ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযানে কমছে মানব পাচার

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযানে কমছে মানব পাচার

গাফফার খান চৌধুরী ॥ দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযানের মুখে কমছে মানবপাচার। একের পর এক গ্রেফতার হচ্ছে মানবপাচারকারীরা। দেশে মানবপাচারের ঘটনা কমলেও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের তরফ থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবপাচার নিয়ে নেতিবাচক তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের তরফ থেকে ওই প্রতিবেদনের লিখিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। তাতে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে দেশের মানবপাচার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। তবে মানবপাচার যে পুরোপুরি নির্মূল হয়নি, তাও জানানো হয়েছে লিখিত ওই ব্যাখ্যায়। সরকারের তরফ থেকে মানবপাচারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণার পর পুলিশের অপরাধ বিভাগ সিআইডি ও পুলিশ ব্যুরা অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআইতে পৃথক সেল গঠন করে মানবপাচারের মামলাগুলো পৃথকভাবে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে থানা পুলিশসহ অন্যান্য ইউনিটও মানবপাচার মামলা তদন্ত করছে। মানবপাচারে জড়িত বিদেশে অবস্থানরত ৫০ জনের বেশি রাঘববোয়ালকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলে রেড নোটিস জারি করা হয়েছে। আর দেশের ভেতরে লুকিয়ে থাকা মানবপাচারকারীদের বিদেশ পলায়ন ঠেকাতে রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে স্থল ও জলসীমান্ত এবং বিমানবন্দরগুলোতে। দেশের ভেতরে পলাতক থাকা মানবপাচারকারীদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে এমন তথ্য মিলেছে। সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ তদন্ত বিভাগের মানবপাচার ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ওয়াশিংটনে ১৮৭ দেশের মানবপাচার পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবপাচার এখনও বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। কিন্তু এসব অপরাধের তদন্ত করে দোষী মানবসম্পদ কর্মকর্তা, সীমান্তরক্ষী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করার ক্ষেত্রে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগী হয়নি। ২০১৫ সালে যৌনকর্মী হিসেবে মানবপাচারের ১৮১টি এবং শ্রমক্ষেত্রে মানবপাচারের ২৬৫টি ঘটনার তদন্ত হয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু ২০১৬ সালে ১২২ ও ১৬৮টি মামলার তদন্ত হয়েছে, যা তুলনামূলক কম। মানবপাচারের অপরাধে ২০১৬ সালে মাত্র তিনটি ক্ষেত্রে শাস্তির তথ্য পাওয়া গেছে। অথচ ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল সাতটি আর ২০১৪ সালে ছিল ১৮টি। প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্তের জন্য যথেষ্ট জনবল না দেয়ায় এবং তাড়াহুড়ো করে মামলা শেষ করার কারণে বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রেই মানবপাচারের মামলাগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে। সরকার মানবপাচার বন্ধে আইন ও একটি কর্মপরিকল্পনার খসড়া করলেও আগের বছরের তুলনায় এক্ষেত্রে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। পাচারের শিকার মানুষের সুরক্ষায় নীতিমালা প্রণয়ন, মানবপাচারে জড়িত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিচারের মুখোমুখি করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, লেবার ইন্সপেক্টর ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে। প্রতিবেদন মোতাবেক বাংলাদেশ আগে শুধু মানবপাচারের দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিল। এ বছর একধাপ নেমে মানবপাচারকারী দেশ হিসেবে নজরদারির তালিকায় (টায়ার-টু ওয়াচ লিস্ট) রয়েছে।
×