ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাতকদের স্বীকারোক্তি, লাশের সন্ধান মেলেনি

কুমিল্লায় স্কুলছাত্র হৃদয়ের কিলিং মিশনে অংশ নেয় ৫ সন্ত্রাসী

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

কুমিল্লায় স্কুলছাত্র হৃদয়ের কিলিং মিশনে অংশ নেয় ৫ সন্ত্রাসী

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ২৭ ডিসেম্বর ॥ স্কুলছাত্র আবু তাহের হৃদয়কে অপহরণের পর হত্যা করে বস্তাবন্দী লাশ তিতাস নদীতে নিক্ষেপসহ কিলিং মিশনে ৫ সন্ত্রাসী অংশ নেয়। এ ঘটনায় গ্রেফতার ৪ ঘাতক মোবাইল ফোনে হৃদয়ের পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবিসহ চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। ঘাতকদের দেখানো তিতাস ও মেঘনা নদীতে গত দু’দিন ধরে ডুবুরিদের একাধিক দল অভিযান চালিয়েও মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হৃদয়ের লাশের সন্ধান পায়নি। লাশের অপেক্ষায় হৃদয়ের স্বজনসহ হাজারো জনতা মঙ্গলবারও নদীপাড়ে ভিড় জমায়। হৃদয় জেলার তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের মধ্য আকালিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী বশির আহমেদ বাচ্চু মিয়ার একমাত্র ছেলে। বাতাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র ছিল সে। গত ২১ ডিসেম্বর বিকেলে ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য হৃদয়কে তার ফুপাতো বোনের ছেলে মাহিন বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিল ছেলেটি। পরদিন বৃহস্পতিবার বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে এবং রাস্তায় রাস্তায় মাইকিং করে পরিবার। পরে ওইদিন সন্ধ্যার দিকে একটি মোবাইল থেকে ফোন আসে। ফোনে বলা হয়, আপনার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। আমাদের হেফাজতে আছে। ২০ লাখ টাকা দিলে আমরা তাকে ছেড়ে দেব। অন্যথায় হৃদয়ের লাশ পাবেন- একথা বলে ফোনটি কেটে দেয়া হয়। এরপর রাতে আরেকবার ফোন করে জানতে চাওয়া হয় টাকা জোগাড় হয়েছে কি-না? জবাবে হৃদয়ের পিতা বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘কিভাবে টাকা পাঠাতে হবে?’ এরপর অপহরণকারীরা পরে জানানো হবে বলে লাইন কেটে দিয়ে আর কোন ফোন করেনি। বিষয়টি তিতাস থানা পুলিশকে জানায় হৃদয়ের পরিবার। পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে শুক্রবার সকালে সন্দেহভাজন হিসেবে উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মধ্য আকালিয়া গ্রামের মতিন বেপারির ছেলে মোহাম্মদ আলী ওরফে সিলভার মোঃ আলীকে আটক করে। আটকের দুই দিন পর একই গ্রামের বর্তমান মেম্বার রেণু মিয়াকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে রেণু মিয়া তার ছেলে রিয়াদকে (২৫) পুলিশের নিকট ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে আসে। এরপর একই গ্রামের নজরুলের ছেলে মাহিন (২৪) ও কালাই গোবিন্দপুরের জাকিরের ছেলে সাকিবকে (২৩) আটক করে জেলা সিআইডি ও তিতাস থানা পুলিশ। কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলী আশ্রাফ জানান, গ্রেফতারকৃতরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর জবানবন্দী দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, হৃদয়ের কিলিং মিশনে অংশ নেয় ৫ সন্ত্রাসী। তারা হচ্ছে- মোহাম্মদ আলী, রিয়াদ, মাহিন, আল আমিন ও সোহেল। অপহরণের পরই হৃদয়কে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে গ্রেফতারকৃত রিয়াদ ও মাহিন হৃদয়ের দু’হাত ধরে রাখে এবং মোহাম্মদ আলী নাক-মুখ চেপে ধরলে রাতের অন্ধকারে ওই খেলার মাঠেই হৃদয় মারা যায়। এ সময় পাহারার দায়িত্বে ছিল সন্ত্রাসী সোহেল ও অস্ত্র মামলায় জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে আসা আল আমিন। পরে হৃদয়ের লাশ একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে শক্ত করে মুখবন্ধ করা হয়। এরপর সিএনজিযোগে হোমনা-বাঞ্ছারামপুর সড়কের সংযোগ সেতুর (হোমনা ব্রিজ) ওপর নিয়ে তিতাস নদীতে লাশ ফেলে দেয়া হয়। হৃদয়কে হত্যার পর সন্ত্রাসীরা সাকিবের মোবাইল ফোন দিয়ে তার পরিবারের নিকট ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপহরণকারীদের এমন রোমহর্ষক বর্ণনার ভিত্তিতে সোমবার থেকে হৃদয়ের লাশ উদ্ধারে নামে পুলিশের একাধিক টিম। সোম ও মঙ্গলবার ৪ ট্রলারসহ স্থানীয় ডুবুরিরা ৩টি মাছ ধরার বড় জাল নিয়ে এবং চাঁদপুর থেকে আসা ডুবুরীদের একটি দল তিতাস ও মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, তিতাস নদীর যেখানে লাশটি ফেলা হয় সেখান থেকে খরস্রোতা মেঘনা নদীর দূরত্ব প্রায় ২ কিলোমিটার। তাদের ধারণা, প্রবল স্রোতে লাশটি মেঘনার গহীন জলে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া প্লাস্টিকের বস্তায় শক্ত করে মুখবন্ধ করার কারণে লাশ ফুলে-ফেপে ভেসে ওঠার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। বিকেল ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। গ্রেফতারকৃত ৪ সন্ত্রাসীকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদানের জন্য কুমিল্লার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
×