ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের এক সপ্তাহ আগেই সড়ক মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ১০ মে ২০১৯

 ঈদের এক সপ্তাহ আগেই সড়ক মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

গাফফার খান চৌধুরী ॥ যানজটের ভোগান্তি কমাতে ঈদের এক সপ্তাহ আগেই সড়ক মহাসড়কে স্থায়ীভাবে মোতায়েন করা হচ্ছে বাড়তি পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন, আনসার, ট্রাফিক পুলিশ ও গোয়েন্দাদের। ইতোমধ্যেই মহাসড়কের অর্ধশত যানজটপ্রবণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্থানে কোন প্রকার যানবাহন দাঁড়াতে দেয়া হবে না। এসব স্পটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকছে সবচেয়ে বেশি। যানবাহন স্বল্প সময়ের জন্য নির্ধারিত জায়গায় দাঁড়াতে পারবে। যানজটপ্রবণ স্পটগুলোতে ইতোমধ্যেই সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে, যাতে দূর থেকেই যানজট পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম তথ্য পাওয়া যায়। ওই তথ্য মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্দেশ অমান্যকারী যান চালককে জেল জরিমানাসহ রুট পারমিট বাতিলেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি যানজটরোধে সড়ক-মহাসড়কের পাশে থাকা অস্থায়ী ছোট বড় বাজার বা হাট ও অন্যান্য ভাসমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বসতে দেয়া হচ্ছে না। যানজট নিরসনে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া কোন নিত্যপণ্যবাহী যানবাহনে তল্লাশি না করার নির্দেশও জারি হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ঈদে সড়ক-মহাসড়কে নিরাপত্তা ও যানজট সহনীয় রাখার বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। রাজধানীর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার মাধ্যমে দেশের সবকটি জেলা যাতায়াতের দিক থেকে জল ও স্থল পথে সংযুক্ত। এ তিনটি জেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের সড়ক মহাসড়কের যানজটপ্রবণ এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন যান চলাচল নিশ্চিত করতে পারলে দেশের অন্যান্য জায়গায় যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হবে। এজন্য এই তিন জেলায় দায়িত্বরত নীতি নির্ধারকদের জনদুর্ভোগ কমাতে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের ১১ হাজার ৮০৬ কিলোমিটার মহাসড়কে অন্তত অর্ধশত যানজটপ্রবণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার মহাখালী, আব্দুল্লাহপুর, সায়েদাবাদ, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, কদমতলী, শনির আখড়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ব্রিজ, চট্টগ্রামের মীরসরাই, ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি, ফতুল্লা, শ্যামপুর, কুমিল্লার দাউদকান্দি ব্রিজ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, যমুনা সেতুর পূর্বপাড়, এলেঙ্গা, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, ঢাকা-মাওনা ফেরিঘাটসহ অন্তত ৩০ স্পট মারাত্মক যানজটপ্রবণ। এসব স্পটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে। এসব মারাত্মক যানজটপ্রবণ স্থানে ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকেই মোতায়েন করা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। মহাসড়কগুলোর যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশ সমন্বয় করে কাজ করবে। রাস্তায় বিকল হয়ে পড়া যানবাহন সরাতে অতিরিক্ত রেকার রাখা হচ্ছে। থাকছে এ্যাম্বুলেন্স। গাড়ির গতিসীমা মাপার জন্য স্পিড গান নিয়ে রাস্তায় থাকছে পুলিশ। হাইওয়ে পুলিশের তথ্য মোতাবেক, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর ও রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কুড়িটি মাঝারি ধরনের যানজটপ্রবণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এর বাইরে কয়েকটি জেলা শহরে প্রায় দশটি হালকা যানজটপ্রবণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। যানজটপ্রবণ এসব স্থানে মেরামত করার পাশাপাশি সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েনের বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। ঈদের পরে কমপক্ষে এক সপ্তাহ পর্যন্ত ওসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন থাকবে। যানবাহন দাঁড়ানোর জন্য সড়ক-মহাসড়কে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক স্থান যানবাহন দাঁড়ানোর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাস্তার ওপর বা যত্রতত্র কোন যানবাহন থামতে দেয়া হবে না। ফেরিঘাটগুলোয় ফেরিতে নিয়মতান্ত্রিক যান পারাপারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশ তদারকি করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের যথাযথ কর্তৃপক্ষ ছাড়াও প্রতিটি ফেরিঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন থাকবে। যানজটের পাশাপাশি সড়ক-মহাসড়কের অপরাধ রোধে বাস, লঞ্চ ও ট্রেন স্টেশনগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, ছোঁ পার্টি ও ছিনতাইকারীদের তৎপরতা রোধে সর্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা থাকছে। যাত্রীদের সচেতনতা বাড়াতেও সবটার্মিনালে নানামুখী প্রচার চালানো হচ্ছে। মহাসড়কে পরিবহন ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানি বন্ধে টহল জোরদার করা হয়েছে। চিহ্নিত অপরাধপ্রবণ স্পটে বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ ছিনতাই স্পটগুলোয় পুলিশ ও র‌্যাবের মোটরসাইকেল টহল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স সর্বক্ষণিক টহল থাকবে। মহাসড়কের চিহ্নিত ডাকাতদের ছবিসহ তালিকা প্রতিটি বাস টার্মিনালে টাঙানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মাদকাসক্ত চালক, হেলপার, দ্রুত গতির যান ও অতিরিক্ত ওজন নিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহন চিহ্নিত করতে সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি থাকছে চেকপোস্ট, বাড়তি টহল ব্যবস্থা, স্পিড গান ও এ্যালকোহল ডিটেক্টর। হাইওয়ে পুলিশ সূত্র মতে, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পুলিশ সদর দফতর, জেলা পুলিশ, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতি এবং হাইওয়ে পুলিশের মধ্যে এসব বিষয়ে আগাম বৈঠক হচ্ছে। বৈঠকের মূল এজেন্ডাই হচ্ছে ঘরে ফেরা মানুষের দুর্ভোগ কিভাবে লাঘব করা যায়, সে বিষয়টি। মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ভুয়া চালক, ফিটনেসবিহীন যান, মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো, বেপরোয়া গতি ও রাস্তার খানাখন্দ। ভুয়া চালক ও ফিটনেসবিহীন যান ধরতে বিআরটিএ এবং হাইওয়ে পুলিশের অভিযান চলছে। আর মাদকাসক্ত চালকদের শনাক্ত করতে এ্যালকোহল ডিটেক্টর নিয়ে হাইওয়ে পুলিশ থাকছে রাস্তায়। কোন গাড়ির গতি অস্বাভাবিক মনে হলেই স্পিড গান দিয়ে গাড়ির গতি মাপা হচ্ছে। বুয়েটের (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) এক্সিডেন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিসেব অনুযায়ী সারাদেশের সব মহাসড়কে বর্তমানে দেড় শতাধিক ব্ল্যাকস্পট (দুর্ঘটনাপ্রবণ) স্থান আছে। আগে ছিল ২০৮। প্রতিবছর গড়ে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। আর হাইওয়ে পুলিশের হিসাব মতে, মৃত্যুর পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে গড়ে অন্তত ২০ হাজার মানুষ আহত হন। আহতদের মধ্যে গড়ে অন্তত ৫ হাজার মানুষকে চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়। মহাসড়কে দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। উচ্চ আদালত মহাসড়কের আশপাশের ১০ মিটার পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু ওই নির্দেশনা এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে হাইওয়েতে যানজট সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। হাইওয়ে পুলিশ প্রধান মোঃ আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, ঈদে মানুষের ঘরে ফেরা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রম আরও বাড়ানো হয়েছে। যানজটপ্রবণ স্থানগুলোর ক্ষেত্রে বাড়তি নজরদারি রাখা হচ্ছে।
×