেয়ারম্যান-ইউএনওর বাসভবন ও সরকারি গাড়ি। ১৪৪ ধারা ভেঙে এসব হামলা ও নাশকতা-সহিংসতার সময় গুলিতে নিহত হন ১৮ জন। এসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ৩৭ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে। অজ্ঞাত পরিচয়ের আসামি করা হয় লক্ষাধিক ব্যক্তিকে। তদন্ত শেষে বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, সরকারি কাজে বাধা এবং নাশকতার ধারায় ১০৪টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদে গান পাউডার ঢেলে ১৬টি কার্যালয় পোড়ানো, থানায় হামলা এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাসভবন পোড়ানোর ঘটনায় উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মন্ডলকে প্রধান আসামি করে চারটি মামলায় এক হাজার মানুষকে এবং অজ্ঞাত আরও প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে নুরুল ইসলাম ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে চার মামলায় ৬৪৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ ছাড়া সদর, শাজাহানপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় দায়ের হওয়া অন্য মামলায় তিন হাজার ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়। নাশকতার মামলায় দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গনি মন্ডল এবং শেরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দবিবুর রহমানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ গঠন করা হয়।
২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দায়ের হওয়া নাশকতার ২৪৬টি মামলার অভিযুক্ত আসামির সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। এসব মামলার প্রায় সব আসামি জামিনে রয়েছেন। জামিন নিয়ে আদালতে অনুপস্থিত সিংহভাগ আসামি।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সাইদীকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে নাশকতার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর ১০ বছরে সাক্ষ্য গ্রহণই শেষ না হওয়ায় বিচারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এসব মামলায় জড়িত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রয়োজন।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাঈদীর মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জামায়াত-শিবিরের চালানো তা-বের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, চকরিয়া, নওগাঁ, শিবগঞ্জ, ভাঙ্গুড়া, নিয়ামতপুর ও পেকুয়ায় বিভিন্ন ঘটনায় ১২টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় সাঈদীর ছেলেসহ কমপক্ষে ১০ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
দশ বছর আগের নাশকতার আরও ১৪২টি ও হরতাল-অবরোধে ২৪৬ মামলার বিচার কার্যক্রম ১০ বছরেও শেষ হয়নি। ওই সব মামলায় অন্তত ১৬ হাজার আসামি রয়েছে। এসব মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার, মামলার তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম কবে নাগাদ শেষ করা যাবে তা অনেকটাই অনিশ্চিত।