ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরোয়াভাবে ব্যাপক গণসংযোগে ব্যস্ত মেয়র প্রার্থীরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৮ এপ্রিল ২০১৮

ঘরোয়াভাবে ব্যাপক গণসংযোগে ব্যস্ত মেয়র প্রার্থীরা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (গাসিক) ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনে (খুসিক) নির্বাচনী প্রচারাভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হলেও দুই সিটিতেই ঘরোয়াভাবে ব্যাপক গণযোগাযোগ শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থী। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও সমাবেশে এই দুই দলের প্রার্থীরা সামিল হয়ে নিজ নিজ পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। দুই বড় দলের প্রার্থীর পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর উত্থাপিত তথ্য গোপনের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি বলেন, হলফনামায় তিনি কোন তথ্য গোপন করেননি। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার। গাজীপুর ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতির ময়দানে বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র প্রার্থীর সমর্থনে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা নানা পরিকল্পনা ও কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। নির্বাচনে নিজ নিজ প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য তারা এখন থেকেই ভোটের হিসাব নিকাশ শুরু করেছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হতে প্রার্থীদের নানা পরিকল্পনা অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। উভয় দলের কর্মী সমর্থকদের মাঝে চাপা অসন্তোষ ও গ্রুপিং থাকায় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা তা মিটিয়ে ফেলতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সমমনা অন্যান্য মেয়র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে তাদের আস্থায় এনে সোমবার (২৩ এপ্রিল) মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিজ দলের মনোনীত প্রার্থীর প্রতি সমর্থন বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র অভিজ্ঞ নেতৃবৃন্দ। নির্বাচনী আচরণবিধি না মেনেই ইতোমধ্যে প্রার্থীরা অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেছেন। তারা বিভিন্ন সংগঠন ও সামাজিক অনুষ্ঠান ও সমাবেশে যোগ দিয়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা ভোটের হিসেব নিকেশ শুরু করেছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা নানা পরিকল্পনা ও কৌশল তৈরি করছে। বিধি অনুযায়ী এখনও নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম শুরু না হলেও ইতোমধ্যে প্রার্থীরা অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেছেন। এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের নির্বাচনী মিডিয়া সেলের সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আলম জানান, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ছয়দানা এলাকার নিজ বাসায় মঙ্গলবার গাজীপুর জেলার ইমাম সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় করেছেন। এসময় তিনি ইমামদের সঙ্গে বিভিন্ন পরামর্শ ও নির্বাচনের কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। সভায় বাংলাদেশ ইমাম সমিতি গাজীপুর মহানগর শাখার সভাপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মাহমুদী, সিনিয়র সহ-সভাপতি আলী হায়দার গাজীপুরী সাধারণ সম্পাদক মোঃ হারিছুল হোসাইনী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের সঙ্গে তার টঙ্গীর বাসভবনে মঙ্গলবার সকালে নির্বাচনী প্রস্ততি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক বাসন, কোনাবাড়ি ও কাশিমপুর ইউনিয়ন এলাকার দলীয় কর্মীরা অংশ নেন। এসময় গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলন ও সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, যুগ্ম সম্পাদক মোঃ সোহরাব উদ্দিন, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বসির আহমেদ বাচ্চু, জেলা বিএনপির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক কাশিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকার, সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুর-এর সভাপতি দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এবারের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র একাধিক নেতা প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু ওইসব আসনে কাউন্সিলর পদে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার তালিকা সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত প্রার্থী ও তাদের ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা এজন্য আওয়ামীলীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে দায়ী করছেন। তবে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান। দলীয় সমর্থন দেয়ার বিষয়টি তার জানা নেই বলে তিনি জানান। এব্যাপারে দলের সাধারণ নেতা-কর্মীরা মনে করেন, বিষয়টি এখনই সুরাহা না হলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে এজন্য মূল্য দিতে হবে। ব্যাপক ঘরোয়া গণসংযোগ ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের গাজীপুরের ছয়দানার বাস ভবনে মঙ্গলবার দুপুরে কয়েকটি নির্বাচনী প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে গাজীপুর সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মী ও শুভানুধায়ীদের নিয়ে দফায় দফায় কয়েকটি ঘরোয়া মিটিং হয়। এতে দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্নস্তরের লোকদের সঙ্গে নির্বাচনী কৌশল নিয়ে মতবিনিময় করা হয়। দুপুরে নিজ বাসভবনে গাজীপুর সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডের মাদ্রাসার ইমাম খতিবদের নিয়ে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। একই সময় সাবেক বাসন ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের নিয়ে অপর এক নির্বাচনী সভায় জাহাাঙ্গীর আলম ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে ঘরে ঘরে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং আওয়ামী লীগের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে বলেন। বিকালে আওয়ামী লীগ প্রাার্থী জাহাঙ্গীর আলম সাবেক কাউলতিয়া ইউনিয়নের সালনা এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের টঙ্গীর আউচপাড়ার বাস ভবনে মঙ্গলবার দুপুরে এক নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিটি কর্পোরেশনের সাবেক বাসন, কোনাবাড়ি ও কাশিমপুর ইউনিয়ন এলাকার দলীয় কর্মীরা অংশ নেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে সভায় দলীয় মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ছাড়াও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বসির আহমেদ বাচ্চু, জেলা বিএনপির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক কাশিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকার, সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুর-এর সভাপতি দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির নেতারা সকল হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী মাঠে অবতীর্ন হওয়ার জন্য কর্মীদের নির্দেশ দেন। সভায় তৃণমূল নেতারা, বর্তমান সরকারের জুলুম-নির্যাতন ও বুলেটের জবাব ব্যালটের মাধ্যমে দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। খুলনা ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানান আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, হলফনামায় তিনি কোন তথ্য গোপন করেননি। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী। প্রতিযোগিতা করেন, জনগণ যাকে ভোট দেবে তিনি নির্বাচিত হবেন।’ মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তালুকদার আব্দুল খালেক এসব কথা বলেন। তিনি হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন এমন অভিযোগ এনে তার মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু সোমবার নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দাখিল করার প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এসএম কামাল হোসেন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এমপি প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, ১৯৭৭ সাল থেকে আমি নির্বাচন করছি। সব নির্বাচনেই আমি হলফনামা দিয়েছি। কোন সময় কোন তথ্য গোপন করে হলফনামা জমা দেইনি। আমি ও আমার স্ত্রী একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। লাভজনক যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমি জড়িত রয়েছি, সব কিছুর হিসাব আমি দাখিল করেছি। এখানে চাতুরতার কোন বিষয় নেই। তিনি বলেন, আমি হলফনামায় সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের বিষয়ে উল্লেখ করেছি। আমি নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি চেয়ারম্যান। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের নিয়ম অনুয়ায়ী কোন ট্রাস্টি চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্থিক সুবিধা পান না। যে কারণে আমি হলফনামায় নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কথা উল্লেখ করিনি। আমার এলাকায় ইস্টার্ন পলিমার লিঃ নামে যে শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার সঙ্গে আমি কোনভাবেই জড়িত নই। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা এস কামাল হোসেন বলেন, বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তার মাসিক আয় ১৬ হাজার ৬৬৭ টাকা। তাহলে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর দেড় কোটি টাকার গাড়িটি চলে কি বাতাসে? আর ড্রাইভারও কি হাওয়া খেয়ে গাড়ি চালান? মঞ্জু যে আলিশান বাড়িতে বসবাস করেন তার মাসিক ভাড়া কম করে হলেও ২০ হাজার টাকা। তাহলে কি তিনি বাড়িওয়ালাকে জিম্মি করে অথবা বিনা ভাড়ায় বসবাস করেন? তিনি বলেন, এই বাজারে পাজেরো গাড়ি হাঁকিয়ে, আলিশান বাড়িতে থেকে, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে ১৫/১৬ হাজার টাকায় চলা যায় না তা সবাই জানেন। তাহলে আমরা কি ধরে নেব যে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অবৈধ ব্যবসা আছে অথবা তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়র থাকা অবস্থায় সিটি কর্পোরেশনে যে সাত শত কোটি টাকা রেখে এসেছিলেন তা বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনি ও নজরুল ইসলাম মঞ্জু ভাগবাটোয়ারা করে খেয়েছেন। তিনি বলেন, অপপ্রচার বন্ধ করুন। আমাদের বাধ্য করবেন না আপনার হাঁড়ির খবর টেনে বের করতে।
×