ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

চালের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে আমদানি শুল্ক হ্রাস

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২১ জুন ২০১৭

চালের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে আমদানি শুল্ক হ্রাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অস্থির চালের বাজারের লাগাম টেনে ধরতে এবার আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাজারে চালের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বেসরকারী পর্যায়ে চাল আমদানির ক্ষেত্রে সাময়িক সময়ের জন্য আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার বা হ্রাসের দাবি জানিয়ে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা। আমদানি শুল্কের বিষয়টি বিবেচনার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকেও (এনবিআর) চিঠি দিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। কৃষকের স্বার্থ ক্ষুণœ হবে এমন অজুহাতে এনবিআর তার অবস্থান থেকে সরে আসেনি। সদ্য ঘোষিত আমদানি শুল্ক হ্রাসের প্রভাব দ্রুত সময়ের মধ্যেই বাজারে পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সরকার ঘোষিত এই সিদ্ধান্তের ফলে বেসরকারী পর্যায়ে চাল আমদানি উৎসাহিত হবে। একই সঙ্গে বাজারে বাড়বে চালের সরবরাহ। আর যোগান বৃদ্ধির কারণে দ্রুতই চালের দাম কমবে বলে তাদের অভিমত। মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, সরকার চাল আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে রেগুলার ডিউটি পুরোপুরি তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সচিবালয়ে কম্পিটিশন আইন নিয়ে এক কর্মশালার শুরুতেই মন্ত্রী শুল্ক কমানোর এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, শীঘ্রই এ বিষয়ে আদেশ জারি হবে। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে বাজার দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আমরা আশা করছি। ইতোমধ্যে সরকারী পর্যায়েও চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করা যায় বাজার দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এতদিন বিদেশ থেকে চাল আমদানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি দিতে হতো। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ৩ শতাংশ রেগুলার ডিউটি পুরোপুরি উঠে যাবে। একই সঙ্গে চাল আমদানিতে শুল্ক কমেছে ১৫ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরে শুল্ক হ্রাসের দাবি জানিয়ে আসছিল চালের বেসরকারী আমদানিকারকরাও। সরকার ঘোষিত এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তাদের দাবি বাস্তবায়ন ঘটছে। এদিকে সরকারী গুদামে চালের মজুদ তলানিতে। আকস্মিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ৬ থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন চালের মজুদ রাখা বাধ্যতামূলক হলেও বর্তমানে সরকারী গুদামে চালের মজুদ মাত্র ২ লাখ মেট্রিক টন। এমন পরিস্থিতিতে অধিক মুনাফার লোভে চালকল মালিকরাও বাজারে তেমনভাবে চাল পাঠাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও চালের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেননি খাদ্যমন্ত্রী। এমনকি কবে নাগাদ সরকারী পর্যায়ে দেশে চাল আসবে তারও সুনির্দিষ্ট কোন ইঙ্গিত নেই। তবে বেসরকারী পর্যায়ে চাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাসের এই সিদ্ধান্তের ফলে বাজারে দ্রুত সময়ে চালের সরবরাহ বাড়বে বলেই বিশ্লেষকদের অভিমত। আর চাল আমদানি বাড়তে থাকার কারণে দ্রুত সময়ে চালের দাম কমবে বলে মনে করছেন তারা। এদিকে চালের দাম কমাতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যবসায়ীদের চাল আমদানিতে বিনা মার্জিনে ঋণপত্র খোলার সুযোগ দিয়েছে সরকার। সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাল আমদানির এলসি খুলতে ব্যাংকগুলো কোন ‘মার্জিন’ ধার্য করতে পারবে না। অর্থাৎ, চাল আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলার সময় ব্যবসায়ীদের এ্যাকাউন্টে কোন টাকা থাকতে হবে না। তারা বাকিতে চাল আমদানি করতে পারবেন এবং চাল দেশে আসার পর ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে পারবেন। হাওরাঞ্চলে বন্যা, দেশের বিভিন্ন এলাকায় অতি বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চালের স্বাভাবিক সরবরাহে বিঘœ ঘটায় চালের বাজারে অস্থিতিশীলতা নিরসনে এই উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে। হাওড়ের ৬ জেলায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় মৌসুমটিতে বোরোর উৎপাদন কম হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্লাস্ট রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। তবে সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন সম্পর্কে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যায়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বিশ্বস্ত সূত্রের ভাষ্য, উৎপাদন নিয়ে যতটা শঙ্কা আর সংশয় দেখা দিয়েছিল তার তুলনায় প্রকৃতপক্ষে নেতিবাচকতার মাত্রা বহুগুণে কম। কৃষিবিদরা মনে করছেন, ভুল তথ্য প্রবাহের কারণে বাজারে চালের দাম বেড়েছে। কেউ কেউ বলছেন, চলমান বন্যার সময়েই যদি খাদ্যমন্ত্রী চাল আমদানির ঘোষণা না দিতেন তাহলে বাজারে চালের দাম এত বাড়ত না। তবে সরকার ঘোষিত একাধিক পদক্ষেপের কারণে চালের বাজার দ্রুতই নিম্নগামী হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, বাজারে দ্রুত সময়ের মধ্যে চালের দাম কমতে পারে।
×