ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় কৌশল নির্ধারণ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২৩ মার্চ ২০১৭

রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় কৌশল নির্ধারণ হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব পরিবর্তন ও যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বাণিজ্যে কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি ও রফতানি বাণিজ্য যাতে কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হতে পারে তার কৌশল নির্ধারণ করছে সরকার। গত কয়েক মাস ধরে রফতানি বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে এসেছে। কমে গেছে রেমিটেন্স প্রবাহ। বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে রেমিটেন্স, আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম সম্পৃক্ত রয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ব্রেক্সিট ও মার্কিন নেতৃত্বের পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিম-লে যে মেরুকরণ শুরু হয়েছে সেই ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে বাংলাদেশেও। সূত্র মতে, বাংলাদেশী পণ্য রফতানির সবচেয়ে বড় বাজারের একটি হলো ইউরোপ। এছাড়াও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশ। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের মূল্যমানের পণ্য যুক্তরাজ্যে রফতানি হয়, যেখানে এককভাবে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ অপ্রচলিত পণ্যও যুক্তরাজ্যে রফতানি হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, ২৮ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগের যে সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্য নিয়েছে, তার বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে পড়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাতে। ব্রেক্সিট নামে পরিচিত এই বিচ্ছেদের ঘোষণায় যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ডের ব্যাপক দরপতন ঘটে। যার ফলে আমদানি খরচ কমাতে যুক্তরাজ্যের ফ্যাশন প্রতিষ্ঠানগুলো আরও কম দামে পণ্য তৈরির জন্য বাংলাদেশের সরবরাহকারীদের চাপ দিচ্ছে। ফলে চাহিদামতো দাম কমিয়ে বাজার ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। এ শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, কারখানা কমপ্লায়েন্স এবং শ্রমমান উন্নত করতে হলে আগে পোশাকের দাম বাড়াতে হবে। অন্যথায় এ শিল্পের অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে, ব্রেক্সিটের প্রভাব ও মার্কিন নেতৃত্ব পরিবর্তনে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যেসব প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে তা থেকে উত্তরণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি কৌশল নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (রফতানি) সভাপতিত্বে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকের পর একটি সারসংক্ষেপ প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। ইতোমধ্যে এ সঙ্কট সমাধানে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শুভাশিষ বোস জনকণ্ঠকে বলেন, ব্রেক্সিট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে কিছুটা পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের রফতানিও কিছুটা কমে গেছে। বিষয়টি সরকারের নজরে আছে এবং গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, রূপকল্প-২১ অনুযায়ী ৬০ বিলিয়ন ডলারের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই রফতানি কমার কোন সুযোগ নেই। রফতানি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর কৌশল নির্ধারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, নতুন বাজার অনুসন্ধান এবং অপ্রচলিত পণ্যের রফতানি বাড়াতে আগামী বাজেটে প্রণোদনা প্রদানে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া পণ্যের ডিজাইন ও গুণগতমান বাড়ানোর উপর জোর দেয়া হয়েছে। সরকারের এসব উদ্যোগের ফলে রফতানি প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এদিকে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) হতে যুক্তরাজ্যের সদস্যপদ প্রত্যাহারের গণ রায়ের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। সংগঠনটি মনে করে, ব্রেক্সিট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, যেটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পাশাপাশি ইউরোপের ব্যবসায়িক কর্মকা-ের চলমান অগ্রগতির ধারাকে ব্যাহত করতে পারে। যুক্তরাজ্যের এ সিদ্ধান্ত সারাবিশ্বে নতুন একটি ভূ-রাজনৈতিক ধারার পাশাপাশি একটি ভূ-অর্থনৈতিক ধারা সৃষ্টি করতে পারে। শুধু তাই নয়, ব্রেক্সিটের ধাক্কা বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধার আওতায় পণ্য রফতানি এবং বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহের ধারাকে প্রভাবিত করবে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও যুক্তরাজ্য কর্তৃক বাংলাদেশে পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর কর্মকা- বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে পাউন্ড স্টারলিং ও ইউরো’র অবমূল্যায়ন বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যে বিশেষ করে তৈরি পোশাক রফতানিতে মন্দা প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রফতানির ৫৫ শতাংশ ইইউভুক্ত দেশগুলোতে ও ১২ শতাংশ যুক্তরাজ্যে গিয়ে থাকে। ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের এ অবমূল্যায়ন বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহে মন্দাবস্থা তৈরি করতে পারে। এদিকে, পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএয়ের দেয়া হিসেব অনুযায়ী, ব্রেক্সিটের প্রভাবে যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি কমতে শুরু করেছে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বরে ১৬১ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি হয়। এই আয় তার আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের চেয়ে ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ কম।
×