ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়াবহ বিদ্যুত বিপর্যয় ॥ বিপুল লোকসানের শঙ্কায় ব্যবসায়ীসহ আড়ত মালিকরা

সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও বরফ সঙ্কটে ঘাটে শত শত ট্রলার

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৬ আগস্ট ২০১৭

সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও বরফ সঙ্কটে ঘাটে শত শত ট্রলার

মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে ॥ সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও জেলেরা স্বাচ্ছন্দ্যে ইলিশ আহরণ করতে পারছে না। ভয়াবহ বিদ্যুত বিভ্রাটে জেলেরা মাছ সংরক্ষণ করতে পারছে না। ইলিশের মান নষ্ট হয়ে যায়। একবার মাছ শিকার করে কিনারে ফিরলে বরফের জন্য তিনদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তারপরও তিনগুণ দামে বরফের ক্যান (সম্পূর্ণ ভরাট নয়) কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বরফ উৎপাদনে ধস নেমেছে। চাহিদার এক দশমাংশও উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে দক্ষিণের অন্যতম ইলিশের মোকাম মৎস্য বন্দর আলীপুর ও মহিপুরে ভরা মৌসুমে ইলিশের ব্যবসায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বরফের অপেক্ষায় শিববাড়িয়া নদীর দুইপাড়ে আলীপুর-মহিপুরে শত শত ট্রলার ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে। সাগর তেমন উত্তাল নয়। মাছ শিকারের পরিবেশ অনুকূলে রয়েছে। নেই জলদস্যুর তা-ব। তারপরও শুধুমাত্র বিদ্যুত বিভ্রাটে বরফ উৎপাদনে ধস নামায় এমন সঙ্কটকাল চলছে জেলেসহ এ পেশা সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার ব্যবসায়ীর। জাহাঙ্গীর মাঝি জানান, সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। কোনরকম জাল নিয়ে সাগরে যাওয়ামাত্র ট্রলার বোঝাই করে ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফেরা যায়। শুধু বরফের অভাবে জাহাঙ্গীর মাঝির মতো শত শত ট্রলার ঘাটে নোঙর করে বসে আছে। একই দশা ইলিশের পাইকারি ব্যবসায়ী গোপালগঞ্জের সুধারাম বাবুর। ফি বছর তিনি মহিপুর-আলীপুরে ইলিশ কেনেন। দেশের অন্যত্র মোকামে বিক্রি করেন। এবার বরফ সঙ্কটে ভরা মৌসুমেও ব্যবসার বেহালদশা। লোডশেডিংয়ের উন্নতি না হলে এবছরের মতো ব্যবসা গুটিয়ে চলে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তিনি। তার মতে শতাধিক পাইকার এমন সমস্যায় পড়েছেন। আড়ত মালিক আব্দুল জলিল হাওলাদার জানান, দিনে কমপক্ষে ৫০টি ট্রাক নিয়ে অন্য জেলা থেকে বরফ এনে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে। এক ক্যান বরফ যেখানে এক/দেড়শ’ টাকায় কেনার কথা। সেখানে এখন ট্রাক ভাড়া নিয়ে খরচ পড়ছে প্রতি ক্যান বরফ প্রায় পাঁচশ টাকা। মজনু গাজী জানান, অন্তত দুই হাজার মাছধরা ট্রলার বরফের অভাবে সাগরে মাছ শিকারে যেতে পারেনি। শনিবার কথা হয় এসব ব্যবসায়ীসহ আড়ত মালিকের সঙ্গে। সকলের অভিযোগ, বিদ্যুত আসে আবার কয়েক মিনিটের মধ্যে চলে যায়। বরফকল মালিকরাও চরম বিপাকে পড়েছেন। জেলেরা জানান, বর্তমানে ৫শ’ থেকে ৭শ’ গ্রাম সাইজের অসংখ্য ইলিশ সাগরে ধরা পড়ছে। বরফ সঙ্কটে সংরক্ষণের অভাবে ৩৫ হাজার টাকা মণের ইলিশ ২১/২২ হাজার টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ ফজলু গাজী জানান, গত এক মাসে বিদ্যুত সমস্যায় বরফ উৎপাদন ঠিকমতো না থাকায় প্রত্যেকটি মাছধরা ট্রলারে অন্তত ১০ লাখ টাকার লোকসান হয়েছে। আড়তদারদের অন্তত দুই শ’ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। এসব টাকা দাদনে নেয়া। তাই এখন সবাই বিপাকে পড়েছেন। আমেনা আইস প্লান্টের মালিক মোঃ আনোয়ার খান জানান, ২৪ ঘণ্টার দু’ঘণ্টাও বিদ্যুত পাওয়া যায় না। বলতে গেলে বিদ্যুতের অভাবে বরফ উৎপাদন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। বছরের তিন মাস সাধারণত ইলিশ ধরা পড়ে। মৌসুমের অর্ধেক সময় ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে। কুয়াকাটা, মহিপুর, আলীপুরসহ কলাপাড়া উপজেলায় অন্তত ৪০টি বরফকল রয়েছে। সবার দশা এখন এক। মহিপুর আলীপুর মৎস্য বাজারজাত কেন্দ্রটি ধ্বংস করে দিতে কোন মহল ষড়যন্ত্র করছে বলে আড়ত মালিক নিমাই চন্দ্র দাস ক্ষুব্ধ কন্ঠে জানালেন। তার অভিযোগ প্রত্যেক বছর মৌসুম এলেই বিদ্যুত নিয়ে চরম টালবাহানা করা হয়। পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মনোহর কুমার বিশ্বাস জানান, জাতীয় গ্রিডের সমস্যায় ঘন ঘন লোডশেডিং চলছে। দু’একদিন আগেও চাহিদার ২৫ শতাংশ বিদ্যুত সরবরাহ করতে পারেননি। শনিবার থেকে কিছুটা বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছেন বলে এ কর্মকর্তার দাবি।
×