ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অন্ধের স্বপ্ন দেখাও পাপ, মাত্র দেড় নম্বরের জন্য আলাদা হচ্ছে দু’ভাই

প্রকাশিত: ১১:০৯, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

অন্ধের স্বপ্ন দেখাও পাপ, মাত্র দেড় নম্বরের জন্য আলাদা হচ্ছে দু’ভাই

মোরসালিন মিজান ॥ যাদের এগিয়ে নিতে বিশেষ বিধি, আলাদা ব্যবস্থা, দিন শেষে তারাই বঞ্চিত। যে মহৎ চাওয়া থেকে কোটা সুবিধা রাখা সে চাওয়াটি মাঠে মারা যাচ্ছে। যাক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বিধি মানাই যেন শেষ কথা। কর্তৃপক্ষ বিধি পালন করাকেই চ‚ড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছে। আর তাই দীর্ঘদিন একসঙ্গে থেকে লেখাপড়া ও পরস্পরকে আগলে রাখার পর বিচ্ছিন্ন হতে হচ্ছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দুই ভাইকে। বড় ভাই সেলিম ইসলাম। ছোটটি রাইসুল ইসলাম। বয়সের সামান্য হেরফের হলেও, এক ক্লাসে পড়ে তারা। এতদিন অভিন্ন স্কুল-কলেজ-ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়া করেছে। চোখে কেউ কিছু দেখে না। তার ওপর অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বাবা দিনমজুর। রংমিস্ত্রির কাজ করেন। মা গার্মেন্টসে ছিলেন। এখন ঘর সামলান। সেলিম ও রাইসুলরা পেটপুরে খেতে পায় না। বই কেনার টাকা নেই। একসেট বই উভয়ে মিলে এক টেবিলে বসে পড়ে। একে অন্যকে পড়া বুঝিয়ে দেয়। এভাবে প্রতিটি পরীক্ষায় দারুণ রেজাল্ট! এ ছাড়াও আলোহীন চোখে প্রতিদিন লক্ষ কোটি পরীক্ষা। জীবনযুদ্ধ। দুজনে মিলেই লড়েছে। একইভাবে মেধাবী দুই ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল একসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। ভাল পরীক্ষা দিয়ে ভর্তির জন্য যথারীতি যোগ্য নির্বাচিত হয় তারা। কিন্তু তখনও জানত না, এরই মাঝে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গেছে। দায় কিছুতেই তাদের নয়। তবুও পুনরায় ভর্তি পরীক্ষায় বসতে হয়। এবার ছোট ভাইটি পাস করে। অন্যজনের, হায় নিয়তি, মাত্র দেড় নম্বর কম! এত এত দুর্যোগ মোকাবেলা করে যে ছেলেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোর পর্যন্ত চলে এসেছে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়ার কোন কারণ খুঁজে পায় না ঢাবি। অগত্যা সেলিম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যজন ভর্তি হয়েছে ঢাবিতেই। সামনে তাই চরম অনিশ্চয়তা। পরস্পরের সহযোগিতা থেকে মারাত্মক বঞ্চিত হতে চলেছে দুই ভাই। তাদের জীবন জটিল হবে আরও। একসঙ্গে লেখাপড়া করা তো দূরে থাক, সামনের দিনগুলোতে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করারও সুযোগ পাবে না তারা। এই আলাদা হওয়ার কত যে বিপদ! কে কাকে বোঝাবে? এর আগে দেশের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ থেকে জিপিএ-ফাইভ পেয়ে এইচএসসি পাস করে দুই ভাই। এখনও তারা কলেজ ছাত্রাবাসে অবস্থান করছে। গত কয়েকদিন আগে সেখানে গিয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে। তখন বিকেল বেলা। সামনের মাঠটিতে খেলাধুলা করছে অন্যরা। কেউ রাস্তার চায়ের দোকানে আড্ডা জমিয়েছে। তোমরা রুমে কেন? জানতে চাইলে প্রথমে মুখ খুলে রাইসুল। সাবলিলভাবেই বলে, ‘চোখে দেখি না তো। আমরা খেলব কী করে? কে আমাদের জন্য আলাদা করে সময় দেবে? তাই ঘরে বসে কাটাই। অভ্যাস হয়ে গেছে।’ চির বেদনাকে মেনে নেয়ার এই অভ্যাস ক’জন করতে পারে? তবে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে একসঙ্গে পড়তে না পারার ক্ষতটা নতুন। হঠাৎ আলাদা হওয়ার কষ্ট। রাইসুল ইতোমধ্যে ঢাবির সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছে। সে বলছিল, ‘কিছুদিন আগে এক রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম হয়েছিলাম। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলাম নগদ ১২ হাজার টাকা। ওই টাকা দিয়ে ভর্তির কাজটা হয়ে গেছে।’ নিজের টাকায় ভর্তি হতে পেরেছে, সে কী আনন্দ তার! কথা বলার সময় সেটা বেশ বোঝা যায়। কিন্তু পরক্ষণেই মন খারাপ। এই ভর্তি বিচ্ছিন্ন করে দেবে প্রিয় দুই ভাইকে। মনে পড়ে যায় সে কথা। তাদের সঙ্গে আলোচনা থেকে জানা যায়, সেলিম ও রাইসুল স্কুল বেলা থেকে একসঙ্গে। না, দুই ভাইয়ের কেউ-ই জন্মান্ধ ছিল না। পৃথিবীর রূপ তারা কিছুদিন দেখেছে। তার পর হঠাৎ করেই অন্ধকারে ডুবে যায় সব। সেলিম বলে, ‘ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় হঠাৎ দৃৃশ্যমান কোন কারণ ছাড়াই আমার চোখের আলো নিভে যায়। এর এক বছর পর দৃষ্টি হারায় রাইসুল। সম্পত্তি বলতে সামান্য জমি ছিল আমাদের। বাবা জায়গা বন্ধক দিয়ে, বিক্রি করে আমাদের চোখের অপারেশন করান। অর্থের অভাবে চিকিৎসা বেশি দূর চালিয়ে নেয়া যায়নি। চিরতরে অন্ধ হয়ে যাই আমরা।’ এ অবস্থায় জীবন সম্পূর্ণরূপে থেমে যাওয়ার কথা। আর বেঁচে থাকলেও পেশা হতে পারত ভিক্ষাবৃত্তি। কিন্তু না। ওইটুকুন বয়সেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে দুই ভাই। আবার লেখাপড়া শুরু করে। প্রথমে দুজন দুই স্কুলে ভর্তি হলেও, পরে পঞ্চগড়ের কমলাপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এসে একত্রিত হয়। স্কুলের পাশেই ছাত্রাবাস। সেখানে থেকে নতুন করে লেখাপড়া শুরু করে। ক্লাসে অনেক ছাত্রছাত্রী। ভাল রেজাল্ট করে সবাই। কিন্তু রোল ১ এবং ২ সব সময়ের জন্যই অধিকার করে নেয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই ভাই! পিএসসি, জেএসসি পরীক্ষায়ও উভয়ই জিপিএ ফাইভ পায়। গোটা স্কুল থেকে মাত্র দুজন জিপিএ ফাইভ অর্জন করে। এবং এই দুজন সেলিম ও রাইসুল। একই ফল এসএসসিতে। দুজনই এ প্লাস! স্কুল পর্ব শেষে ২০১৬ সালে রাজধানী শহরে চলে আসে দুই ভাই। ঢাকা কলেজে সরাসরি ভর্তির সুযোগ পায় তারা। স্কুলের ছাত্রবাস থেকে এসে ওঠে কলেজের ছাত্রবাসে। দুই বছর এখানে থেকে এইচএসসি শেষ করে সেলিম ও রাইসুল। আরও একটু পেছনে গিয়ে দেখা যায়, শুধুই প্রতিবন্ধকতা। বাধা পেরোনোর কত যে গল্প! সেলিম বলে, ‘প্রথমে শিখতে হয় ব্রেইল। কিন্তু যে কোন বইয়ের ব্রেইল সংস্করণের দাম অনেক বেশি। আমাদের বই কিনতে বাবাকে এমনকি ঘরের ছাগলগুলো বিক্রি করে দিতে হয়। তাছাড়া সব বইয়ের ব্রেইল সংস্করণ পাওয়া যায় না। চাইলে আপনি অর্ডার দিয়ে বই করে নিতে পারেন। সেটি অনেক টাকার ব্যাপার। এত খরচ করার কথা ভাবতেও পারি না আমরা। তাই বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছিলাম। কান যেহেতু আছে, আমরা কানকে একই সঙ্গে চোখের মতো ব্যবহার করতে শুরু করি। ক্লাসে টিচার যা পড়ান, মনোযোগ দিয়ে শুনি। রেকর্ড করে নিয়ে আসি। হলে বসে বারবার সে লেকচার শুনি। সহপাঠী বন্ধুরা যখন পড়ে, তাদের পাশে বসে কান পেতে রাখি। এভাবে পড়া মুখস্ত হয়ে যায়। মাথা কাজে লাগিয়ে নিজেদের মতো করে মিলিয়ে নিই।’ পরের গল্পটিও প্রতিবন্ধকতার। রাইসুল বলে, ‘হলের সহপাঠীদের আমরা বিভিন্ন সময় রিকুয়েস্ট করে বইয়ের কিছু অংশ পড়ে শোনাতে বলি। তারা শোনায়। কিন্তু সব সময় এটি সম্ভব হতো না। তখন জরুরী প্রয়োজনে ৬০০ টাকা দিয়ে লোক ভাড়া করতে হয়েছে আমাদের। ভাড়া করা লোকটি টেক্সট পড়েছে। আমরা শুনেছি। রেকর্ড করে রেখেছি। পরে বারবার বাজিয়ে শুনে আত্মস্থ করেছি।’ লেখার কাজটি কীভাবে হয়েছে? জানতে চাইলে সেলিম বলে, ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা পরীক্ষার সময় এজন রাইটার সঙ্গে নিতে পারে। বোর্ডের অনাপত্তি নিয়ে নিচের ক্লাসের জুনিয়র কাউকে পরীক্ষার হলে নিয়ে যায় তারা। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা প্রশ্নের উত্তর মুখে বলে যায়। রাইটার তা খাতায় লিখতে থাকে। উপরের ক্লাসে উঠার পর থেকে আমরা এভাবেই পরীক্ষা দিয়ে আসছি। লেখার মানুষ পাওয়াটাও সহজ হয় না। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে তবেই কাউকে রাজি করাতে হয়।’ অন্যের কলমে লিখেও ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট। উভয়ের কাছে প্রশ্ন ছিলÑ কে তোমাদের মধ্যে বেশি ব্রিলিয়ান্ট? উত্তর দেয়ার সুযোগটি আগেই ছোঁ মেরে নিয়ে নেয় সেলিম। গর্ব করেই সে বলে, ‘বেশি ব্রিলিয়ান্ট রাইসুল।’ ছোট ভাই নিজে তা মানতে নারাজ। আঙুল দিয়ে বড়জনকে দেখিয়ে বলে, ‘ও বেশি ব্রিলিয়ান্ট। আমাকে ¯েœহ করে তো তাই এ কথা বলছে।’ এই ভালবাসাবাসি দেখে সত্যি মন আবেগাক্রান্ত হয়ে ওঠে। ভাই নয় শুধু, তাদের মধ্যে অদ্ভুত এক বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। সবকিছুতে একজন অন্যজনকে সহায়তা করে। কাজের ভাগাভাগিটা কীভাবে হয়? জানতে চাইলে রাইসুল বলে, ‘এই ধরুন আমি কোনদিন ঘুম থেকে ওঠে মশারি গুছাই। ভাইয়া বিছানা ভাঁজ করে। আবার ভাইয়া একদিন মেঝে ঝাড়– দেয়। আমি জামা কাপড় ধুয়ে দিই বা নাস্তা আনতে বের হই।’ দুঃখগুলোও একসঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয় তারা। সেলিম বলে, ‘ঢাকার ব্যস্ত রাস্তা পার হওয়াটা আমাদের জন্য একটু কঠিন হয়ে যায়। কখনও কখনও লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থেকে আমরা কারও হয়ত সাহায্য চাইলাম। কিন্তু তেমন সারা পাওয়া যায় না। অনেকে ভাবে আমরা অন্ধ, টাকা পয়সা চাইব। তাই সরে যায়। তখন খুব খারাপ লাগে।’ দুই ভাইয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কী খাবার পছন্দ তোমাদের? ওরা কিছু তেমন বলতে পারল না। তবে কানে বাজছে সেই কথাটি, রাইসুল বলছিল, ‘ ফার্স্ট ফুড বা ¯œ্যাকস জাতীয় কিছু আমরা খাই না। পয়সাও থাকে না হাতে। সকালে একটা রুটি আর কলা খাই। অনেক সময় না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। সমস্যা হয় না।’ হ্যাঁ, বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই জীবনকে সহজ করে নিয়েছে তারা। কথা বলার সময় দুজন সুন্দর দুটি টি-শার্ট পরেছিল। কার টি-শার্টের কী রং? জানতে চাইলে, আহারে, বলতে পারে না কেউ। কেমন দেখাচ্ছে তা-ও জানে না। সেলিম বলে, ‘শুধু ময়লা হয়েছে কি না সেটি কাউকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিই। ময়লা হলে নিজেরাই ধুয়ে পরিষ্কার করি।’ সামনের দেয়ালেই ঝুলে ছিল তাদের সব জামা কাপড়। সাকুল্যে চার পাঁচটির বেশি হবে না। এই দিয়ে চলে যাচ্ছে তাদের। চালাতে হচ্ছে আসলে। বেড়ানো, সিনেমা দেখা ইত্যাদি নিয়েও কথা হয়। রাইসুল বলে, ‘বেড়ানো হয় না। পুকুর পাড়ে যাব। লেকের ধারে বসবো। হয়ে ওঠে না। গিয়ে কী করব? মুভি দেখতে পারি না। ইউটিইবে অডিও শুনে ছবির গল্প বোঝার চেষ্টা করি।’ সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া দেবী সিনেমা নিয়ে খুব আগ্রহ। এখানে ওখানে সিনেমাটি সম্পর্কে পড়ে সেই কৌত‚হল দূর করার চেষ্টা করছে বলে জানায় তারা। রেডিওতে খবর শুনে। দু’জনে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোচনা করে। সবই দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা দূর করার স্বার্থে। কিন্তু এখন তো আলাদা হতে হবে দুই ভাইকে। কী ভাবছ? উত্তরে রাইসুল বলে, ‘ভাবতেই পারছি না দুই ভাই আলাদা হয়ে যাব। আমাদের জন্য ঢাকা এবং সাভারের দূরত্ব অনেক। এই দূরত্ব পাড়ি দিয়ে একজন কতটা আর অন্যজনের পাশে দাঁড়াতে পারব? জানি না। এতদিন তো কারও সঙ্গে ঘরে বসে থাকতে পারতাম। কিছু গল্প ছিল শুধু আমরাই আমাদের সঙ্গে করতে পারতাম। এখন আর হবে না। একজনের জ্বর হলে অন্যজন রাত জেগে মাথায় পানি দিতাম। এখন কী হবে জানি না।’ এ পর্যায়ে জরুরী প্রসঙ্গটির অবতাররণা হয়। সেলিম বলে, ‘অনেকে পরামর্শ দিয়ে বলছিলেন, তোমরা সংগ্রাম করে এতদূর এসেছ। কর্তৃপক্ষের কাছে একটা মানবিক আবেদন জানাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কত আলোকিত মানুষ। চাইলে তারা বিবেচনা করতেও পারেন। মনে শেষ আশাটা বাঁচিয়ে রেখে আমরা মানবিক আবেদন নিয়ে কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হই। একজন উপ-উপাচার্য ও একজন বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই। প্রথমে দুজনই অমায়িক ব্যবহার করেন। সুযোগ থাকলে বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। বিশেষ করে বিভাগীয় প্রধান ম্যাডাম আন্তরিকভাবেই বলেছিলেন চেষ্টা করবেন। তার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছিলাম খুশি ছিলাম আমরা। কিন্তু শেষ দিন গেলে উনি আমাদের চিনতে পেরেছেন বলেই মনে হল না। একেবারেই বদলে যাওয়া কণ্ঠস্বর। তিনি বলেন, ও, তোমরা। তুমি তো ফেল করেছে। যাও। যাও। হবে না। যাও। আমরা সরে আসারও সুযোগ পাইনি। তিনি নিজেই আমাদের মুখের ওপর দরজাটা বন্ধ করে দিলেন।’ কী আর করা? নিজেরাই নিজেদের সান্ত¦না দেয়। সেলিমকে উদ্দেশ্য করে রাইসুল বলে, ‘ও কিছু না। ম্যাডাম হয়ত কোন সিচুয়েশনের কারণে এমনটি করেছেন। হতেই পারে।’ আসলে এভাবেই একে অন্যকে আগলে রাখে দুই ভাই। আলোচনার এ পর্যায়ে এসে যুক্ত হন দুই ভাইকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায়তা দিয়ে আসা একজন মানবিক মানুষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি পাশে বসে সব আলোচনা শুনছিলেন। শেষ পর্যায়ে আলোচনায় যোগ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নিয়ম যারা বানান, যারা মুখের উপর দরজা ছুঁড়ে মারেন তাদের চোখ বাঁধা অবস্থায় নিজের অফিস কক্ষের চেয়াটি ছেড়ে গাড়ি বারান্দা পর্যন্ত হেঁটে যেতে বলুন। সামান্য এ পরীক্ষায় তারা কি পাস করবেন?’ যে বিশেষ ভর্তি বিধি সেলিমদের মতো অন্ধ মেধাবী ছেলেদের আলাদা করতে পারে না, ঢাবিতে ভর্তি হতে দেয় না লোক দেখানো সে ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। আসলেই প্রস্তাবটি ভেবে দেখতে পারে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। তাহলে শুধু শুধু স্বপ্ন দেখবে না সেলিম রাইসুলরা। কষ্টও পাবে না। ভেবে দেখতে পারে।
×