স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণার অভিযোগে মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, জালিস মাহমুদ (৩২) ও অমল জয়ধর (৪১)। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ১০ লাখ টাকা, ৭১টি পাসপোর্ট, মালয়েশিয়ার ১১টি জাল ভিসা, ফ্রান্সের তিনটি জাল ভিসা, বিএমইটি ছাড়পত্রের ভুয়া ২৪টি ফটোকপি, আটটি ভুয়া মেডিক্যাল সার্টিফিকেট ও ১০টি ভুয়া বিমান টিকেট জব্দ করা হয়। তারা অনুমোদন ছাড়াই রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবসা খুলে বসেছিল। এর মাধ্যমে তারা ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে মানব পাচারের কাজ করত। এভাবে প্রায় ৬৭ লাখ টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে তারা। সোমবার ভোরে রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে সিআইডি ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের একটি টিম। এদিন দুপুরে মালিবাগে সিআইডি প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক এসব তথ্য জানান।
অতিরিক্ত ডিআইজি জানান, এস এম এন্টারপ্রাইজ নামে ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সি পরিচালনা করে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক জালিস মাহমুদ ও ফিল্ড অফিসার অমল জয়ধরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান রিপন মাহমুদ এখনও পলাতক। তাকে ধরতে অভিযান চলছে। বর্তমানে বনানীতে প্রতিষ্ঠানটির ভাড়া করা রুম থাকলেও নেই কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী। সবাই গা ঢাকা দিয়েছে। শেখ ওমর ফারুক জানান, রিক্রুটিং লাইসেন্স না থাকলেও ২০১৮ সাল থেকে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা করে আসছিল এস এম এন্টারপ্রাইজ নামের রিক্রুটিং এজেন্সি। তিনি জানান, বিদেশে লোক পাঠানোর নামে এই চক্রটি ২০১৯ সালের মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৬৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২৫ জন ভুক্তভোগী সিআইডিতে অভিযোগ দায়ের করেছে। তিনি বলেন, বিদেশ যেতে ইচ্ছুক স্বল্পশিক্ষিত লোকজনদের টার্গেট করে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে ভিসা যাচাই প্রক্রিয়া দেখাতো ভুক্তভোগীদের। তৈরি করত জাল টিকেট-ভিসা। এমনকি বিএমইটি কার্ডও জাল করত তারা। তাদের একটি অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ টিম রয়েছে। স্বল্প সময়ে লোকজনদের প্রতারিত করত। তবে বিএমইটি কার্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কারও যোগসূত্র রয়েছে কিনা। তাও খতিয়ে দেখছে সিআইডি। এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক জানান, ভুক্তভোগীরা এজেন্সিকে টাকা দিয়ে তা ফেরত নেয়ার জন্য বারবার ওই প্রতিষ্ঠানের লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তারা। কিন্তু এজেন্সি টাকা ফেরত দেয়ার জন্য বরাবরই সময় নিয়েছে। এই কারণে তারা একবছর পর মামলা করেছে। এছাড়া ভুক্তভোগীরা স্বল্পশিক্ষিত হওয়ায় আইনী প্রক্রিয়ায় কীভাবে যেতে হবে সে বিষয়ে তাদের ধারণা কম ছিল। পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকজন মানব পাচারকারী গ্রেফতারের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় সেই পরিপ্রেক্ষিতে তারা আইনগত ব্যবস্থা নেয়। অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, বিদেশের লোক পাঠিয়ে প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। যত ক্ষমতাধর হোক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।