ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভাস্কর শামীম শিকদার আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ২২ মার্চ ২০২৩

ভাস্কর শামীম শিকদার আর নেই

শামীম শিকদার

দেশের শীর্ষস্থানীয় ভাস্কর একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী শামীম শিকদার আর নেই। টিএসসির বিখ্যাত ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’, ফুলার রোডের ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’সহ অনেক আইকনিক ভাস্কর্যের ¯্রষ্টা মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ... রাজিউন)। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। 
তিনি দুই সন্তান শান্তি ও সুইটিসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আলোচিত কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা সিরাজ সিকদার তার আপন বড় ভাই।
শামীম শিকদারের কিউরেটর ইমরান জনকণ্ঠে জানান, গত কয়েক মাস আগে দেশে এসে হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হন এই ভাস্কর। তাকে প্রথমে সরকারি হৃদরোগ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে মাস দুয়েক আগে ভর্তি করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সব শেষে ভর্তি হন গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে প্রায় এক মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। গত সপ্তাহে অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
পারিবারিক সূত্র জানায়, আপাতত মরদেহ হাসপাতালের মরচুয়ারিতে রাখা হবে। পরে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হতে পারে। একইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন জানিয়েছেন,  সাবেক শিক্ষকের মরদেহ আজ বেলা ১১টায়  চারুকলায় আনা হবে। এখানেও তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
দেশে ভাস্কর্য চর্চার ইতিহাসে আলোচিত নাম শামী শিকদার। ১৯৫৫ সালের ৯ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শিক্ষাজীবন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরে লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। মাঝে মধ্যে দেশে আসতেন। ঢাকায় নিউ ইস্কাটনের বাসায় অবস্থান করে ভাস্কর্য গড়ার কাজ করতেন তিনি। শামীম শিকদার ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বিখ্যাত ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ভাস্কর্যটির বেদিতে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ও নানা আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

২০০০ সালে ফুলার রোডে ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ নামে বিশাল ভাস্কর্য গড়েন তিনি। একই স্থানে দেশের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বদের ভাস্কর্য নিয়ে একটি উদ্যান গড়ে তোলেন। তারও আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হলে স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্যসহ বেশ কিছু কাজ করে আলোচনায় আসেন। ভাস্কর্য চর্চা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে মৌলবাদীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন তিনি। একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন। তবু মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতিবাদী চিন্তা থেকে কাজ করে গেছেন।

×