ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিউইয়র্কে হাসপাতালে ঢুকে গুলি ॥ ডাক্তার নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২ জুলাই ২০১৭

নিউইয়র্কে হাসপাতালে ঢুকে গুলি ॥ ডাক্তার নিহত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি হাসপাতালের চাকরিচ্যুত এক চিকিৎসকের গুলিতে ওই হাসপাতালের অপর এক চিকিৎসক নিহত ও অপর ছয়জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার ওই চিকিৎসক একটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে ব্রঙ্কস-লেবানন হসপিটাল সেন্টারে ঢুকে তা-ব চালানোর পর আত্মহত্যা করেন। ঘটনাটিকে ‘কর্মস্থলের সঙ্গে সম্পর্কিত সহিংসতা’ মনে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। খবর বিবিসি ও এএফপির। এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার জেমস ও’নিল জানিয়েছেন, সাদা একটি মেডিক্যাল ল্যাব কোট পরে বন্দুকধারী নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস এলাকার ওই হাসপাতালটিতে গিয়েছিলেন। হামলা চালানোর পর তিনি নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। পরে পুলিশ ওই ভবনটিতে তল্লাশি চালিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় পায়; নিজ বন্দুকের গুলিতে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন ও’নিল। হামলায় এক নারী চিকিৎসক নিহত ও অপর ছয়জন আহত হন। আহতদের মধ্যে পাঁচজনের আঘাত গুরুতর। এ ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল দে ব্লাজিও। ঘটনাটিকে ‘কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত ঘটনা’ বলে মনে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এটি কোন ‘সন্ত্রাসী ঘটনা’ নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এক চিকিৎসক নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যেও কয়েকজন চিকিৎসক রয়েছেন। হামলাকারীকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন তারা।’ হামলাকারী একটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেলে সজ্জিত ছিল বলে জানিয়েছেন ও’নিল। তবে মেয়র বা পুলিশ কেউই তাৎক্ষণিকভাবে সন্দেহভাজন হামলাকারী চিকিৎসকের বা হতাহতদের পরিচয় প্রকাশ করেননি। হামলাকারী চিকিৎসক ৯৭২ শয্যার ওই হাসপাতালের সাবেক কর্মী বলে জানিয়েছেন ও’নিল। ব্রঙ্কস পৌরসভার প্রেসিডেন্ট রুবেন দিয়াজ হামলাকারী চিকিৎসের নাম ডাঃ হেনরি বেলো এবং তাকে হাসপাতালটি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল বলে ডব্লিউএবিসি নিউজকে জানিয়েছেন। অন্যান্য গণমাধ্যম বেলোকে ফ্যামিলি মেডিসিনে বিশেষজ্ঞ ৪৫ বছর বয়সী চিকিৎসক বলে জানিয়েছে। তবে নিউইয়র্ক টাইমস ও দ্য নিউইয়র্ক ডেইল নিউজের প্রতিবেদনে অনামা সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, যৌন হয়রানির অভিযোগে বরখাস্ত হওয়ার আগে নিজেই চাকরি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন বেলো। স্থানীয় সময় বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে (জিএমটি ৮:৫৫) ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ কমিশনার জেমস ও’নিল আরও জানিয়েছেন, হামলাকারী ভবনের ১৬ তলায় প্রথম হামলা চালায় এবং ভবনটির ১৬ ও ১৭ তলায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। হাসপাতলাটির রেডিওলজি বিভাগের রোগী ফিলিক্স পুনো তার টুইটার বার্তায় লিখেছেন, ‘হামলার ঘটনায় আমরা পুরোপুরি ভীত হয়ে পড়ি। হামলার সময় আমি এক্সরে করছিলাম, তখন নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’ এদিকে হাসপাতালটির এক কর্মীর বাগদত্তা গ্রে ট্রিম্বল জানান, হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট ভাল ছিল না। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালটিতে কোন একজন কর্মীর সঙ্গে পেছনের দরজা দিয়ে আমি ভেতরে হেঁটে যেতে পারি। সেই কর্মী যখন দরজা খুলছেন, আমি তখন ভেতরে প্রবেশ করতে পারছি। আমি মনে করি, প্রতিটি হাসপাতালের প্রবেশ পথে অন্তত একজন পুলিশ কর্মকর্তা থাকা দরকার। যখন কিছু ঘটবে তারা কেবল তখনই কিছু করবে না তার আগেই ব্যবস্থা নেবে।’ ব্রঙ্কস-লেবানন একটি অলাভজনক বেসরকারী হাসপাতাল, যেটি প্রায় ১২০ বছর ধরে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। হাসপাতালে সাধারণত গোলাগুলির ঘটনা ঘটে না। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। ২০১৫ সালে দেশটির বোস্টন হাসপাতালের ভেতর একজন কার্ডিওলজিস্টকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে অনুসন্ধানের সময় বেরিয়ে আসে যে, যে লোকটি গুলি চালিয়ে ওই চিকিৎসককে হত্যা করেছে তার মা এক সময় ওই হাসপাতালে রোগী হিসেবে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। এদিকে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে ফ্লোরিডায় একটি মেডিক্যাল সেন্টারের ভেতরে একজন বয়স্ক নারী ও একজন হাসপাতাল কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত বছরের জুলাইয়ে আরেকটি ঘটনা ঘটে বার্লিনে। সেখানের একটি হাসপাতালের এক রোগী এক চিকিৎসককে গুলি করে হত্যা করে। এ বছর শুরুর দিকে শহরটির আরেকটি হাসপাতালের বাইরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তবে এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
×