ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল

মাঠ পর্যায়ে নীরবে নিভৃতে বিকল্প পথে সাক্ষরতার হার বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:০১, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মাঠ পর্যায়ে নীরবে নিভৃতে বিকল্প পথে সাক্ষরতার হার বাড়ছে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ বিকল্প উপায়েও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারকারী ও সাক্ষরতার হার বাড়ছে। প্রযুক্তি বাধ্য করেছে সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন হতে। প্রযুুক্তির এই বাধ্যবাধকতা মেনে নিতেই হচ্ছে। তা না হলে পড়ে থাকতে হচ্ছে পেছনে। গ্রামে এখনও যারা অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন হয়নি তারা এ্যান্ড্রয়েড সেল (মোবাইল) ফোনের গ্রাহক হওয়ার সঙ্গেই এই কাজটি নীরবে নিভৃতে এগিয়ে নিতে পেরেছে। নদীর স্রোতধারার মতো কৃষক শ্রমিক দিনমজুর মুদি দোকানি ভ্রাম্যমাণ দোকানি গাঁয়ের বধূ প্রযুক্তি ও অক্ষর জ্ঞান শিখে নিজেদের ডিজিটাল প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করছে। মজার বিষয় হলো মোবাইল ফোনে বাংলা বর্ণমালা সংযোজনের আগে বেশিরভাগই ছবির মতো করে ইংরেজী অক্ষর ও সংখ্যা দেখে এবং উচ্চারণ শুনে ইংরেজী বর্ণমালা দিয়ে বাংলা লিখে নাম ও নম্বর সেভ করা শিখেছে। তারা ফোনবুকে লিস্ট দেখে কনট্যাক্ট বের করে বোতাম টিপে বা স্পর্শ করে (স্মার্ট ফোনে শুধু স্পর্শ করলেই হয়) কল দেয়। একইভাবে তারা টেক্সট মেসেজ (এসএমএস) লেখে। প্রাথমিকভাবে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর ধাপে ধাপে তারা এগিয়ে যায় সামনের দিকে। প্রথমে শখে স্থির ছবি ও ভিডিও ছবি তুলে স্মার্ট ফোনে সেভ করে রাখে। তারপর বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান ঈদ পার্বনের অনুষ্ঠানে ভিডিও ও স্থিরচিত্র প্রামাণ্য হিসেবে তুলে রাখে। পরের অধ্যায়ে তারা ভাইবার, স্কাইপি ও ইমোতে ভিডিও কল করা শুরু করে। এভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে সামনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। যারা লিখাপড়া জানে তারা আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে যোগ দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে। এভাবে চোখের সামনে প্রযুক্তি ব্যবহারকারী ও সাক্ষরতার হার বেড়ে গিয়ে বিপ্লব ঘটছে। এ জন্য কোন শিক্ষক বা প্রশিক্ষকের দরকার হয়নি। একে অন্যের কাছ থেকে শিখে নিয়েছে। তারপরও শেখার ফলোআপ হচ্ছে। যেভাবে মোবাইল কালচার শুরু হয়েছে তাতে যারা অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন হতে চায়নি তারাও বাধ্য হয়েছে বাংলা ইংরেজী বর্ণমালা চিনতে ও লেখা শিখতে। এই অবস্থায় মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো বাংলা বর্ণমালা সংযুক্ত করেছে। স্মার্ট ফোন সেটে ইউনিকোডে বাংলা বর্ণমালা ইনস্টল করা যাচ্ছে। বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের নিরক্ষর অংশ বাংলা বর্ণমালা শিখে নিচ্ছে। দেশ এভাবেও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়েছে। একটা সময় শুধু নাম লিখতে পারলেই সাক্ষরজ্ঞান ধরা হতো। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে সাক্ষরতা অর্জনে লিখতে পারা, পড়তে পারা এবং মনের ভাব প্রকাশ করতে পারাকে সাক্ষরতার যোগ্যতা হিসেবে জোর দেয়া হচ্ছে। তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তিতে (আইসিটি) লিখতে, বলতে, পড়তে পারা, লিখে মনের ভাব প্রকাশ করা, বিদ্যুত ও গ্যাস বিল দেয়া ভিডিও কলে যোগাযোগ করাকে মৌলিক সাক্ষরতা সমৃদ্ধ হিসেবে ধরা হচ্ছে। গ্রামের পথে পা বাড়ালে দেখা যায় জমিতে চাষ, সেচ দেয়ার সময় কৃষকের কোমরে লুঙ্গির ভাঁজের মধ্যে মোবাইল ফোন থাকে। ঘাটের মাঝি, মাঠের রাখাল কেউ বাদ যাচ্ছে না। গৃহস্থ বাড়ি কিষান বাড়ির বধূরাও বর্ণমালা শিখে মোবাইল ফোন ব্যবহারের পাশাপাশি ক্ষুদে বার্তা (সংক্ষিপ্ত কথা টেক্সট) লেখা ও ছবি তোলা শিখছে। বিদেশ বিভূঁইয়ে স্বজনদের সঙ্গে ভয়েস কল। ভিডিও কল করছে। বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহকের সংখ্যা ১০ কোটিরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসিটিকস (পরিসংখ্যান ব্যুরো) বলছে, সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) বলা হয়েছে বিশ্বের সকল দেশকেই ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ সাক্ষরতায় পৌঁছাতে হবে। বাংলাদেশ আশা করছে ডিজিটাল সাক্ষরতার অগ্রযাত্রায় ওই সময়ের আগেই বাংলাদেশ শতভাগ সাক্ষরতায় পৌঁছবে। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার পরই ১৯৯৭ সালে দেশে সাক্ষরতার আন্দোলনকে সফল করতে ৬শ’ ৮৩ কোটি টাকার দুইটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। এর আগে ১৯৯১ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আওয়ামী লীগের প্রথম দফার শাসনামলের শেষে এই হার ৫২ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়। সফলভাবে সাক্ষরতা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করায় ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ইউনেস্কো সাক্ষরতা পুরস্কায় পায়। দিনে দিনে নিরক্ষর মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। এক পরিসংখ্যানে বলা হয় দেশে এখনও নিরক্ষর মানুষের হার শতকরা ২৮ ভাগ। সাক্ষরতার হার আরও বাড়িয়ে দেশকে সামনের দিকে দ্রুত এগিয়ে নিতে সরকার মৌলিক সাক্ষরতা নামের প্রকল্প (৬৪ জেলা) বাস্তবায়ন করছে। উপআনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে দেশের প্রতিটি জেলায় নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরতার আওতায় আনা হচ্ছে। সূত্র জানায়, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্তত ৫০ লাখ নিরক্ষর নারী-পুরুষকে সাক্ষরতা প্রদান করা হবে। সাক্ষরতার হার বাড়ানোর পাশাপাশি আয় বৃদ্ধির সঙ্গে দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা হয়েছে ১১ থেকে ৪৫ বছর বয়সী প্রায় ৫০ লাখ নারী-পুরুষকে। মানব উন্নয়নের জন্য সাক্ষরতা ও অব্যাহত শিক্ষা প্রকল্পের দুইটি পর্যায়ে জীবিকায়নের এই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এর বাইরেও শহরে কর্মজীবী শিশুদের মৌলিক শিক্ষা, সাক্ষরতার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন, মৌলিক সাক্ষরতা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশুদের পুনরায় শিক্ষার আওতার আনাসহ সরকারী-বেসরকারী নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
×