অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের কর ফাঁকির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। রবিবার দুপুরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
ড. কামালের কর ফাঁকির বিষয়ে দুদকের দেয়া এক চিঠির বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এটা একটু সময় লাগে। ব্যাংক সার্চ দেয়া। এখন আপনারা নিজেরাই বুঝেন, এ মুহূর্তে যদি আমরা খুব খড়গহস্ত হয়ে যাই, তাহলে অনেকেই ভাববে উনি বিরোধী দলের হয়ে ইলেকশন করছে, এই জন্য ওনাকে ধরা হচ্ছে। যাই হোক এই প্রক্রিয়াটি চালু আছে। নির্বাচন আছে বলেই কী ছাড় দিচ্ছেন, সাংবাদিকদের এমন আরেক প্রশ্নে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, না না ছাড় দিচ্ছি না। সিচুয়েশনটা যাতে ওই লাইনে না যায়।
সূত্র জানায়, গত ১৯ নবেম্বর ড. কামালের আয়কর রিটার্নের বিষয়ে জানতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে দুদক। চিঠিতে বলা হয়, ড. কামাল হোসেন সার্কেল ১৬৪, ঢাকা কর অঞ্চল ৮-এর একজন করদাতা। বিভিন্ন করবর্ষে তিনি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় দুটি, সিটি সেন্টারে দুটি (যার একটি ফরেন কারেন্সি এ্যাকাউন্ট) এবং আইএফআইসি ব্যাংকে একটি এ্যাকাউন্টসহ মোট পাঁচটি এ্যাকাউন্টে জমা টাকার ওপর কর পরিশোধ করেছেন। তবে কর গোয়েন্দারা ওই আইনজীবীর নামে এমন একটি ব্যাংক এ্যাকাউন্টের খোঁজ পান যেটিতে জমাকৃত টাকার ওপর তিনি কোন কর পরিশোধ করেননি। এমন কি ওই এ্যাকাউন্ট সম্পর্কে এনবিআরে কোন তথ্যও দেননি।
সূত্র জানায়, ওই ব্যাংক এ্যাকাউন্টটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় ‘ড. কামাল হোসেন এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটস’ নামে করা, যার নং-০১-১৮২৫৪৪৫-০৩। এখানে তার পেশাগত ফি জমা হলেও আয়কর রিটার্নে এই আয় দেখানো হয়নি। ২০১২ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ওই এ্যাকাউন্টে প্রায় ৫৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা জমা হয়। শুধুমাত্র গত অর্থবছরে সেখানে প্রায় ১১ কোটি ১২ লাখ টাকা জমা হয়েছে এবং বছর শেষে নগদ স্থিতি ছিল ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা প্রায়। অভিযোগ উঠেছে এই বিপুল পরিমাণ আয় তার পেশাগত ফি, যা আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করেননি এবং সেই ব্যাংক হিসাবটিও তিনি গোপন করেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অপ্রদর্শিত ব্যাংক হিসাব থেকে প্রাপ্ত ব্যাংক স্থিতি ড. কামাল হোসেনের সম্পদ ও দায় বিবরণী হিসেবে বিবেচিত হবে; কিন্তু তিনি সেটি তার কর বিবরণীতে প্রদর্শন করেননি। ওই সম্পদ গোপন করে কর ফাঁকির দায়ে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।