জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় নৌবাহিনীর যৌথ নৌ কমান্ডোর বিভিন্ন অপ্রকাশিত ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত বই ‘অপারেশন এক্স’ বাংলায় প্রকাশ হয়েছে। রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে বাংলা বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ৪৮ বছর ধরে অপ্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের এসব বীরত্ব গাঁথা প্রথম ইংরেজীতে প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। ‘অপারেশন এক্স’ বইটির মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় নৌযোদ্ধাদের অপারেশনের বর্ণনা প্রথম সামনে আসে। ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তা প্রয়াত ক্যাপ্টেন এমএনআর সামন্তের ব্যক্তিগত নোট এবং অপারেশনে অংশ নেয়া ভারতীয় নৌসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে বইটি সংকলিত হয়েছে। বইটির সহ লেখক প্রয়াত এমএনআর সামন্ত ও সাংবাদিক সন্দীপ উন্নিথান। বইটির বাংলা অনুবাদ করেছেন যশোদা জীবন দেবনাথ। খবর বিডিনিউজের।
ইংরেজী বইটি প্রকাশ করে হারপারকলিন্স পাবলিকেশন্স। বাংলায় প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের বইপত্র প্রকাশন। বইটির সহ লেখক প্রয়াত এমএনআর সামন্ত ভারতীয় নৌবাহিনীর হয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গোপন এ অপারেশনের নেতৃত্বে ছিলেন। অপারেশনটির পরিকল্পনা করেছিলেন তৎকালীন ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান এ্যাডমিরাল এসএম নন্দা ও ক্যাপ্টেন (পরবর্তীতে ভাইস এ্যাডমিরাল) মিহির কে রায়। এ অভিযানের অংশ হিসেবে ৪৫০ জনেরও বেশি নৌ কমান্ডোকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ করানো হয়।
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য। তাদের সহযোগিতা ছাড়া এত দ্রুত পাকিস্তানী বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করানো যেত না।
তিনি বলেন, কলকাতার আট নম্বর থিয়েটার রোড থেকে আমাদের সরকার পরিচালনা হতো। সেখানে একটা মিউজিয়াম করতে চাই। এ ব্যাপারে ভারতের সহযোগিতা দরকার।
যেখানে আমাদের সেক্টর কমান্ডের হেডকোয়ার্টার ছিল, সেখানে পাঁচ কাঠা করে জমি দিলে একটা স্মৃতিস্তম্ভ করতে পারি। যেখানে শরণার্থী শিবির ছিল সেখানে ফলক করতে পারি। অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, অপারেশন এক্স দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিশ্বে পরিচালিত বৃহত্তম গোপন অভিযান।
বাংলা বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে নিজেদের মুক্তিযুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন অপারেশন জ্যাকপটের নৌ কমান্ডোদের দলনেতা কমোডর (অব) আব্দুল ওয়াহেদ (এ ডব্লিউ) চৌধুরী বীর উত্তম, লে. কমান্ডার মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বীর উত্তম, ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা কমান্ডার ভি কে রায় যাদব।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, বইটির সহ লেখক সন্দীপ উন্নিথান বক্তব্য রাখেন।
কোরিয়ার গল্প ও কবিতা বিষয়ক বইয়ের আলোচনা ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, শিল্পের মতোই সাহিত্যেরও নেই কোন সীমানা। প্রকৃত পাঠকের কাছে স্বদেশের পাশাপাশি ভিন্ন ভাষার সাহিত্যের প্রতি রয়েছে বিশেষ অনুরাগ। ভিন্নতার স্বাদে ভিনদেশী গল্প কিংবা কবিতার প্রতি রয়েছে বিশেষ টান। সেই সুবাদে দক্ষিণ কোরিয়ার সাহিত্যকে এদেশের বইপ্রেমীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে গড়ে ওঠা এক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান উজান। প্রকাশনা সংস্থাটির আয়োজনে সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার গল্প ও কবিতাবিষয়ক দুটি বই নিয়ে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। হেমন্তের বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনায় বক্তারা বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে শিল্প-সাহিত্যের পাশাপাশি সংস্কৃতির ভূমিকা অনন্য।
ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ সম্পাদিত ‘কোরিয়ার গল্প’ ও ছন্দা মাহবুব অনূদিত কোরিয়ার কবিতা’ এই বই দুটি নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। একইসঙ্গে গ্রন্থ দুটি নিয়ে সারাদেশের পাঠকদের মধ্যে অনুষ্ঠিত পাঠ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এতে তিনজন বিজয়ী ঘোষণা করা হয় এবং দশজনকে নির্বাচিত করা হয়। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজয়ী ও নির্বাচিতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কিউন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কে এম খালিদ বলেন, দেশের মানুষের জ্ঞানের ভা-ার এবং চেতনার জড়তাকে সমৃদ্ধ করার জন্য শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও ভাবের আদান-প্রদানের কোন বিকল্প নেই। অন্যের ধর্ম-বর্ণ ও সংস্কৃতির প্রতি বিদ্বেষ নিয়ে কোন জাতি বড় হতে পারে না। হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভূমিকা অনন্য। অর্থনীতির দিক থেকে সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি একটি দেশকে সংস্কৃতিতেও সমৃদ্ধ হওয়া জরুরী। দুই দেশের সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরে অনুষ্ঠানে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত এই ধরনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
প্রতিযোগিতার বিজয়ী ও নির্বাচিতদের লেখাগুলো বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার পত্রপত্রিকা কিংবা সাময়িকীতে বাংলা, ইংরেজী ও কোরিয়ান ভাষায় প্রকাশ করা হবে বলেও জানিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান উজানের সমন্বয়ক সুলতান আহম্মেদ। গ্রন্থপাঠ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন সরোজ মোস্তফা, দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন ইলিয়াস বাবর ও তৃতীয়স্থান অর্জন করেছেন মাজেদা মুজিব। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকাীরদের পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয় ২০ হাজার, ১৫ হাজার ও ১০ হাজার টাকার চেক। আর নির্বাচিত প্রত্যেককে প্রদান করা হয় ৫ হাজার টাকার বই কুপন। নির্বাচিত দশজন হলেন- মিলু হাসান, জাহিদ সোহাগ, সিরাজুম মুনিরা, সম্প্রীতি মল্লিক, অলাত এহসান, হারুন সুমন, রুম্মানা জান্নাত, ফাহাদ হোসেন, হাসান জামিল ও আবিদা তাহনি প্রমি।