ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় গানে গানে বাংলাদেশ ও নেপালের বন্ধুত্ব উদযাপন

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শিল্পকলায় গানে গানে বাংলাদেশ ও নেপালের বন্ধুত্ব উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গানের সুরে সুরে উদ্যাপিত হলো দুই মধ্যকার বন্ধুত্ব। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের সৌহাদপূর্ণ সম্পর্কের স্মারক হিসেবে অনুষ্ঠিত সঙ্গীতসন্ধ্যা। দুই দেশের নন্দিত কণ্ঠশিল্পীদের অংশগ্রহণে সঙ্গীত আসরটি অনুষ্ঠিত হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে। সুরের আশ্রয়ে শ্রোতাদের উচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে দেয়া এ আয়োজনে গান শোনান লোকগানে বাংলার অহঙ্কার মমতাজ। আর নেপালের শিল্পীদের মধ্যে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিশির ইয়োগী ও রীতা কেসি। সঙ্গীতের এ আয়োজনে বাংলা ও নেপালী ভাষার নানা স্বাদের গানের সঙ্গে নেপালী নৃত্য পরিবেশন করেন সে দেশের একঝাঁক শিল্পী। বাংলাদেশ-নেপাল সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা নামের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ-নেপাল ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি। সহযোগিতা করেছে ঢাকার নেপাল দূতাবাস। সঙ্গীতসন্ধ্যাটির দর্শনী থেকে প্রাপ্ত অর্থ ফিরোজা বারি প্রতিবন্ধী শিশু হাসপাতালের তহবিলে প্রদান করা হবে বলে জানায় আয়োজক কর্তৃপক্ষ। আয়োজনের শুরুতে পরিবেশিত হয় বাংলাদেশ ও নেপারের জাতীয় সঙ্গীত। এরপর প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ-নেপাল ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটির সভাপতি এমদাদুল হক, কণ্ঠশিল্পী মমতাজ এবং নেপালের শিল্পী শিশির ইয়োগী ও রীতা কেসি। দুই দেশের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক একইসঙ্গে ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যগত। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পাশে ছিল নেপালের জনগণ। এ কারণেই দুই দেশের বন্ধুত্ব অনেক পুরনো এবং অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আর বিশ্বব্যাপী জেগে ওঠা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে শক্তি যোগাবে পারস্পরিক এই সংস্কৃতি বিনিময়। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার শুরুতেই ছিল নেপালী শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর নাচের উপস্থাপনা। এরপর মঞ্চে আসেন শিশির ইয়োগী। মিলনায়তনে সমাগত নেপালী শ্রোতাদের মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে এই শিল্পী গেয়ে শোনান ‘ইয়ো দেশ মা মা ইয়েতা’সহ বেশ কয়েক গান। রীতা কেসি গেয়ে শোনান ‘পাহারা কো সায়নো মেরা গুরুশা’সহ কয়েক গান। সব শেষে মঞ্চে আসেন মমতাজ। অনবদ্য কণ্ঠের খেলায় শ্রোতাদের মাঝে বুন দেন মুগ্ধতার বীজ। গেয়ে শোনান ‘না জানি কোন অপরাধে দিলা এমন জীবন’ ও ‘আগে যদি জানতাম রে বন্ধু তুমি হইবা পর’। ভাষার মাসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গেয়ে শোনান ‘হিন্দী, উর্দু, ফার্সী নয় আমি বাংলাতে গান গাই’। নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে পোড়মাটির মেলা ॥ পরম মমতায় কোলের মাঝে সন্তানকে আগলে রেখেছেন স্নেহময়ী এক মা। কাদামাটি পুড়িয়ে গড়া নান্দনিক এই মৃৎশিল্পটি এখন শোভা পাচ্ছে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে। একটু চোখ মেলে তাকাতেই নজরে আসে চায়ের একটি কাপকে ঘিরে পিরিচের আশপাশে জড়ো হওয়া চার পাখির আরেকটি শিল্পকর্ম। গ্যালারিতে ঢুকতেই যেন স্বাগত জানায় হাতির পিঠে সওয়ার হওয়া এক দেবীর ভাস্কর্য। ওই দেবীর এক হাতে শোভা পাচ্ছে ন্যায় বিচারের প্রতীক দাড়িপাল্লা। এমন বহুবিধ বিষয়ের নয়নজুড়ানো মৃৎশিল্প ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে বিশাল গ্যালারিজুড়ে। আছে টেপা পুতুল থেকে শুরু করে রয়েছে মাটির তৈরি হাতি, ঘোড়া, নৌকা, ফুলদানি, প্রদীপ, মাছ, হাড়ি, কলস, সরাসহ নিত্যপ্রযোজনীয় ও গৃহসজ্জার নির্মিত অজস্র নান্দনিক মৃৎশিল্প। আর এই মৃৎশিল্পগুলো গড়েছেন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারসংলগ্ন মিঠাপুর ও জামালপুর নামের দুই গ্রামের মৃৎশিল্পীরা। ইউনেস্কোর সহায়তায় বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ আয়োজিত এই দুই গ্রামের ২৬ মৃৎশিল্পীকে নিয়ে কর্মশালার ফসল হচ্ছে এসব শিল্পসম্ভার। সেসব শিল্পসম্ভার নিয়ে কারুশিল্প পরিষদের আয়োজনে শুক্রবার থেকে শুরু হলো পোড়ামাটির মেলা ও প্রদর্শনী। শুক্রবার বিকেলে জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে মেলা ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়। এতে আয়োজনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি চন্দ্র শেখর সাহা। আলোচনায় অংশ নেন প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেন, জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, ইউনেস্কোর ঢাকা অফিসের প্রধান বেট্রিস কালদুন ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব আকতারী মমতাজ। চন্দ্র শেখর সাহা বলেন, একটি কর্মশালার পাহাড়পুরের মিঠাপুর ও জামালপুর গ্রামের মৃৎশিল্পীরা যে শিল্পকর্ম সৃজন করেছে তা একইসঙ্গে নান্দনিক ও অভূতপূর্ব। এ যেন দেশের মৃৎশিল্পে ভবিষ্যতের জন্য এক নতুন গল্প তৈরি হলো। আলতাফ হোসেন বলেন, আশা করি মৃৎশিল্পের এই শিল্পীদের উদ্ভাবন সহজেই হারিয়ে যাবে না। সে জন্য তাদের সৃজন কর্মের বাজার তৈরি করতে হবে। তারা যে মানের মৃৎশিল্প গড়েছে সেটা এখন দেশের পাশাপাশি বিদেশে ছড়িয়ে দেয়ারও উদ্যোগ নিতে হবে। নাগরিক মনকে শিখড়ের পানে ধাবিত করা এ প্রদর্শনী চলবে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। মাহবুবুল হক শাকিলের গল্পগন্থের প্রকাশনা ॥ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর পরিচয় ছাপিয়ে কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন মাহবুবুল হক শাকিল। ৬ ডিসেম্বর আকস্মিকভাবেই পাড়ি জমান অদেখা ভুবনের পাড়ি জমানোর তিনি লিখেছিলেন ছয়টি গল্প। সেই গল্পগুলো নিয়ে প্রকাশিত হলো গল্পগ্রন্থ ‘ফেরা না-ফেরার গল্প’। গল্পগুলোতে মূর্ত হয়ে উঠেছে চারপাশের বাস্তবতা, বন্ধুত্ব, দেশপ্রেম, জঙ্গীগোষ্ঠীর অপতৎপরতা, শেকড়চ্যুত মানুষের একাকিত্ব ও যন্ত্রণা ইত্যাদি। শুক্রবার বিকেলে গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসবে অংশ নিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ঘোষণা দিয়েছেন, মাহবুবুল হক শাকিলের তিনটি কাব্যগ্রন্থ ও এই গল্পগ্রন্থটি নিয়ে রচনাসমগ্র প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি। ‘ফেরা না-ফেরার গল্প’ গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। শাকিলের গল্প নিয়ে কথা বলেন, তিন খ্যাতিমান কথাশিল্পী সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ইমদাদুল হক মিলন ও মঈনুল আহসান সাবের। আরও বক্তব্য রাখেন শাকিলের পিতা ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট জহিরুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইটির প্রকাশক অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। সভাপতির বক্তব্যে শামসুজ্জামান খান বলেন, মাহবুবুল হক শাকিলের ৩টি কাব্যগ্রন্থ ও একটি গল্পগ্রন্থ নিয়ে চারটি বইয়ের একটি সংকলন গ্রন্থ প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি। শাকিলের বইগুলোর সংকলন প্রকাশের বিষয়ে সব প্রকাশনীই এগিয়ে আসবে। তবে বাংলা একাডেমি যদি কাজটি করে তাহলে লেখক হিসেবে শাকিলের একটা জাতীয় স্বীকৃতি আসবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শাকিলের কবিতার বইয়ের ভূমিকা লিখতে গিয়ে বুঝলাম সে অনেক বড় মাপের লেখক। সে প্রচারের না, ছিল স্নেহের কাঙ্গাল। বন্ধু ও গুরুজনদের কাছ থেকে নিজের সব দাবি আদায় করে নেয়ার মতো গুণ ছিল শাকিলের। মঈনুল আহসান সাবের বলেন, গৌরবে, মেধা, মননে আর আন্তরিকতায় শাকিল এখনও আমাদের মাঝে বেঁচে আছে। একজন কবি হয়েও গল্প নির্মাণের সব গুণাবলীই তার মাঝে ছিল। তার প্রতিটি গল্পই মানসম্পন্ন। একটি গল্প থেকে আরেকটি গল্প একট সবল বা দুর্বল হতে পারে, কিন্তু মানের দিক থেকে প্রতিটি গল্পই অসাধারণ। এ সময় তিনি মাহবুবুল হক শাকিলের নামে সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তন ও তার বইয়ের সংকলন প্রকাশের প্রস্তাব করেন তিনি। অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘ফেরা না-ফেরার গল্প’ গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। মূল্য দেড়শ টাকা। এশিয়ান কিউরোটিয়াল ফোরামের দ্বিতীয় দিন ॥ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে চলছে এশিয়ার ১০ দেশের কিউরেটরদের অংশগ্রহণে এশিয়ান কিউরোটিয়ার ফোরাম। এই ফোরামের দ্বিতীয় দিন ছিল শুক্রবার। যৌথভাবে ফোরামের আয়োজন করেছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, বৃত্ত আর্টস ট্রাস্টম বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং তাইওয়ানের কুয়ান্দু চারুকলা জাদুঘর ও জাতীয় সংস্কৃতি ও শিল্পকলা ফাউন্ডেশন। দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে ঢাকা আর্ট সামিট বিষয়ক উপস্থাপনা তুলে ধরেন সামদানি আর্টের অপারেশনাল ডিরেক্টর এমিলি ডলান এবং সামদানি আর্টের সহকারী কিউরেটর রুক্সমিনি চৌধুরী। মূল আলোচনা পর্বের বিষয় ছিল ‘নতুন কথোপকথনের গঠন’। এ আলোচনায় অংশ নেন ভিয়েতনামের জিরো স্টেশন নামক আর্ট স্পেসের প্রতিষ্ঠাতা নুহুই গ্যেন, তাইওয়ানের কিউরেটর নিয়েন পু এলিস কো, শ্রীলঙ্কার রেকিং লিভসের প্রতিষ্ঠাতা শারমিনি পেরেইরা এবং ভারতের ফাউন্ডেশন ফর ইন্ডিয়ান কনটেম্পোরারি আর্টের ডিরেক্টর বিদ্যা শিভাদাশ। এ আলোচনায় বক্তারা নিজস্ব কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের বিবরণ এবং উপস্থপনা পেশ করেন। সেই সঙ্গে কিউরেটিং ধারণাটি নিয়ে কাজের মাধ্যমে এশিয়ার কিউরেটররা যে নতুন কথোপকথন সৃষ্টি করে যাচ্ছেন সে বিষয়টি তুলে ধরেন। এছাড়া দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে কিউরেটরর ডেইলি স্টার-বেঙ্গল আর্টস প্রিসিঙ্কট, বৃত্ত আর্ট ট্রাস্ট এবং পাঠশালা পরিদর্শন করেন। এই ফোরামে সমবেত হয়েছেন এশিয়ার ১০ দেশের ১৩ পেশাদার শিল্পী এবং কিউরেটর যারা এই মহাদেশে শিল্প কিউরেটিং বিষয়ে বিভিন্ন ধারণা এবং চর্চার ক্ষেত্র নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করার উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছেন। তরুপল্লবের গাছ চেনানোর অনুষ্ঠান ॥ প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন তরুপল্লব ২০০৮ সাল থেকে গাছ দেখা গাছ চেনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সকালে রমনা পার্কের মহুয়া চত্বরে সংস্থার ২৪তম গাছ চেনানোর কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বৃক্ষপ্রেমীদের গাছ চিনিয়েছেন বরেণ্য নিসর্গী অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা, প্রকৃতিবিদ বিপ্রদাশ বড়ুয়া, বোটানিস্ট শামসুল হক, পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক ও মোকারম হোসেন।
×