ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ড. কামালের ধানের শীষের বিপ্লবের ডাক

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

ড. কামালের ধানের শীষের বিপ্লবের ডাক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষের পক্ষে ভোট বিপ্লবের ডাক দিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ধানের শীষ দলের নয়, ঐক্যবদ্ধ জনগণের প্রতীক। এই প্রতীকে ভোট দিয়ে দেশকে মুক্ত করুন। বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়নের অনেক বক্তব্য শুনতে হয়। তবে উন্নয়নের সঙ্গে গণতন্ত্র যদি না থাকে, মানবাধিকার যদি না থাকে, তবে তাকে উন্নয়ন বলে না। উন্নয়ন ও গণতন্ত্র বিপরীত নয়। স্বৈরাচাররাই গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বাদ দিয়ে উন্নয়নের কথা বলে। বৃহস্পতিবার বিকেলে পুরানা পল্টনের জামান টাওয়ারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কার্যালয়ে জোটের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভোট বিপ্লবের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের মতো ৩০ ডিসেম্বর হবে আমাদের আরেক বিজয় দিবস। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মাঠে থাকব। দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে ড. কামাল বলেন, অনেকে ভয় পান, আমরা ভয় পেলে দেশ স্বাধীন করতে পারতাম না। ১৯৯০ সালে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত করতে পারতাম না। অতএব, ভোট গণনা না করা পর্যন্ত পাহারা দিন। ১৬ কোটি মানুষ, কতজনকে গ্রেফতার করবে তারা? উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ক্ষমতাসীনদের প্রচার সম্পর্কে ড. কামাল বলেন, উন্নয়ন উন্নয়ন, এটা আইয়ুব খানের প্রত্যাখ্যাত বক্তব্য। ১৯৭১ সালে এটা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। গণতন্ত্র বাদ দিয়ে উন্নয়নের কথা ৫০ বছর আগে আইয়ুব খানরা বলত। এসব কথা এখন আর চলে না। তিনি বলেন, বিশেষ কোন গোষ্ঠীর জন্য উন্নয়ন নয়, উন্নয়ন হতে হবে সব মানুষের জন্য। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ড. কামাল হোসেনের হাতে জাতীয় এক্যফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, জনগণ দেশের মালিক হলে সত্যিকার অর্থে দেশের উন্নয়ন হবে। কিন্তু বর্তমান সরকার বলছে গণতন্ত্র রাখো, আগে উন্নয়ন। এটা পঞ্চাশ বছর আগেকার কথা। মানুষ এই সব কথায় কান না দিয়ে দেশের মালিক থাকতে চান। ভোটে কোন প্রকার অনিয়ম হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে ড. কামাল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোটে থাকতে হবে। জনগণকে নিয়ে ভোটের মাঠে টিকে থাকার চেষ্টা করতে হবে। সরকারী দল যাতে না বলতে পারে যে, আমরা সরে গেছি। জনগণকে বোঝাতে হবে ভোট আমাদের অধিকার। আমরা কেন সরে যাব? আর শেষ পর্যন্ত যদি সরকার ভোটের মাঠে আমাদের টিকে থাকাটা অসম্ভব করে দেয়, তখন দেশের মানুষই দেখবে। ড. কামাল বলেন, সত্তরের নির্বাচনেও বাধা এসেছে। আমরা মাঠ ছাড়িনি। সামরিক সরকারের আমলের নির্বাচনগুলোতেও বাধা এসেছে, আমরা পিছু হটিনি। এবারও পিছু হটব না। আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মাঠে থাকব। এরপরও যদি সরকার মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়, ভোটে কোন অনিয়ম হয়, জনগণকে সঙ্গে নিয়েই রুখে দাঁড়াব। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই লড়াই করব। ৩০ ডিসেম্বর সবাইকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল বলেন, ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ দলীয়করণ মুক্ত হবে এবং দেশের মালিক হবে জনগণ। জনগণ পরিবর্তন চায় কি না, সেই সিদ্ধান্ত ৩০ ডিসেম্বর তাদের নিতে হবে। দেশবাসীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর সাহস করে নামুন। ড. কামাল বলেন, স্বাধীন দেশের প্রশাসন কোন দলের লোক হতে পারে না। তাই প্রশাসনকে বলব, জনগণের স্বার্থে কাজ করুন, কোন দলের স্বার্থে নয়। ধানের শীষ কোন দলের প্রতীক নয় উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, ধানের শীষ মানুষের মুক্তির প্রতীক। সবাই ঐক্যবদ্ধাভাবে ধানের শীষে ভোট দিন। ড. কামাল বলেন, আমরা সারাজীবন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ফাইট করেছি। ’৭১ সালে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ফাইট করেছি। তারা বিজয়ী হতে পারেনি, আমরাই বিজয়ী হয়েছি। ১৬ ডিসেম্বরের পর আবার ৩০ ডিসেম্বর বিজয়ী হব। প্রশাসন ও আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষকে ভয় দেখানো সম্ভব নয়। তাদের মারাও সম্ভব নয়। জনগণ ঐক্যবদ্ধ আছে। নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সাড়া পেয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের মাধ্যমে আরেকটি বিপ্লব হবে। সরকারকে উদ্দেশ করে ড. কামাল বলেন, তারা মাথা উঁচু করে বলে আমরা দেশের মালিক। প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। এই যে কত বড় অর্জন ছিল, একাত্তরে কত মানুষ জীবন দিয়েছেন। ১৪ ডিসেম্বর, ১৬ ডিসেম্বর তাদের আমরা শ্রদ্ধা জানাই। স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনসহ যারা অবদান রেখেছেন তাদের আমরা স্মরণ করি শ্রদ্ধার সঙ্গে। এবারের নির্বাচন হলো তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে। আজকে আমাদের ঐক্যের ভিত হলো, স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। সংবিধানে শহীদদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার পদ্ধতি এই নির্বাচন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের ইতোমধ্যে নৈতিক পরাজয় হয়েছে। আওয়ামী লীগকে প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। পাপের কাছে নতিস্বীকার না করে, ৩০ ডিসেম্বর জনগণকে তাদের মুক্তির জন্য, নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য ধানের শীষে ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। গণমাধ্যমকে কারও কাছে নতিস্বীকার না করে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জনগণ ঐক্যবদ্ধ। গণতন্ত্রের মুক্তি, রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরে পেতে ধানের শীষে ভোট দিন। সংবাদ সম্মেলনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা যেসব কার্যকলাপ বা ভূমিকা পালন করছেন, তার জন্য সিইসির তালিকায় নয়, মীর জাফরের তালিকায় তার নাম লেখা থাকবে। তিনি বলেন, যারা ’৬৯ দেখেছেন, ’৭১ দেখেছেন তারা ২০১৮ সালের ঐক্য দেখে বিস্মিত হবেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, ভোট সামনে রেখে দেশে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, আপনারা যাদের এখন আওয়ামী লীগ বলছেন, তারা আর সেই বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ না। ক্ষমতা আর নিজের আখের গোছাতে এরা আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করছে। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ভোটকে প্রহসনে পরিণত করতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ এভাবে বিরোধী দলের প্রার্থীদের ওপর হামলা চালাতে পারে না। আওয়ামী লীগের নামে যারা এভাবে হামলা করছে তাদের খুঁজে বের করা দরকার। তাদের পরিচয় জানাটা জরুরী। তিনি বলেন, ধানের শীষে ভোট দিলে রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদুল্লাহ কায়সার, মমিনুল ইসলাম, ড. জাহেদ-উর রহমান প্রমুখ।
×