ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজবে নাশকতা-৭ বছরেও বিচার হয়নি

প্রকাশিত: ১১:০৯, ৫ মার্চ ২০২০

সাঈদীকে চাঁদে দেখার  গুজবে নাশকতা-৭ বছরেও বিচার হয়নি

শংকর কুমার দে ॥ চাঁদে সাঈদীর চেহারা দেখা গেছে বলে গুজব ছড়িয়ে খুন, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ ফাঁড়ি লুট, পুলিশের গাড়িতে আগুন, সড়ক-মহাসড়কের গাছ উপড়ে ফেলে সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালানোর ঘটনার মামলার আসামিদের দীর্ঘ সাত বছরেও বিচার হয়নি। সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে গুজব ছড়িয়ে বগুড়া, রাজশাহী, নাটোর, জয়পুরহাট, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রামসহ ৩৪ জেলায় ব্যাপক সহিংসতায় ৭৮ জন নিহত হয়। এই ঘটনায় ৫৬ মামলা হয়। এর মধ্যে ৫২টির চার্জশীট দেয়া হয়েছে। অপর ৪ মামলার ফাইন্যাল রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এসব মামলার আসামি লক্ষাধিক। আসামিদের সবাই প্রায় বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের কর্মী-ক্যাডার বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে মৃত্যুদ-ের আদেশ দেয়া হয়। এই আদেশের খবর শোনানোর পর, সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে গুজব ছড়িয়ে বগুড়া, রাজশাহী, নাটোর, জয়পুরহাট, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রামসহ ৩৪ জেলায় ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সহিসংতার প্রথমদিনেই ২২ জন নিহত হয়। শুধু বগুড়াতেই নিহত হয় ১১ জন। এই সহিংসতায় সর্বমোট ৭৮ জন নিহত হন? পুলিশ ফাঁড়ি ও পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়া ছাড়া তার প্রত্যন্ত অঞ্চলে উপজেলা কার্যালয়েও হামলা করে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩ মার্চ রাত ২টার পর বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ায় যে, সরকার সাঈদীকে গোপনে ফাঁসি দিয়েছে। এরপর তাকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে। তারা মসজিদের মাইকে এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এমন গুজব ছড়িয়ে ধর্মভীরু জনগণকে ঘর থেকে ডেকে বাইরে আনে। ফজরের নামাজের পর লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে জামায়াত ও বিএনপির শত শত সন্ত্রাসী মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাণিজ্যমেলা, স্টেশন, সদর থানা, ফুলবাড়ি, উপশহর, নারুলী, কৈগাড়ি ও স্টেডিয়াম ফাঁড়ি, মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া, বগুড়া সদর থানার অস্ত্রাগার ও আশেপাশের মার্কেটগুলোতে লুটপাটের চেষ্টা করে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, রাকসুর সাবেক ভিপি হায়দার আলীর বাড়ি ভাংচুর, দুপচাঁচিয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি মিজানুর রহমান সেলিম খানের বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ, এসএ পরিবহনের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, টাকা লুট, করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, সদর থানা ও শাজাহানপুর থানায়ও তারা হামলা চালায়। ইট ফেলে রাস্তা অবরোধ করা হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় নন্দীগ্রাম উপজেলায়। নন্দীগ্রাম থানা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসসহ ১৫টি অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িতে আগুন দেয়। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহর বাড়িতে ভাংচুর ও আগুন দেয়া হয়। শুধু এ উপজেলায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল। বিভিন্ন স্থানে কাঠের গুঁড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। বিআরটিসির বাস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সাবগ্রামে রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়েছিল। শাজাহানপুরের ফটকি সেতুর রেলিং ভেঙ্গে ফেলা হয়। ক্যাডাররা শহরের সাতমাথাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। জানমাল ও সরকারী সম্পদ রক্ষায় গুলিবর্ষণ করলে নারীসহ হামলাকারীদের ১৩ জন নিহত হয়েছিল। সন্ত্রাসীদের হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শহর ও কয়েকটি উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, এসব ঘটনায় ৯৪ হাজার জনকে আসামি করে পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্তরা ৫৬ মামলা করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ৫২ মামলায় দুই হাজারের বেশি আসামির বিরুদ্ধে চার্জশীট দিয়েছেন। অবশিষ্ট মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। চাঁদে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চেহারা দেখা গেছে বলে গুজব ছড়িয়েছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। ২০১৩ সালের ৩ মার্চ রাত ১২টার পর সাতকানিয়ায় সদরসহ আশপাশের এলাকার বেশির ভাগ মসজিদ থেকে সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে বলে একযোগে মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন।
×