ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় সংলাপের বিকল্প নেই- রাষ্ট্রপতি ;###;বিএনপির মতে সঙ্কট উত্তরণের অভিভাবক রাষ্ট্রপতি

সংলাপ ফলপ্রসূ- বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬

সংলাপ ফলপ্রসূ- বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সব রাজনৈতিক দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বিএনপি। বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করে দলটি। রবিবার বিকেলে বঙ্গভবনে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপের সূচনা দিনে এ বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে সংলাপে রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় সংলাপের কোন বিকল্প নেই। আপনাদের মতামত পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। যে কোন বিষয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় সমাধানের বহুমুখী পথের সন্ধান দেয়। বৈঠক শেষে এ তথ্য দেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন। সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সংলাপ শুরু হয়েছে। রবিবার বিকেলে বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপির ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বৈঠকে খালেদা জিয়া ও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও প্রতিনিধি দলে ছিলেনÑ স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বৈঠক শেষে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এর আগে নির্বাচন কমিশন নিয়ে খালেদা জিয়া যে ১৩ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে সেগুলোই মূলত উপস্থাপন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপকে অত্যন্ত ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ ও উষ্ণতম’ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে গঠনমূলক ও সুন্দর প্রস্তাব উত্থাপন করায় রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সংলাপে রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংলাপের কোন বিকল্প নেই। রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির জন্য কারও নামের প্রস্তাব দিয়েছেন কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছি। তবে আজকের সংলাপটি ছিল প্রাথমিক। রাষ্ট্রপতি আমাদের জানিয়েছেন, তিনি আমাদের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখবেন এবং অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর তার পর্যালোচনার কার্যক্রম শেষ করতে এক মাস লাগবে। আমরা আশা করছি, রাষ্ট্রপতি পর্যালোচনা শেষে আমাদের আবারও সংলাপে ডাকবেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রপতি আন্তরিকভাবে দেশের সঙ্কট উত্তরণে চেষ্টা করবেন বলে আমরা আশাবাদী। বিএনপির মহাসচিব বলেন, সংলাপে সব রাজনৈতিক দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনও কোন আইন তৈরি হয়নি। এ কারণে সব রাজনৈতিক দলের মতৈক্যের কোন বিকল্প নেই বলে আমরা মনে করি। আমরা রাষ্ট্রপতিকে বাছাই কমিটি গঠন, নির্বাচন কমিশন গঠন ও আরপিও সংশোধনের বিষয়ে জানিয়েছি। এ তিনটি বিষয়ের ওপর আমরা বেশি জোর দিয়েছি। বাছাই কমিটির সদস্য মনোনয়ন পদ্ধতিও জানানো হয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতি এ পদ্ধতিগত বিষয়টি পর্যালোচনা করবেন। সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি আজকেই (রবিবার) প্রথম বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসলেন। রাষ্ট্রপতি এ বিষয়ে বলেছেন, যেহেতু আপনারাই প্রথম আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন, তাই আপনাদের (বিএনপি) প্রথমেই ডেকেছি। তিনি বলেছেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা জরুরী। আশা করি, সবাই এতে থাকবেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় আমরা খুশি ও আশাবাদী। আমাদের আশা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এখন রাষ্ট্রপতি বাছাই কমিটির পদ্ধতি নির্বাচন করবেন। তিনি আগামী মাসের মধ্যেই এ প্রক্রিয়া শেষ করবেন বলে আমরা আশাবাদী। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সংলাপকালে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন জাতির জন্য প্রয়োজন। এজন্য তিনি সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতাও কামনা করেছেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি রাজনীতি করেছেন। তাই আশা করছি রাষ্ট্রপতি সঙ্কট উত্তরণে আন্তরিক চেষ্টা করবেন এবং চলমান সংলাপ অব্যাহত রাখবেন। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন আরও জানান, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনার আমন্ত্রণ জানানোয় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ দেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। নির্বাচন কমিশন ও সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি একটি লিখিত প্রস্তাব আলোচনায় তুলে ধরেন। এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন ও নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণে তাদের প্রস্তাবও তিনি তুলে ধরেন। বিএনপি রাষ্ট্রপতির এ উদ্যোগের সফলতা কামনা করেছে এবং এ ব্যাপারে তাদের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে বলে জানিয়েছে। প্রথমেই বিএনপি নেত্রীর কুশল জানতে চাইলেন রাষ্ট্রপতি ॥ খালেদা জিয়ার গাড়ি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গভবনে পৌঁছলে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম খান তাকে স্বাগত জানান। সাতটি গাড়িতে করে বিএনপি প্রতিনিধি দলের ১১ সদস্য তার আগেই বঙ্গভবনে প্রবেশ করে। বৈঠক সূত্র জানায়, বিকেল ৪টা ৩৭ মিনেটে সংলাপ শুরুর আগে বঙ্গভবনের দরবার হলে এসেই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কুশল জানতে চান। উত্তরে খালেদা জিয়া বলেন, তিনি ‘মোটামুটি’ আছেন। রাষ্ট্রপতি এ সময় তার স্পীকার থাকার দিনগুলোর কথা স্মরণ করে সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে বলেন, ‘আগে সংসদে থাকতে তো দেখা হতো। এখন তো আমি দূরে থাকি।’ বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে আলোচনা শেষে সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। বঙ্গভবনের অক্টাগনালে দাঁড়িয়ে বিএনপি প্রতিনিধি দলের সদস্যদের বিদায় জানান তিনি। এর আগে বিকেল ৩টায় গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে রওনা হন খালেদা জিয়া। বিএনপির দলীয় পতাকা লাগানো ওই গাড়িতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। তবে বঙ্গভবনে পৌঁছার পর দরবার হলে থাকার সুযোগ হয়নি তার। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। আগামী ফেব্রুয়ারিতে এ কমিশনের মেয়াদ শেষে নতুন যে ইসি দায়িত্ব নেবে, তার অধীনেই ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন। এবারও যে রাষ্ট্রপতি ‘সার্চ কমিটি’ করে নতুন কমিশন নিয়োগ দেবেন, সে বিষয়টি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আগেই জানিয়েছিলেন। এরপর চলতি মাসের শুরুতে বঙ্গভবনের কর্মকর্তারা সংলাপের প্রস্তুতি শুরু করেন এবং ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন চূড়ান্ত সূচী সাংবাদিকদের জানান। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পাটির সঙ্গে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় সংলাপে বসবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। পরদিন বিকেল ৩টায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও সাড়ে ৪টায় কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ এবং আগামী বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় সরকারের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে বসার কথা রয়েছে রাষ্ট্রপতির। প্রথম পাঁচটি দলের পর চলতি সপ্তাহে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে আলোচনায় অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ দিয়ে চিঠি পাঠানো হবে বলে বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে।
×