ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহ মেডিক্যালের ডেন্টাল ইউনিট

চিকিৎসক আসেন ইচ্ছে মতো

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯

 চিকিৎসক আসেন ইচ্ছে মতো

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিটে চিকিৎসক আসেন নিজেদের খেয়াল খুশিমতো। এই ইউনিটের বেশিরভাগ চিকিৎসক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করলেও অনুপস্থিত থাকেন দিনের পর দিন। এরকম অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা ছাড়াও চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের বাইরের প্রাইভেট ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে কমিশন ভোগী কয়েক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। অথচ ওপেন সিক্রেট এসব বিষয় দেখার কেউ নেই! ফলে রোগীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ রোগীরা। যদিও হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার জানান, ডেন্টাল ইউনিটে এসব অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ইতোমধ্যে একাধিক চিকিৎসককে কারণ দর্শাওসহ সতর্ক করা হয়েছে। তারপরও অবস্থার ইতিবাচক কোন উন্নতি না হওয়ায় হতাশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার ঘড়ির কাঁটা তখন বেলা ১১টার ঘরে। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিটের একটি কক্ষের সামনে অর্ধ শতাধিক রোগীর দীর্ঘ ভিড় সামাল দিচ্ছেন ডা. খন্দকার আনোয়ার হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা। পাশের ডা. এহসান হোসেন জামালী, ডা. আঞ্জুমান নাহার, রুবী আক্তার এবং আরেক পাশের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. সাদেকুর রহমানের কক্ষ তখনও দরজা চাপানো, ভেতরে কেউ নেই। দরজার সামনে দাঁড়ানো কর্তব্যরত কর্মচারীরা জানালেন চিকিৎসক আসবেন। তবে কখন সেটি তারা কেউ জানেন না। ডেন্টাল ইউনিটের নিচতলায় পাঁচজন চিকিৎসক প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত রোগী দেখার কথা। কিন্তু মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত পাওয়া গেল মাত্র একজন চিকিৎসককে। ফলে বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে একজন চিকিৎসককে হিমশিম খেতে দেখা গেছে নিচতলায়। একই চিত্র দেখা গেছে ইউনিটের দুতলা ও তয় তলায়। মুক্তাগাছা উপজেলার আটানি বাজার এলাকার আক্তারুজ্জামান (৫৫) জানান, এখানে ভোগান্তি ও হয়রানির শেষ নেই। পদে পদে হয়রানি, অপেক্ষার প্রহর গোনা। সময়মতো চিকিৎসক না আসার কারণেই এই ভোগান্তি অভিযোগ করে আক্তারুজ্জামান জানান, ডেন্টাল ইউনিট ও হাসপাতালে এক্সরে পরীক্ষার সুবিধা থাকার পরও তাকে বাইরের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ফলে তাকে হাসপাতালে সেবা নিতে এসে বাড়তি টাকা গুনতে হয়েছে। কেন তাকে বাইরের ল্যাবে পাঠানো হলে তদন্তপূর্বক দায়ী চিকিৎসকের বিচার চান তিনি। ডেন্টাল ইউনিটের আরএস ডা. বাবলুর বিরুদ্ধে হাসপাতালের বাইরের ল্যাবে পরীক্ষার জন্য রোগী পাঠানোর এরকম এন্তার অভিযোগ রয়েছে। গত ২০০৯ সালে চালু হওয়া এই ইউনিটে বিভাগীয় প্রধানসহ মোট ১৫ জন চিকিৎসক নিয়োজিত রয়েছেন। এদের মধ্যে সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদ মর্যাদার পাঁচজন ও সহকারী রেজিস্ট্রারসহ মেডিক্যাল অফিসার পদমর্যাদার ডেন্টাল সার্জন রয়েছে অপর ১০ জন। খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১১ টার সময় কক্ষে আসেন রুবী আক্তার, বেলা ১২ টার দিকে আসেন আঞ্জুমান নাহার ও সাদেকুর রহমান এবং বেলা ১ টার দিকে নিজ কক্ষে আসেন এহসান হোসেন জামালী। অনিয়মিত ও বিলম্বে আসার ব্যাপারে জানতে চাইলে ডা. রুবী আক্তার জানান, ব্যক্তিগত পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে তিনি বাইরে গিয়েছিলেন। চিকিৎসক কখন কক্ষে থাকবেন কি থাকবেন না এটি জানতে চাওয়ার এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলেন এই চিকিৎসক। ডা. আঞ্জুমান নাহার জানান, আধঘণ্টার জন্য বাইরে গিয়েছিলেন তিনি। আর ডা. জামালী জানান, হাসপাতালের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি কোন কথা বলবেন না। তবে অনুপস্থিতির ব্যাপারে হাসপাতালের অনুমতি ছিল কিনা এ প্রশ্নে বলেন, এটি বিভাগীয় প্রধানসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। এ ব্যাপারে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন জানান, পরীক্ষা, ক্লাস ও ব্যক্তিগত বিষয় যাই থাকুক না কেন নির্ধারিত সময়ে চিকিৎসকদের কক্ষে থাকতে হবে। তাহলে কেন এই অনিয়ম-প্রশ্নে বিভাগীয় প্রধান দায় এড়িয়ে জানান, এটি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরাই জবাব দেবেন।
×