ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

তাঁকে মুক্ত করতে না পারা দুর্ভাগ্যজনক ॥ ফখরুল

একদিন পর খালেদার জন্মদিন পালন করেছে বিএনপি

প্রকাশিত: ১০:৩১, ১৭ আগস্ট ২০১৯

 একদিন পর খালেদার জন্মদিন পালন করেছে বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একদিন পর ১৬ আগস্ট দলের কারাবন্দী চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ৭৫তম জন্মদিন পালন করেছে বিএনপি। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস থাকায় পূর্ব ঘোষণা অনুসারে শুক্রবার দেশব্যাপী এ কর্মসূচী পালন করে দলটি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দুপুরে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সন্ধ্যায় গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আক্ষেপ করে বলেন, খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করতে না পারা আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা তাঁর মুক্তির জন্য এখন পর্যন্ত কিছুই করতে পারিনি। ফখরুল বলেন, ঈদের পর সারাদেশের চামড়া রাজধানীতে আসে। চামড়া শিল্পের মাধ্যমে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে দেশের চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এর আগে যেভাবে পাট শিল্পকে ধ্বংস করা হয়েছিল সেভাবেই চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করা হচ্ছে। দেশকে পরনির্ভরশীল করার জন্যই তা করা হচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আইন আদালতের ভূমিকা কি সেটা আমরা জেনে গেছি। তবে আইনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না। আমাদের সুসংগঠিত হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমেই তাঁকে মুক্ত করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। তাই আসুন এই দিনে খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু কামনা করে তাঁর মুক্তির জন্য নিজেদের সংগঠিত করি ও আন্দোলন বেগবান করি। তাঁর জন্মদিনে এটাই হোক আমাদের শপথ। দেশের গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করা হয়েছে বিচার বিভাগের। আজকে বিচার বিভাগের কোন স্বাধীনতা নেই। বর্তমান সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে এদেশের রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে এবং খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেছে। অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের জন্য তিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। তিনি রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, একজন গৃহবধূ হিসেবে রাজনীতি সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ছিলেন। তবে তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয়েছে রাজপথে। তিনি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করে আন্দোলন করেছেন। রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি শুধু কারাবরণই করেননি, তার সবচেয়ে প্রিয়জনদের হারিয়েছেন। ফখরুল বলেন, এবার ঈদের দিন থেকেই সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে কম দামে চামড়া কেনার অভিযোগ আসতে থাকে। ট্যানারি মালিকরা বকেয়া থাকা টাকা দেননি এমন যুক্তি দেখিয়ে আড়তদাররা চামড়া কেনা বন্ধ রাখলে সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করে। তিনি বলেন, চামড়া সংরক্ষণের নিজস্ব কোন ব্যবস্থা ফড়িয়া আর মৌসুমী ব্যবসায়ীদের থাকে না। ফলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নামমাত্র দামে চামড়া কিনেও পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে না পেরে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। দিনাজপুরে কাঁচা চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বাজারে ফেলে চলে যান মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামেও লাখ খানেক পশুর চামড়া সড়কে ফেলে দেয়া হয়, পরে সেগুলো সরিয়ে মাটিচাপা দেয় সিটি কর্পোরেশন। ফখরুল বলেন, কার স্বার্থে কাঁচা চামড়া রফতানির কথা বলা হচ্ছে। কাঁচা চামড়া রফতানি করা হলে এ শিল্পটি ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মুক্ত থাকলে দেশের অর্থনীতিকে এভাবে ফোকলা করে ফেলা সম্ভব হতো না। এ কারণেই তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর অনেকেই মনে করেছিলেন বিএনপি ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু খালেদা জিয়াই তখন সামনে এসে বিএনপির পতাকাকে তুলে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ বছর দায়িত্ব পালনের সময় খালেদা জিয়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন। নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, শওকত মাহমুদ, নিতাই রায় চৌধুরী, ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, মহিলা দলের সাবেক সভাপতি নুরী আরা সাফা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, তাঁতী দলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ। মিলাদ ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ওলামা দলের নেতা মাওলানা রফিকুল ইসলাম।
×