ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন সামিটে পরিকল্পনামন্ত্রী

ডিজিটাল দুর্নীতিবাজরা স্মার্ট- সবাইকে কান খাড়া রাখতে হবে

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ডিজিটাল দুর্নীতিবাজরা স্মার্ট- সবাইকে কান খাড়া রাখতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিজিটাল দুর্নীতি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যারা ডিজিটাল দুর্নীতি করে তারা স্মার্ট হওয়ার কারণে এটি দূর করতে সবাইকে কান খাড়া রাখার আহ্বান জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। একই সঙ্গে বর্তমানে দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটা অংশ স্বেচ্ছায় বেকার থাকছে বলেও মনে করেন মন্ত্রী। কাজ পেতে হলে আগে তরুণদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে বলেও জানান। শনিবার ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন সামিট ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য মন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত দিনব্যাপী সম্মেলনে উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ইনোভেশন ফর পোভার্টি এ্যাকশনের ডিরেক্টর রেবেকা রোজি। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে-গঞ্জে বিকাশ, ডাচ-বাংলার মতো ব্যাংকিং খাত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই খাতে গ্রামীণসহ সবধরণের মানুষের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর জন্য আয়োজন করা হয়েছে প্রথমবারের মতো ‘২০১৯ ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন সামিট। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ডিজিটাল দুর্নীতি নিয়ে সব পক্ষকেই কান খাড়া রাখতে হবে। কেননা প্রযুক্তির বিষয়ে আমরা যেমন স্মার্ট, যারা দুর্নীতি ও অন্যায় করে তারাও স্মার্ট। ডিজিটাল দুর্নীতি কেবল আমাদের দেশে নয়, অন্য দেশেও প্রতিনিয়ত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের ব্যথা একটু বেশি লাগে। কারণ চুরি হলে আমাদের সবই চুরি হয়ে যায়। আমরা অন্য দেশের তুলনায় গরিব। এম এ মান্নান বলেন, অধিক উৎপাদনে কৃষি থেকে শিল্পে ঢুকছি। শিক্ষা ঢুকে গেছে আমাদের গ্রামে। যেটা শ্রমের প্রধান উৎস। প্রযুক্তিও সমান তালে ঢুকে যাচ্ছে। বেশি সচেতন হওয়ায় তারা (গ্রামের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী) কৃষিতে থাকছে না। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী শহরমুখী হচ্ছে। শহুরে যেসব কাজ, এসব কাজের চাহিদা বেড়ে গেছে। সবার জন্য পাওয়া যাচ্ছে না। এই যে পাওয়া যাচ্ছে না, তারা বেকার। তিনি বলেন, আরেকটি গ্যাপ আছে। কিছু লোক আছে, তারা বেকার বাই চয়েস (স্বেচ্ছায়)। তারা গ্রামে যাবে না। যে চাকরিটা তাকে দেয়া হচ্ছে বাজারের প্রয়োজনে, এটা সে করবে না। সে চায়, চেয়ার দুলিয়ে কাজ করা-না করার একটা আধা-কাজের মানসিকতা। এটা এখন সম্ভব নয়। এখন আমাদের কাজ করতে হবে হাতে কলমে। বাজারে যেটার চাহিদা আছে। এ জন্য কিছু লোক বেকার। তরুণদের মন-মানসিকতাতেও পরিবর্তন আনতে হবে। যারা যে যোগ্য-দক্ষ, তাকে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে বলেন মন্ত্রী। এম এ মান্নান বলেন, টেকসই উন্নয়নে আমাদের আরও কাজ করতে হবে, এখন যা করছি তার চেয়েও বেশি। এর মধ্যে মানবউন্নয়ন সবচেয়ে বেশি জরুরী। বিশ্বাস করুন, বিগত দিনগুলোতে দেশে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন এসেছে। এজন্য আমাদের মূল লক্ষ্যে ফোকাস থাকতে হবে। দেশের শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বিদেশে পাড়ি জমানোর মানসিকতা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, আর কিছু আছে তরুণ বয়সী, তারা অন্য কোথাও, অন্য কোনখানে পশ্চিমে-উত্তরে যেতে চায়। সেটারও ব্যাখ্যা আছে। আমাদের দেশের বাজারে তারা যথেষ্ট জায়গা পাচ্ছে না। বিদেশে গেলে তারা এমন কিছু বাড়তি সুবিধা ভোগ করবে যেটা আমাদের সমাজে নানা সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্যগত কারণে দিচ্ছে না। মন্ত্রী আরও বলেন, জনগণকে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে যুক্ত করতে সরকার বয়স্ক ভাতা, বিধাব ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা মোবাইল ব্যাংকিং বা ডিজিটাল অর্থ ট্রান্সফার করছে, যেন গ্রামে অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এম এ মান্নান বলেন, দারিদ্র্য নিরসন এবং বৈষম্য কমাতে হলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগাতে হবে। ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুসিভ সামিট নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতির বড় অংশ কিছুদিন আগেও ছিল আর্থিক খাতের বাইরে। সরাসরি বিনিময় হতো মানুষের হাতে। নিখুঁত টাকা ঢুকবে, ঘুরবে বেশি, সেদিকে আমরা যাচ্ছি না। এটাকে ত্বরান্বিত করলে আমাদের লাভ হবে বেশি। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে আমরা আইন করে বলছি, গ্রামে শাখা খুলতে হবে। তিনি বলেন, আমরা পাওনা, বেতন-ভাতা ইত্যাদি বিকাশ, ডাচ্ বাংলাসহ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমরা গ্রামে পাঠাই। এ ছাড়া আমরা যে সহায়তাগুলো দিই, গ্রামীণ কৃষক, মৎস্যজীবী বা অন্যদের- সেগুলো কিন্তু আমরা ক্যাশের মাধ্যমে দিই। এই যে আমাদের ইনক্লুশন বা অন্তর্ভুক্তিকরণ করা; আমি মনে করি, এই সম্মেলন এই অন্তর্ভুক্তিকরণে সহায়তা করবে। যত দিন যাচ্ছে, ততই এ রকম আইডিয়া আসতে থাকবে বলেও মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এপিএমইএ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেবি ওয়াটকিংস। আরও বক্তব্য রাখেন বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদির, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) ট্রেজারি বোর্ডের স্পেশাল এ্যাডভাইজার প্রফেসর ইমরান রহমান ও ইউল্যাবের ডিরেক্টর সাজিদ অমিত। অনুষ্ঠানে বিকাশের প্রধান নির্বাহী কামাল কাদির বলেন, গ্রামীণ মানুষদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বিশেষভাবে কাজ করছে বিকাশ। এখন একজন রিক্সাচালকও বিকাশে টাকা পাঠান। এর মাধ্যমে নিজের অজান্তেই তিনি একজন শিল্পপতিকে সহায়তা করছেন। অর্থাৎ তার টাকাটা ব্যাংকে থাকছে। ফলে সেখান থেকে বিনিয়োগ বাড়ছে। অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা ভীতি। ক্রেডিট কার্ড বা অন্যান্য সেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষ অহেতুক ভয় পাচ্ছে। কিন্তু ভয়ের কোন কারণ নেই। পাশের কলকাতায় একজন মুদি দোকানদারেরও ক্রেডিট কার্ড আছে। তাই এই ভীতি জয় করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ যারা নিয়ন্ত্রক সংস্থা, তাদেরও সচেতনতা বাড়াতে হবে। সাজিদ অমিত বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিকভাবে অন্তর্ভুক্তি বাড়ছে। এর মধ্যে বিকাশ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে মানুষের প্রযুক্তির ভীতি কমেছে। এখন ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং পণ্যগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যেতে পারে। অর্থাৎ মানুষকে সঞ্চয়ে আনতে হবে। এই সঞ্চয় ব্যাংকিং খাতে হলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। দিনব্যাপী সম্মেলনে দুটি সেশন অনুষ্ঠিত হয় ইনোভেশন এ্যান্ড প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ফর দ্য লাস্ট-মাইল কাস্টমার এবং রোল অব দ্য রেগুলেটর ইন এনাবলিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন। এসব সেশনে প্যানেলিস্ট হিসেবে ছিলেন, বিকাশ সিইও কামাল কাদির, ব্যাংক এশিয়ার এমডি মোঃ আরফান আলী, মাইক্রোসেভের বাভানা সিরিবাস্তভা, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের এমডি ও সিইও ফারজানা চৌধুরী, সুইস কনট্রাক্ট বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনির্বাণ ভৌমিক এবং ইনোভেশন ইনক্লুশন লিমিটেডের সিইও ইমরান ছরদুদ্দিনসহ অন্যরা।
×