ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে বৃষ্টিভেজা ধানে ঠকছেন চাষীরা

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ২৯ মে ২০১৮

যশোরে বৃষ্টিভেজা ধানে ঠকছেন চাষীরা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ এ বছর বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে ঘরে ধান তুলেছেন চাষীরা। অনেকের ধান মাঠ কিংবা বাড়ির আঙ্গিনায় বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিল। সেই বৃষ্টিভেজা ধান শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন যশোর অঞ্চলের কৃষকেরা। তাদের মণ প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে কৃষকেরা লোকসানে পড়ছেন। আড়ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টিভেজা ধানে ভাল চাল হবে না। এজন্য চাহিদা কম। বেশি দামে কিনলে লোকসান গুনতে হবে। তাই মানভেদে ধানের দাম কম-বেশি হচ্ছে। যশোর অঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম ধানের মোকাম খাজুরা। গত রবিবার ছিল হাটবার। সকাল থেকে হাটের বিশাল এলাকাজুড়ে ধানবোঝাই আলম সাধু, ভ্যান, ট্রলির লম্বা লাইন পড়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। রাস্তার ওপরই চলে ধান বেচা-কেনা। বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা কৃষকেরা দর কষাকষি করছেন। তবে অধিকাংশ কৃষক ধানের মান নিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারছে না আড়তদারদের। কারণ, এবার ঝড়-বৃষ্টির ধকলে বেশিরভাগ কৃষকের ধান ভিজে গেছে মাঠ ও বাড়ির আঙ্গিনায়। সেই বৃষ্টিভেজা ধান মাড়াই শেষে শুকিয়ে হাটে বিক্রি করতে এনেছেন কৃষকেরা। মান তুলনামূলক খারাপ হওয়ায় বাজার দরের চেয়ে দেড়শ’ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত মণে কম হাঁকা হচ্ছে। এতে কৃষকের মন গলছে না। বেশি দাম ধরার জন্য অনেকে পাইকারকে অনুরোধ করছেন। তবে পাইকাররা তাদের অবস্থানে অনড়। পাইকার ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাল মানের জিরা ধান ১ হাজার ১০ টাকা মণ। একই জাতের বৃষ্টিভেজা ধান ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাসমতি ১ হাজার ৫০ মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। একই ধান বৃষ্টিভেজা হওয়ায় দাম কমে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ৮২০ টাকার আটাশ ধান ৭০০-৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাঘারপাড়ার আজমপুর গ্রামের কৃষক মফিজুর রহমান বলেন, ‘ধান কাটার পর বৃষ্টি হয়েছিল। ধান মাঠে গাদা দিয়ে রেখেছিলাম। বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিল। পরে ঝেড়ে (মাড়াই) রোদে শুকিয়েছি। আজ বাজারে এনেছি বিক্রি করতে। পাইকার বলছে, ধানের মান ভাল না। দাম কম হবে। ১৫ মণ ধান বিক্রি না করে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’ বাঘারপাড়ার সিলিমপুর গ্রামের মহিতবুল্লাহ বলেন, ‘প্রতি রবি ও বৃহস্পতিবার খাজুরা হাটে বাঘারপাড়া, শালিখা, সদরের কৃষকরা ধান বিক্রি করতে আসেন। আজ প্রতি মণ ধান (মান ভেদে) ৮২০ টাকা থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে। ভাল ধানের দাম অবশ্য ভাল।’ বাঘারপাড়ার রামকৃষ্ণপুরের কৃষক রাসেল হোসেন বলেন, ১২ বিঘা জমিতে ধান করেছিলাম। আজকে ৩০ মণ ধান বিক্রি করতে এনেছি। পাইকার ৯৭০ টাকা মণ দাম বলছে। কি করব ভাবছি? আবার ফিরিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়া তো সম্ভব না। রাজাপুর গ্রামের কৃষক নিকমান মোল্লা বলেন, সকালে হাটে এসে দুপুরে ১ হাজার ১০ টাকা প্রতি মণ দরে ১৫ মণ বিক্রি করেছি। লাভ-লোকসান যাই হোক, বাড়ি আর ফিরিয়ে নিলাম না। খাজুরা বাজার আড়ত ও চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম কবির বলেন, ‘হাটে হাজার হাজার মণ ধান উঠেছে। দামও স্থিতিশীল আছে। তবে বেশিরভাগ ধান বৃষ্টির পানিতে ভেজা। এই ধানের চাহিদা কম। এজন্য ভাল মানের ধানের চেয়ে দাম কম।’
×