ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাঠ পর্যায়ে ইনফো লিডার পৌঁছে দিচ্ছে উন্নয়নের খবর

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮

মাঠ পর্যায়ে ইনফো লিডার পৌঁছে দিচ্ছে উন্নয়নের খবর

সমুদ্র হক ॥ মাঠ পর্যায়ে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলো (ইউডিসি) এখন দেশের উন্নয়নের খবরাখবর বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। ইউডিসির একেক কর্মীর পরিচিতি এখন ‘ইনফো (ইনফর্মেশন) লিডার’। তারা নিজ এলাকার সচিত্র খবর সংগ্রহ করে। প্রয়োজনে খবরের ভিডিওচিত্র ধারণ করে। উন্নয়নের এসব খবর বিভিন্ন দেশের সংবাদের ওয়েবসাইটে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে দেশের সুনাম বয়ে আনছে। এভাবে উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশে গড়ে উঠছে ‘সিটিজেন জার্নালিজম’ বা নাগরিক সাংবাদিকতা। তারা তথ্য সেবা দিয়ে গ্রামের মানুষকে বিশ্ব গ্রামের (গ্লোবাল ভিলেজ) সঙ্গে যুক্ত করেছে। আরেকদিকে ফ্রিল্যান্স অনেক উদ্যোক্তা নিজেদের আগ্রহে সফ্টওয়্যারও তৈরি করছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এখন বাংলাদেশের সফটওয়্যার কিনছে। কয়েক বছর আগে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ ধরে ইউডিসিগুলো চালু করা হয়। তা এখন বিশ্বায়নের পথে চলার গতি আরও বাড়িয়েছে। সরকারের তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ পোর্টালগুলোতে সংবাদ প্রেরণের মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউডিসির নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফর্মেশনের (এটুআই) তৃণমূলের তথ্য জানালা কর্মসূচীর আওতায় দেশের প্রতিটি ইউডিসি উদ্যোক্তা কর্মীদের সাংবাদিকতার মৌলিক পাঠের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তার সুফলভোগী এখন দেশের সকল মানুষ। গ্রামের মানুষ এখন নগরীর মানুষের মতো সমানভাবে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করছে। গ্রামে বসেই যারা গ্রামের মানুষের কাছে তথ্য ও সেবা পৌঁছে দিচ্ছে তারা ইউডিসি উদ্যোক্তা নামে পরিচিত। তারাও দিনে দিনে আরও স্বাবলম্বী হয়ে ইনফো লিডারে পরিণত হচ্ছে। এই উদ্যোক্তা ও ইনফো লিডাররা নিজেদের এলাকার উন্নয়নের ছবি, খবরাখবর আপলোড করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তারাও এখন তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিনিধি। যারা এক ধরনের পরোক্ষ সংবাদকর্মী। ডিজিটাল ডিভাইসসহ যোগাযোগ প্রযুক্তির নানা কিছু নিয়ে বিশ্ব এখন তাদের হাতের মুঠোয়। বিশ্বের কোথায় কি ঘটছে, আত্মীয়স্বজনরা কোন্ দেশে, কেমন আছে, কি করছে তা জানাতে পারছে। কোন এলাকার জনভোগান্তি, বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এবং এলাকার সার্বিক উন্নয়নের খবর সংগ্রহ করে দ্রুত পৌঁছে দিচ্ছে যোগাযোগ মাধ্যমে। গ্রাম এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের সাফল্যের কথা তুলে ধরে তৃণমূলের তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করছে ইউডিসি। তাদেরও প্রতিবেদন ও ফিচার লেখনে দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করায় গ্রামের মানুষও এ সুযোগকে কাজে লাগাতে পারছে। স্মার্টফোনও সামাজিক যোগাযোগের বড় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে এ্যান্ড্রয়েড ও এ্যাপল আই ফোনগুলো ব্যবহারে দ্রুত ছবি ও টেক্সট আপলোড করা যাচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামের যে কোনস্থান থেকেই এখন বিশ্বের যে কোন স্থানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাচ্ছে। এভাবেও সিটিজেন জার্নালিজমের বিস্তৃতি ঘটছে। পাশপাশি প্রতিটি ইউডিসিকে আউটসোর্সিং ও ই-কমার্সের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছে তারা। যেখানে উদ্যোক্তরা নিজেদের উদ্যোগে কোন ওয়েবসাইটে গিয়ে রোজগারের বিষয়গুলো সংগ্রহ করে ঘরে বসেই অর্থ রোজগার করতে পারে। যারা শিক্ষিত তারা নিজেদের আপগ্রেড করে বিশ্ব বাতায়নের নতুন পথ খুঁজে নিতে পারছে। খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, সফটওয়্যার তৈরিতে বড় একটি আসন করে নিয়েছে তরুণরা। একটা সময় বিভিন্ন প্রোগ্রামের সফটওয়্যার অনেক অর্থ ব্যয়ে কিনে আনতে হতো। বর্তমানে এই দেশের তরুণরা ফ্রিল্যান্সিং করে সফটওয়্যার তৈরির পর দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করতে পারছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এখন বাংলাদেশের সফটওয়্যার কিনছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে বিশ্বের এক শ’রও বেশি দেশে বাংলাদেশের সফটওয়্যার রফতানি হচ্ছে। এই ফ্রিল্যান্স সফটওয়্যার ডেভেলপাররা নিজেরাও কল সেন্টার গড়ে তুলেছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর এক সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে সফটওয়্যার রফতানি করে আয় হয়েছে ৩শ’ মিলিয়ন ডলার।
×