ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাফুফে নির্বাচন আজ

প্রকাশিত: ২২:০৯, ৩ অক্টোবর ২০২০

বাফুফে নির্বাচন আজ

রুমেল খান ॥ যে ঘটনাটা ঘটতে পারত গত ২০ এপ্রিল, সেটা এখন ঘটতে যাচ্ছে সাড়ে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় পর। ঘটবে আজ শনিবার। সময় দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। স্থান ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন বহুল আলোচিত ও প্রতাশিত একটি নির্বাচনের কথাই বলা হচ্ছে। বাফুফের নির্বাচন। বাফুফে মানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই নির্বাচন। এই নির্বাচন অন্য সব নির্বাচনের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন। ২১ পদের জন্য ৪৭ প্রার্থীর জমজমাট লড়াই হবে আজ। নির্বাচনের আগে একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে বাফুফের বার্ষিক সাধারণ সভা। নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশে বইছে টান টান উত্তেজনা। চলছে ক্রীড়ামোদীদের মাঝে আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক। কেউ বলছেন কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ‘সম্মিলিত পরিষদ’ই এই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ফের ক্ষমতার মসনদে বসবে। অন্যরা বলছেন- শেখ মোঃ আসলামের নেতৃত্বাধীন ‘সমন্বয় পরিষদ’ই এবার চমক দেখিয়ে বাজিমাত করবে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সভাপতি পদটি নিয়ে। এ পদে প্রার্থী তিনজন। প্রথমজন কাজী সালাউদ্দিন, যিনি এই পদে গত একযুগ ধরেই আছেন এবং বেশিরভাগ সময়ই প্রবল সমালোচনা মাথায় নিয়ে। দ্বিতীয়জন তো থেকেও নেই। বাদল রায়। গত একযুগ সহ-সভাপতি পদে থাকা বাদল অসুস্থতা ও পারিবারিক কারণে নির্বাচন থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিলেও সেটা নিয়মমাফিক হয়নি বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। ফলে ব্যালট পেপারে তার নাম থাকছেই। তৃতীয়জন স্বতন্ত্র প্রার্থী- সাবেক ফুটবলার, সাবেক ডাকসু সভাপতি ও বর্তমানে ফুটবল কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। মানিক নিজেকে অভিহিত করেছেন ‘ওয়ান ম্যান আর্মি টিম’ হিসেবে। ফলে সভাপতি পদে মূলত লড়াই হবে সালাউদ্দিন বনাম মানিকের। আগের মেয়াদে বাংলাদেশ ২০২২ বিশ্বকাপে খেলবে বলে যে আশা দেখিয়েছিলেন এবার তেমন কোন আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখাচ্ছেন না বাস্তবতা বোঝা সালাউদ্দিন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশ ফুটবল দলের র‌্যাঙ্কিংয়ের উন্নতি ঘটানো। সাম্প্রতিক সময় তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব সমালোচনা হয়েছে ও প্রেসক্লাবে প্রতিবাদ সভা-মানববন্ধন হয়েছে, সেগুলো প্রথমে তিনি পাত্তা দিতে না চাইলেও পরে তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। ফলে বাফুফে সেসব আন্দোলনকারীদের প্রতি হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে আইনী নোটিস জারি করে। সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার জন্যই আমার আবারও সভাপতি পদে আসা দরকার। তাছাড়া আমি চলে গেলে বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস হয়ে যাবে। এটা রোধ করার জন্য আমাকেই দরকার।’ মানিকের ভাষ্য, ‘প্যানেলের বাইরে যোগ্য প্রার্থী আছেন যারা ভাল কাজ করতে সক্ষম। আমি নিজেকে যোগ্য মনে করেই সভাপতি পদে নির্বাচন করছি। ফুটবলকে আমি ভালবাসি, সেই জায়গাটাতে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। এখানে বসে যাওয়ার তো কোন অবকাশ নেই।’ সালাউদ্দিনের সম্মিলিত পরিষদ ৩৬ দফা, স্বতন্ত্র সভাপতি প্রার্থী মানিক ২১ দফা এবং সমন্বয় পরিষদ ২৪ দফার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি (ইশতেহার) ঘোষণা করেছে। সবার প্রতিশ্রুতি প্রায় একই ধরনের। তেমন নতুনত্ব নেই। সম্মিলিত পরিষদ ২১টি পদের প্রতিটিতে প্রার্থী দিয়েছে, সেখানে সমন্বয় পরিষদ প্রার্থী দিয়েছে ১৯ পদে, অর্থাৎ দুটি পদে কম। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে বাফুফের বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে যারা এত সরব অথচ সেই সভাপতি পদেই সমন্বয় পরিষদ কোন প্রার্থী দিতে পারেনি। এছাড়া ৪টি সহ-সভাপতি পদে তারা প্রার্থী দিয়েছে একজন কম, মানে তিনজন। দুটি শীর্ষ পদের একটিতে কোন প্রার্থীই নেই, আরেকটি একজন প্রার্থী কম। সমন্বয় পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রার্থী শেখ মোঃ আসলাম বলেন, ‘আমাদের প্যানেলে যারা আছেন তারা পরীক্ষিত সৈনিক। জেলা-বিভাগ ও ক্লাবের প্রতিনিধিরা আছেন। আগেও তারা পাস করে এসেছেন। এবারও আশা করছি জিতবেন।’ নীরব ভোট-বিল্পবের প্রত্যাশায় আসলাম-মহির সমন্বয় পরিষদ। ব্যালটের মাধ্যমে তৃণমূলের সংগঠকরা গত একযুগের বঞ্চনার জবাব দেবেন বলে অভিমত প্যানেলের সহ-সভাপতি প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ মহি। যদিও ভোটের মাঠে অবৈধ অর্থ লেনদেনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। পরিবর্তনের ডাক দিয়ে কাউন্সিলরদের মন জয় করতে তার সমর্থিত সমন্বয় পরিষদ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন। সালাউদ্দিনের মতো বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ খেলানোর স্বপ্ন দেখিয়েছেন আরেকজন। তিনি আতাউর রহমান মানিক। এবারের নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী। সালাউদ্দিন-সালামের নেতৃত্বধীন সম্মিলিত পরিদের প্যানেলে আছেন তিনি। তবে তিনি বেশ সাবধানী লোক। সালাউদ্দিনের মতো কোন সালকে লক্ষ্য হিসেবে নেননি। তার মতে সঠিক পরিকল্পনা করে এগুলো কোন একদিন হয়তো বিশ্বকাপেও খেলবে বাংলাদেশ। তবে সমন্বয় পরিষদ থেকে সভাপতি প্রার্থী না থাকলেও একেবারে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না বাফুফের গেল তিনবারের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ভোটের ময়দানে আছেন শফিকুল ইসলাম মানিক। যদিও মানিককে বলা হচ্ছে সালাউদ্দিনের ডামি প্রার্থী, এমন গুঞ্জন বাতাসে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। চার বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা নেই মানিকের। দুই নৌকায় পা রেখেও চলতে চান না তিনি। বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হলে পূর্বের পেশা থেকে চিরতরে ছুটি নেবেন। তবে এই ৪ বছরে মনে রাখার মতো কাজ করে যেতে চান। ভিশন ২০৩৩ যে লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনী ময়দানে এসেছেন তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে চান। ২০৩৩ সালে একটি শক্তিশালী অলিম্পিক দল (অনুর্ধ-২৩) গঠন করতে চান তিনি। যারা আগামীতে বৈশ্বিক আসরগুলোতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। এদিকে সহ-সভাপতি হিসেবে আগেরবারের মতো এবারও স্বতন্ত্রভাবে অংশ নিচ্ছেন তাবিথ আওয়াল। সম্মিলিত পরিষদ ॥ সভাপতি : কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি : আবদুস সালাম মুর্শেদী, সহ-সভাপতি : কাজী নাবিল আহমেদ, আমিরুল ইসলাম বাবু, ইমরুল হাসান, আতাউর রহমান মানিক; সদস্য : হারুনুর রশিদ, শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর, সত্যজিৎ দাশ রুপু, ইলিয়াছ হোসেন, বিজন বড়ুয়া, অমিত খান শুভ্র, ইকবাল হোসেন, মাহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম, জাকির হোসেন, মাহফুজা আক্তার কিরণ, আসাদুজ্জামান মিঠু, কামরুল হাসান হিলটন, সৈয়দ রিয়াজুল করিম, ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ ও নুরুল ইসলাম নুরু। সমন্বয় পরিষদ প্যানেল ॥ সিনিয়র সহ-সভাপতি : শেখ মোঃ আসলাম, সহ-সভাপতি : মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, এসএম আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদুয়ান, শেখ মোঃ মারুফ হাসান; সদস্য : ইমতিয়াজ সুলতান জনি, ফজলুর রহমান বাবুল, হাসানুজ্জামান খান বাবলু, সাইফুল ইসলাম, শাকিল মাহমুদ চৌধুরী, আরিফ হোসেন মুন, আমের খান, সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল, সাব্বির হোসেন, আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, টিপু সুলতান, আ ন ম আমিনুল হক মামুন, মঞ্জুরুল আহসান, মহিদুর রহমান মিরাজ ও মিজানুর রহমান মিজান। সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ॥ শফিকুল ইসলাম মানিক। সহ-সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ॥ তাবিথ আওয়াল।
×