ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গলাচিপা ও রাঙ্গাবালির চরাঞ্চলে লাল নিশান আতঙ্ক

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

গলাচিপা ও রাঙ্গাবালির চরাঞ্চলে লাল নিশান আতঙ্ক

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ ধান কাটা মওসুম শুরু হতেই গলাচিপা ও রাঙ্গাবালি উপজেলার চরাঞ্চলে কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে লাল নিশান আতঙ্ক। চরাঞ্চল প্রধান দুই উপজেলার ৫০টিরও বেশি চরের কয়েক হাজার একর জমির আমন ধানক্ষেতে ওড়ানো হয়েছে এই লাল নিশান। স্থানীয় ভূমি দফতর চরের এসব জমিতে লাল নিশান উড়িয়েছে। রাজস্ব আদায়ের নামে এসব লাল নিশান ওড়ানো হলেও কৃষকরা তা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কারণ একদিকে লাল নিশানের সুবাদে ভূমি দফতরের দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের সহায়তায় কৃষকের চাষ করা ধান চলে যেতে পারে প্রভাবশালীদের গোলায়। অন্যদিকে, রাজস্ব আদায়ের নামে দুর্নীতিবাজ কর্মচারীরা বাড়তি অর্থ আদায়ের নামে করছে জোরজুলুম। ফলে নিরাপদে ধান কাটা যাবে কিনা, এ নিয়ে কৃষকের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা শঙ্কা। আবার লাল নিশান ওড়ানোর ফলে লাঠিয়াল- জোতদার ও ভূমিদস্যুদের মধ্যেও বইছে আনন্দের বন্যা। জানা গেছে, ভূমি দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরের খাস জমি চিহ্নিত করা এবং রাজস্ব আদায়ের নামে বাঁশের মাথায় লাল কাপড় বেঁধে ধানক্ষেতে উড়িয়ে দিয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, চাষের মওসুমে বা বছরের অন্য সময় বিশেষ করে ক্ষেতে যখন ফসল থাকে না তখন একদিনের জন্য খাসজমি চিহ্নিত করতে ভূমি দফতরের কেউ এসব চরে যান না। অথচ ধান কাটা মওসুম শুরু হতেই তহসিল অফিসের লোকজন লাল নিশান ওড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, লাল নিশান উড়িয়ে ভূমি দফতরের কর্মচারীরা আতঙ্ক সৃষ্টি করে খাজনা আদায়ের নামে রীতিমতো বাণিজ্য শুরু করে দিয়েছে। সরকার নির্ধারিত প্রতি একর খাসজমির জন্য ৫শ’ টাকা খাজনা হলেও এ ক্ষেত্রে ৩-৪ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। আবার সরকারীভাবে বন্দোবস্ত দেয়া জমিতে এক টাকার বিনিময়ে ডিসিআর দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও আদায় করা হচ্ছে এক-দুই হাজার টাকা। তহসিলদারদের চাহিদা পূরণ করা না হলে কৃষকদের চাষাবাদের জমির ফসল তুলে দেয়া হচ্ছে ভূমিদস্যুদের হাতে। চর বাংলা গ্রামের কৃষক সোহাগ মাতব্বর অভিযোগ করেন, তহসিলদাররা ৫০০ টাকার একসনা ডিসিআরের জন্য দুই-তিন হাজার টাকা দাবি করছেন। ক্ষেত্রবিশেষে ৪-৫ হাজার টাকাও দাবি করছেন। রাঙ্গাবালি উপজেলার চরযমুনা গ্রামের মামুন মাঝি জানান, হাতে টাকা না থাকায় আগাম ধান বিক্রি করে তহসিলদারের দাবি পূরণ করতে হচ্ছে। ভূমি দফতরের কর্মকর্তারা জানান, চরাঞ্চলের জমির মালিকরা সাধারণত এলাকায় বসবাস করে না। তাই জমির মালিকদের কাছে খাজনাসহ সরকারী পাওনা বছরের পর বছর বকেয়া পড়ে থাকে। ধান কাটা মৌসুমে তারা এলাকায় আসেন। এ কারণে সরকারী টাকা আদায়ের সুবিধার্থে এসব জমির মালিকদের জমিতেই শুধু লাল নিশান ওড়ানো হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌসিফ আহমেদ জানান, কাউকে হয়রানি বা অন্য কোন উদ্দেশে লাল নিশান ওড়ানো হয়নি। শুধুমাত্র খাসজমি চিহ্নিত করে রাজস্ব আদায়ের জন্য লাল নিশান ওড়ানো হয়েছে।
×