ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অভিযোগ তদন্ত ও বিচারের সময় সিনহাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি

প্রকাশিত: ০৮:১০, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

অভিযোগ তদন্ত ও বিচারের সময় সিনহাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে সরকারের হাতে আসা ১১ অভিযোগের তদন্ত ও বিচারের সময় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। ‘আমাদের সংবিধান অনুযায়ী, আইন অনুযায়ী, একমাত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছাড়া সকলের অপরাধের বিচার হওয়ার বিধান রয়েছে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এসেছে এবং এসব অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণও রয়েছে।’ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে থাকা প্রধান বিচারপতি ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) নামে একটি সংগঠনের মানববন্ধনে এ দাবি করেন বিচারপতি মানিক। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি ছুটি নিয়েছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও রওনা হওয়ার আগে এক লিখিত বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতি সিনহা বলেন, তিনি অসুস্থ নন, ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় ‘বিব্রত’। প্রধান বিচারপতি দেশ ছাড়ার পরদিনই সুপ্রীমকোর্টের বিরল এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, অর্থ পাচার ও নৈতিক স্খলনসহ ১১ সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। সহকর্মীরা এর ব্যাখ্যা চাইলে গ্রহণযোগ্য কোন ব্যাখ্যা বিচারপতি সিনহা দিতে পারেননি। এ কারণে তারা অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে বেঞ্চে বসতে রাজি নন বলে জানানো হয় বিবৃতিতে। এরপর ১৮ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, তার অনুসন্ধান হবে এবং তা দুদকের মাধ্যমে করা হতে পারে। আইনমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের সূত্র ধরে আপীল বিভাগের সাবেক বিচারক শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এই অভিযোগের অবশ্যই তদন্ত ও বিচার হতে হবে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, এগুলোর তদন্ত হবে এবং বিচার হবে। আমরা আশা করি, আইনমন্ত্রীর এই কথা ঠিক থাকবে।’ তিনি দাবি করেন, ‘তার (বিচারপতি সিনহা) বিরুদ্ধে যখন তদন্ত ও বিচার হবে, তখন তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সরকারের কাছে জোর দাবি থাকবে, যখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচার হবে তখন যে দেশেই থাকুক, তাকে যেন ফিরিয়ে আনা হয়।’ ২০১৫ সালের অক্টোবরে আপীল বিভাগ থেকে অবসরে যাওয়া বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বিভিন্ন সময়ে বিচারপতি সিনহার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে আলোচনায় এসেছেন। সংবিধান লঙ্ঘন, শপথভঙ্গ ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে তিনি রাষ্ট্রপতিকে চিঠিও দিয়েছেন। বুধবারের মানববন্ধনে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির দুর্নীতির কারণে বিচার বিভাগের মান-মর্যাদা নষ্ট হবে তা হতে পারে না। এই কারণেই তার সহকর্মীরা, অর্থাৎ আপীল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আদালতে বসতে অসম্মতি জানিয়েছেন।’ তার ভাষায়, ওই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কারণেই বিচরপতি সিনহা ‘বাধ্য হয়েছেন’ ছুটি নিতে। ‘শুধু তাই নয়, তিনি দেশ থেকে পালিয়েছেন। তিন বছরের ভিসা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন।’ সিনহার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ নিয়ে সরকার বা সুপ্রীমকোর্টের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কোন তথ্য প্রকাশ হয়নি। তবে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানববন্ধনে কিছু বিষয়ের কথা বলেন, যেগুলো ওই অভিযোগের মধ্যে রয়েছে বলে তার দাবি। ১১ অভিযোগের মধ্যে চার কোটি টাকা তার ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার কথা রয়েছে, যা তিনি পরে তুলে নিয়েছেন। ট্যাক্স রিটার্নে প্রতারণা, অস্ট্রেলিয়া-কানাডায় ব্যাংক এ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমা করা, সিঙ্গাপুরে একটি ব্যাংক এ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমা করা, কয়েকজন ব্যবসায়ীর মামলায় ৬০ কোটি টাকা ঘুষ নেয়া, নিম্ন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, পদায়নের জন্য ঘুষ নেয়ার কথা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, কালক্রমে সেগুলোর সাক্ষ্যপ্রমাণ এসে যাবে।’ মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বোয়াফের সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময়, আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান আলম সাজু, ব্যারিস্টার সোহরাব খান, জয়বাংলা মঞ্চের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী বক্তব্য দেন।
×