ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের অবদান কম নয় ॥ সিনহা

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের অবদান কম নয় ॥ সিনহা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছে সুপীমকোর্র্ট। ‘আপনারা আইনজীবীরা যদি আমাদের প্রতি হাত শক্ত না করেন (আমাদের যদি সহযোগিতা না করেন), তাহলে আমরা কোন মতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারব না। আমরা অনেক চেষ্টা করছি, বিশেষ করে সুপ্রীমকোর্ট। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি’। ‘আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে আইনজীবীদের অবদান কম নয়। আইনজীবীদের বাদ দিয়ে আইনের শাসন চিন্তাই করতে পারি না’। সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য ও বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের পিতা এম. আব্দুর রহিমের স্মরণ সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে জাতীয় আইনজীবী সমিতি এ স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, জমির উদ্দিন সরকার ও আবদুল বাসেত মজুমদার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর দেশটার যখন ভঙ্গুর অবস্থা ছিল তার পূর্ণতায় আত্মনিয়োগ যারা করেছেন, তাদের মধ্যে এম. আব্দুর রহিম অন্যতম। তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধেই আত্মনিয়োগ করেননি, দেশের উন্নয়নেও কাজ করেছেন। এবং সংবিধান প্রণয়নের রুপকারদের মধ্যে তাকে প্রথম সারিতে রাখব’। প্রধান বিচারপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু কতিপয় আইনজীবীকে বলেছেন, মানুষের মামলা নিষ্পত্তি করতে যেন সময় দীর্ঘায়িত না হয়। আমরা যারা ফাইনাল কোর্ট যারা সংবিধানের ব্যাখ্যা করি সম্ভবত উনি আমাদের বলতে চাচ্ছেন আমরা কনজারভেটিভ অথবা রেসটেকটিভ আমার ইন্টারপ্রিটেশন হচ্ছে। আমি মনে করি এখানে ভুল বোঝার কোন কারণ নেই। পৃথিবীতে যত সংবিধান আছে বেশ কিছু সংবিধানে কমটি জাস্টিসের বিধান আছে। আমাদের সংবিধান আমরা ব্রিটিশ সংবিধানের একটা অংশগ্রহণ করেছি। তবে ফেডারেল সিস্টেমটা বাদ দিয়েছি। কমপ্লিট জাস্টিস একাধিক হাতে দেয়া হয়। তাহলে কিন্তু সংবিধানে ব্যাখ্যা আইনের ব্যাখ্যা এবং আমাদের যে নজির প্রিসিডেন্ট এগুলোতে অপব্যাখ্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এবং এটা নিয়ে বিচার প্রার্থীরা আইনজীবীরা এবং মামলা দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তিনি বলেন, আমি স্বীকার করি আমরা অনেক সময় সঙ্গত কারণে ইন্টারফেয়ার করছি এবং আমাদের ইন্টারফেয়ার না করার উপায়ও ছিল না। পিটিশনার রিলিফ না পেলে বা রেসপন্ডেন্ট তারা চলে আসে। তখন আমাদের তো একটা ডিসিশন দিতে হয়। আমরা অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমাদের বিজ্ঞ বিচারপতিরা এটা খেয়াল না করে রুল ইস্যু করে। তখন আমরা বাধ্য হয়ে ইন্টারফেয়ার করি। যাতে মামলার জট কমে। এখানে মনে হয় কোন বিরোধিতার কারণ নেই। তিনি বলেন, রহিম সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু আমি মনে করব একজনের মানুষের পরিপূর্ণতা যদি সে আইনে পড়া লেখা করে। আজকের পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ আইনে পড়ে তারপরে কাজে গেছে। রহিম সাহেব প্রথমে একজন আইনজীবী ছিলেন। এরপর রাজনীতিতে। তিনি আইনজীবীদের দুঃখ দুর্দশা দেখতেন। তখন কিন্তু তাদের যে চিন্তা চেতনা এখন কিন্তু এ চিন্তা চেতনা থেকে আমাদের আইনজীবীরা সরে এসেছি। আইনের শাসন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইনজীবীদের অবদান কম নয়। মাইনাস আইনজীবী দিয়ে আইনের শাসন চিন্তাই করতে পারি না। বিচারপতি এসকে সিনহা বলেন, আপনারা আইনজীবীরা যদি আমাদের প্রতি হাত শক্ত না করেন তাহলে আমরা কোন মতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারব না। আমার অনেক চেষ্টা করছি বিশেষভাবে সুপ্রীমকোর্ট। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমান প্রজন্মের আইনজীবীর প্রতি আমার আহ্বান এম রহিমের মতো আইনজীবীদের নীতি থেকেন বিচ্যুত হবেন না। এছাড়া পিতার কর্ম নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, বাবার ৫ বছর বয়সে দাদা মারা যান। তার আত্মীয়রা সবাই বাবাকে কৃষি ও ব্যবসার কথা বলতেন। কিন্তু তিনি সেটা না করে শিক্ষা, সমাজ সেবা ও রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন। বাবার সম্পত্তি ছিল ১২২ বিঘার মতো। আর এখন সেটা হবে ৪০/৪২ বিঘার মতো। অথচ তিনি বারের ভাল আইনজীবীও ছিলেন। তিনি সম্পত্তি বিক্রি করেছেন। রাজনীতি করেছেন। কিন্তু আজকের রাজনীতিতে সম্পত্তি যোগ হয়। আমার বাবার সম্পত্তির যোগ হয়নি।
×